ঢাকা: সুন্দরবন ঘেঁষা বাগেরহাট জেলার রামপাল এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি ও সেভ দি সুন্দরবন নামে দু’টি সংগঠন।
মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাটের চুলকাঠি প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র, কৃষি ব্যবস্থাসহ স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের নামে জোরপূর্বক বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। প্রশাসন, ওই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্ত-কর্মচারি ছাড়াও এ তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সরকার দলীয় এমপির ক্যাডার এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি সভাপতি শুশান্ত দাস সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘রামপাল এলাকায় কয়লাচালিত তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জনস্বার্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইট্স মুভমেন্ট-এর পক্ষে মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের মাননীয় বেঞ্চ সুন্দরবনের পক্ষে ও ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করেন। ’
কিন্তু এর কিছুদিন পর আদেশটি বাতিলে পিডিবি আবেদন পেশ করে। এ্ররই ধারাবাহিকতায় মামলাটি এখন চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে রামপালে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ।
শুশান্ত দাস আরো অভিযোগ করেন, পুলিশী নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, এবং সর্বশেষ স্থানীয় এমপি’র পেটুয়া বাহিনী দ্বারা আমাদের ঘর-বাড়ি দখলের ফলে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দু’দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের একটি এমইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পিডিপি এবং ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার লিমিটেড (এনটিপিসি) যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপালের গৌরম্ভা এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট কষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি করে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা।
ভারত সরকার যে অর্থ এখানে ব্যয় করবে তাতে ১৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ প্রকল্পে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতির আশংঙ্কা বেশি। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ১৭০ ডলার দরে প্রতি টন কয়লা ভারত থেকে ক্রয় করতে হবে যা বিশ্ব বাজারের স্বাভাবিক মুল্যের চেয়ে অনেক বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, সেভ দি সুন্দরবনের উপদেষ্টা মহিউদ্দিন ইজারাদার, কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি মিশকাত আলী শেখ, সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হক বাবু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, ২৪ জানুয়ারি, ২০১২