ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বৃক্ষ পূজারিদের খোঁজে বিশ্বভারতীর গবেষক

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২
বৃক্ষ পূজারিদের খোঁজে বিশ্বভারতীর গবেষক

ঢাকা: গাছপালা পরিবেশের অবধারিত অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন ধারণের নানা উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি গাছ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের যোগান দেয়।

নানা ভাবে মানব সভ্যতাকে উপকৃত করে আসা বৃক্ষের প্রতি মানুষের ভালবাসা আদিকাল থেকেই। বৃক্ষপ্রেম বা পরিবেশ রক্ষার তাগিদ রয়েছে সকল ধর্মেই। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কিছু বৃক্ষের পূজা করার রীতি চালু আছে দেশে দেশে।

এ ধরণের রীতি খুব অজানা কোনো বিষয় না হলেও সম্প্রতি পরিচিত এ প্রথা নিয়েই গবেষণা শুরু করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের বোলপুরে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাপস পাল।

পরিবেশ বিপর্যয় ও বন ধ্বংসসহ নানা কারণে যখন ক্রমেই কমছে বৃক্ষের পরিসর, ঠিক সে সময় তাপসের এ ধরণের গবেষণা সমাজে মানুষের মাঝে বৃক্ষ অনুরাগ বা সংরক্ষণ প্রবণতা বাড়াবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
   
রাজ্যের প্রায় সবক’টি জেলা ঘুরে স্থানীয় অধিবাসীরা কিভাবে গাছকে দেবতারূপে পুজো করে সংরক্ষণের কাজ করছেন, তার তালিকা তৈরি করছেন বিশ্বভারতীর এই গবেষক। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে মোটরসাইকেলে ঘুরে প্রতিটি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে যাচ্ছেন তিনি।

মোটরসাইকেলে গত ৩৫ দিনে প্রায় ৫৪০০ কিলোমিটার পথ ঘুরেছেন তাপস। পরিভ্রমণে সুন্দরবন থেকে গড়বেতা, জঙ্গলমহল থেকে ডুয়ার্স ঘুরে ১৭৯১টি গাছ পূজার তথ্য সংগ্রহ করছেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের বাসিন্দা তাপস। তাপস বাবু বলেন, ‘গাছ সংরক্ষণের ঐতিহাসিক দিক নিয়ে গবেষণা করছি। জানুয়ারি মাস থেকে মোটরবাইক, ল্যাপটপ, ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছি। গাছ পূজার জন্য এলাকাগুলোতে ওই গাছগুলো সংরক্ষিতও হচ্ছে। ’

গ্রামের ধর্মভীরু মানুষেরা বিভিন্ন গাছের পূজা করে থাকেন। গবেষক তাপস বলেন, পুরুলিয়ার আদ্রায় শেওড়া ও তেঁতুল গাছকে গ্রামদেবী রূপে পূজা করার রেওয়াজ রয়েছে। পাকুড় গাছকে লালগড়ের আদিবাসীরা গরামথান এবং গড়বেতায় লোধা সম্প্রদায়ের মানুষেরা বট ও নিমকে সুরা চালসা রূপে পূজা করেন। এছাড়া কোথাও শ্যাওড়া ও বট গাছে পিরের মাজার তৈরি করে এবং কালী ও শিবের পূজা কোনো বড়মাপের গাছের নিচে মূর্তি বা মন্দির স্থাপন করে করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে গাছের কোনো ক্ষতি না করে বা না কেটে বছরের পর বছর এ পূজা চলে আসছে। গ্রামের মানুষেরা তাদের অজান্তেই পরিবেশ রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘গবেষণার কাজ শেষ হলে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করবো। রাজ্যের ১৮টি জেলা ইতিমধ্যে ঘুরে ফেলছি। ডুয়ার্সের বক্সাব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়া বিভিন্ন বনবস্তি এবং রাস্তায় পূজা হওয়া বিভিন্ন গাছের নাম নথিভুক্ত করেছি। দার্জিলিঙেও ঘুরেছি। জলদাপাড়া জঙ্গলে সমীক্ষা করছি। এ কাজ শেষ হতে বেশ কয়েকদিন লাগবে। ’

হিমালয় নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন’র (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘তাপসবাবুর গবেষণার বিষয়টি প্রশংসনীয়। ধর্মীয় রীতি মেনে গাছ সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আগে সেভাবে কাজ হয়নি। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই পরিবেশের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের বিষয়টি রয়েছে। আদিবাসীরা ময়না গাছকে করম উৎসবে পূজা করেন, কোথাও কোথাও কলা গাছকে গণেশের স্ত্রী হিসাবে পূজা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হলে তা পরবর্তীতে পরিবেশ রক্ষা ও গাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।  

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।