ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুন্দরবনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা শিকারিরা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২১
সুন্দরবনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা শিকারিরা!

খুলনা: সুন্দরবনে করোনা পরিস্থিতিতে চোরা শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কঠোর ‘লকডাউন’ পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন তৎপর, এ সুযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সুন্দরবনে প্রবেশ করছে।

 

বনরক্ষীদের টহল কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ায় সব ধরনের প্রবেশ নিষেধ থাকার পরও এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বনের অভয়ারণ্য এলাকায় হরিণ ও মাছ শিকার করছে চোরা শিকারিরা।  

অভিযোগ রয়েছে, হরিণ শিকারের জন্য চোরা শিকারিরা সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের দরিদ্র, লোভী জেলে ও অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করে। আর সামান্য আর্থিক লাভের আশায় তারাও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুম থাকায় ১ জুলাই থেকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের সব নদী ও খালে দুই মাসের জন্য মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সব ধরনের পাস ও পারমিট বন্ধ রেখেছে বনবিভাগ।

অনুসন্ধানীতে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে বনের ওপর নির্ভরশীল হাজারও মানুষ। তারা বনরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে বনের গহীনে প্রবেশ করছে। নিধন করছে হরিণ, বিষ প্রয়োগে মারছে মাছ। যদিও সম্প্রতি বনবিভাগ মাছ শিকারের বিষ, ফাঁদ ও জালসহ হরিণ শিকারিদের আটক করেছে।  

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ভোরে সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরার প্রস্তুতিকালে নৌকা ও কীটনাশক জব্দ করে বনবিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের পশুর নদীতে অভিযান চালিয়ে নৌকা ও কীটনাশক জব্দ করে বনরক্ষীরা।

এসময় নৌকায় থাকা তিন ব্যক্তি পশুর নদে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জব্দ নৌকাটিকে ভেঙে ফেলে বনরক্ষীরা।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এনামুল হক বলেন, নিয়মিত অভিযানের সময় সুন্দরবনের পশুর নদে একটি নৌকায় তিন ব্যক্তিকে দেখতে পায় বনরক্ষীরা। বনরক্ষীরা তাদের ধাওয়া দিলে নৌকা থেকে লাফিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এসময় নৌকা ও নৌকায় থাকা ১৬ বোতল ও ছয় প্যাকেট কীটনাশক জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (৫ জুলাই) ভোরে সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকারের ফাঁদ ও কীটনাশকসহ এক ব্যক্তিকে আটক করে বনবিভাগ।
শুক্রবার (২ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গভীর সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ২০ কেজি হরিণের মাংসসহ চোরা শিকারি জব্বার গাজীকে আটক করে বনবিভাগ। সুন্দরবনের ধলের খালের মুখ থেকে তাকে আটক করা হয়। জব্বার গাজী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মরাগাং গ্রামের সুজাউদ্দীন গাজীর ছেলে।

গত ২৫ জুন সুন্দরবন সংলগ্ন চুনকুড়ি নদীতে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৯৭ হাজার মিটার অবৈধ নেট জাল ও চার হাজার ৮৭০ কেজি জাল ধরা রশি জব্দ করেছে বনবিভাগ, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড।

পরে জব্দকৃত অবৈধ নেট জাল ও রশি মুন্সিগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ির সামনে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তরা অবাধে হরিণসহ বন্যপশু শিকার করছে। উজাড় করছে মূল্যবান গাছ এবং বিষ (কীটনাশক) দিয়ে মারছে হাজার হাজার টন মাছ। ফলে পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বনের অতদ্র প্রহরী বনরক্ষীরাও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অসাধু চোরা শিকারিরা। বনসংলগ্ন গ্রামে শিকারিদের গডফাদার রয়েছে। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে। শিকারিরা অনেক সময় জেলের বেশ ধারণ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে।  

তবে বনবিভাগের দাবি, অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ২০ কেজি হরিণের মাংসসহ জব্বার গাজীকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এমএ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, দুইজন আত্মসমর্পণ করা ডাকাত আছে এ চক্রে। যার মধ্যে একজন হলো কুখ্যাত চোরা শিকারি জব্বার গাজী। আমাদের সুন্দরবনের টহল দিনরাত অব্যাহত আছে।  

শিকারিরা সংঘবদ্ধ কি না জানতে চাইলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে যে যেখান থেকে সুবিধা মনে করছে, সেখান থেকে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছে সুন্দরবনে। যাদের ধরতে পারছি, তাদের নামে মামলা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২১
এমআরএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।