মৌলভীবাজার: ‘পরিযায়ী’ শব্দটা সঙ্গে আসা-যাওয়া শব্দটার খুব মিল রয়েছে। পরিযায়ীর স্বাভাবিক অর্থ যারা নিজের প্রয়োজনে একস্থান থেকে আরেক স্থানে যায়।
যেসব পাখিরা এই কাজটি তাদের জন্মলগ্ন থেকে বিরতিহীনভাবে করে চলেছে তাদেরকে পরিযায়ী পাখি বলে। এরা সুনির্দিষ্ট সময়ে একাধিক কারণে পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে আমাদের দেশে আসে অথবা আমাদের দেশ থেকে কিছুদিনের জন্য পৃথিবীর অন্যপ্রান্তগুলোতে পাড়ি জমায়। এই আসা-যাওয়া বিরতিহীন প্রক্রিয়াটিকে বড় সযত্নে আঁকড়ে ধরে আছে ‘পরিযায়ী’ শব্দটি।
তবে পরিযায়ী পাখিদের ভেতর কোনো কোনো প্রজাতির পাখি নিয়মিতভাবেই আমাদের দেশে আসে। কিন্তু কোনো কোনো প্রজাতির পাখি আবার অনিয়মিতভাবেই এসে আমাদের দেশের ডালপালা স্পর্শ করে। অনাদিকাল ধরে বিভিন্ন কারণে এমন আশ্চর্য পরিযায়নের মাধ্যমেই প্রকৃতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে বৃক্ষকুল, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় পরিবেশ ব্যবস্থা।
সম্প্রতি বৃহত্তর সিলেট বিভাগের প্রাকৃতিক বন হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে দেখা পাওয়া গেছে দেশের দুর্লভ এক পরিযায়ী পাখি। এ পাখিটির নাম ‘বেগুনি পিঠ-শালিক’।
এ প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অতি সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি ট্যুরে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ভোরে বেগুনি পিঠ-শালিক পাখিটি ক্যামেরাবন্ধী করি। খুবই কম দেখা পাওয়া যায় পাখিটিকে। এর ইংরেজি নাম Daurian Starling এবং বৈজ্ঞানিক নাম Agropsar sturninus.
তিনি আরো বলেন, পাখিটি আকারে ১৭-১৯ সেন্টিমিটার। এরা শালিক গোত্রের মাঝারি আকারের এক পাখি। বাংলাদেশ মোটামুটি দু’বছর পর আবার এ পাখিটিকে দেখা গেছে। একাকী অথবা দশ-পনেরোটি বা তারও বেশি সংখ্যায় যুক্ত হয়ে দলবদ্ধভাবেও চলাফেরা করে থাকে।
রঙের বৈচিত্র্য এবং খাদ্যগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাখিটির নিম্নভাগ এবং মাথা ফ্যাকাসে ধূসর-বেগুনি রঙের ডানায় উজ্জ্বল সবুজ আভা এবং ‘ভি’ (V) আকৃতির এক সাদা রেখা আছে। অন্যান্য শালিকদের মতো এটা মূলত পোকাভুক অর্থাৎ ছোট-মাঝারি পোকামাকড় খায়। এছাড়াও ফলমূল এবং শস্যদানাও খেয়ে থাকে।
মূলত মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণপূর্ব রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং মধ্য চীনের নাতিশীতোষ্ণ বনের পাখি এরা। ভারত এবং বাংলাদেশে ভবঘুরে পরিযায়ী এবং আপাতত দুর্লভ বলে জানান বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়, অনিয়মিত এবং দুর্লভ এই বেগুনি পিঠ-শালিক পাখিটির কয়েকবার আমাদের দেশে দেখা গেছে। ২০০৯ সালের সুন্দরবনের হারবেরিয়ায় প্রথমবার এ পাখিটির দেখা মেলে। এরপর ২০১০ সালে মধুপুরের শালবনে একটি পাখিকে এবং একই বছর ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই প্রজাতির পাখিদের একটি ঝাঁকের দেখা পান পাখি গবেষকরা। এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিলে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই পাখিটিকে প্রাপ্তির রেকর্ড রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
বিবিবি/কেএআর