এছাড়াও এ প্রাকৃতিক ছড়ার পার্শ্ববর্তী রাবার বাগান এবং উজানের বিস্তৃর্ণ চা বাগান ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর বস্তি এলাকার মো. জামাল মিয়া গত কয়েক বছর ধরে কাকিয়াছড়া নামে এই ছড়ার প্রায় ২০ ফুট ভেতরে বাসার সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এর ফলে প্রাকৃতিক ছড়ার পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধার সম্মুখিন হয়। এ ব্যাপারে গত ১৭ অক্টোবর ফুলছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. নিয়ামুল হক শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে আসার পর দেয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন জামাল মিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক ছড়ার গতিপথ পরিবর্তনের ফলে সেখানকার রাবার বাগান ও উজানে বিস্তৃর্ণ চা বাগানে মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের পাশাপাশি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বাগানের চা গাছগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ফুলছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক নিয়ামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চা বাগানের জায়গায় জামাল মিয়া গার্ডওয়াল দিয়েছে। একেবারে ছড়ার উপরে বানানোর কারণে ছড়াটি সোজা না গিয়ে ডান দিকে বেঁকে গেছে। প্রাকৃতিক ছড়াটি সোজা যাওয়ার কথা। কিন্তু সে ছড়াটি দখল করে গার্ডওয়াল দিয়ে মাটি ফেলে আমাদের জায়গাটি অবৈধভাবে দখল নিয়েছে। এটা হলো প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয় সমস্যা হলো- ছড়ার পাড়ের ডান দিকে তিনি প্রচুর মাটি কেটে কেটে আমাদের ক্ষতি সাধন করছে। রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে ছড়াটাকে প্রচুর বড় করে ফেলেছে।
নিয়ামুল জানান, প্রাকৃতিক এই ছড়ায় দেয়াল নির্মাণের ফলে সেখানকার রাবার বাগান ও চা বাগান হুমকির মুখে পড়েছে। এতে চা বাগানের মাটির ভাঙন ও জলাবদ্ধতায় চায়ের চারা গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাকৃতিক ছড়ার ১০ ফুটের মধ্যে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণে বাধ্যবাধকতা থাকলেও উক্ত জামাল মিয়া কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছড়া দখল করার কথা স্বীকার করে জামাল মিয়া দাবি করেন, ‘তৎকালীন বালিশিরা ডিভিশনের ডিজিএম সাজ্জাদ সারোয়ার ও ফুলছড়া চা বাগানের ম্যানেজার মুসাব্বির সাহেবের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত সাত বছর আগে এই দেয়াল নির্মাণ করি। তখন তারা কেউ বাঁধা দেয়নি। আমার বাসার সীমানার ভাঙন ঠেকাতে ছড়ার অংশে ডিসি খাস খতিয়ানের জায়গায় দেয়াল দেই। সরকারি খাস জায়গায় দেয়াল দিলে কোম্পানির কী?’
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফিনলের ফুলছড়া চা বাগান থেকে অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে বলা হয়েছিল দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ নোটিশ করার। কিন্তু এর কিছু দিন পর সার্ভেয়ার বদলি এবং পাশাপাশি সময়ে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় এ নিয়ে আর আগানো সম্ভব হয়নি।
তবে প্রাকৃতিক ছড়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে স্থাপনা নির্মাণ অর্থাৎ সীমানা প্রাচীর তৈরির বিরুদ্ধে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসি (ল্যান্ড) মাহমুদুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
বিবিবি/এইচএডি