ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘হাতির পাল নাইম্মা দুই কাডা জমির ধান খাইয়া ফালাইছে’

জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, ডিস্টিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
‘হাতির পাল নাইম্মা দুই কাডা জমির ধান খাইয়া ফালাইছে’

শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও এলাকার প্রান্তিক কৃষক আলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঋণ কইরা ১০ কাডা (কাঠা) জমিতে বোরো ধান লাগাইছি। হঠাৎ কইরা হাতির পাল খেতে নাইম্মা দুই কাডা জমির ধান খাইয়া আর পাও (পা) দিয়া ফসল মাডির (মাটির) লগে মিশাইয়া ফালাইছে।

‘গ্রামবাসী হই-হুল্লোড় কইরা খেত থাইকা হাতি সরাইছে। অহন রাইত জাইগা সবাই হাতি পাহাড়া দিতাছি,’ যোগ করেন তিনি।

প্রতি বছরই বোরো আমন ও কাঁঠালের মৌসুমে বন্যহাতি হানা দেয়। এবারও বন্যহাতির পাল নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও গ্রামে হানা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) থেকে এ এলাকায় বন্যহাতির পাল অবস্থান করছে। এরই মধ্যে এলাকার আটজন প্রান্তিক কৃষকের চার একর বোরো ফসল হাতির পাল আংশিক খেয়ে ফেলেছে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমানে বোরো ফসল রক্ষায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। সীমান্ত এলাকায় এখন হাতির একটি দল নাকুগাঁও ও ভারত সীমান্তের বানেরটিলায় অবস্থান করছে। দলটিতে ৪০-৪৫টি ছোট-বড় হাতি রয়েছে।

ময়মনসিংহ বনবিভাগ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নাকুগাঁও গ্রামে পাহাড়ের ঢালে প্রায় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ১৫০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ ৪০-৪৫টি বন্যহাতির একটি পাল নাকুগাঁওয়ের বানেরটিলা চলে আসে। পরে ২০-২৫টি হাতি নাকুগাঁও গ্রামের ফসলি জমিতে নেমে পড়ে। এসময় নাকুগাঁও গ্রাামের ইদ্রিস আলীর ৪০ শতাংশ, আবদুল খালেকের ৩০ শতাংশ, ফুলেমা চিসিমের ৫০ শতাংশ, সাগর মারাকের ৪০ শতাংশ, আলিম উদ্দিনের ৩০ শতাংশ, প্রণব চিসিমের ৫০ শতাংশ, দুলু মিয়ার ৩০ শতাংশ ও তোতা মিয়ার ৪০ শতাংশসহ বিভিন্ন কৃষকের বোরো ফসল খেয়ে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে।

হাতির দলটি নাকুগাঁওয়ের বানেরটিলায় সীমান্তবর্তী ১১১৫ নং পিলারের কাছে অবস্থান করায় স্থানীয় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। গ্রামবাসী হাতি তাড়াতে বনবিভাগ ও সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি নাকুগাঁও স্থলবন্দরে শ্রমিকের কাজ করি। এ কাজ করে বাবা-মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। ১৬ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বোরো ধান করেছি। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন্যহাতির পালটি ক্ষেতে নেমে আমাদের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। বাকি ফসল রক্ষা না করতে পারলে আমাদের মহাবিপদে পড়তে হবে। ’

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. নূর ইসলাম বলেন, ‘১০০ একর জমির ফসল নিয়ে স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। হাতি প্রতিরোধে লাইট ও মশাল জ্বালাতে তেল প্রয়োজন। ফসল রক্ষায় এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন। ’

নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাতির আক্রমণে কৃষকদের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালাতে তেল কিনতে কিছু অর্থ দেওয়া হয়েছে। প্রতিরাতে হাতি তাড়াতে গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ’

ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার আবদুল করিম বলেন, ‘তিনদিন ধরে ৪০-৪৫টি বন্যহাতির একটি দল নাকুগাঁও বানেরটিলায় অবস্থান করছে। সন্ধ্যার পর পর হাতির দলটি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বোরো ক্ষেতে নেমে পড়ে ফসলি জমি পা দিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলেছি। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।