মৌলভীবাজার: বিচিত্র সব পোষা পাখি। তাদের রঙের অপূর্ব সৌন্দর্য হৃদয়ের গোপন ভালোবাসাকে যেন কাছে ডেকে আনে।
যারা এক সময় শখের বসে এসব পাখি পোষা শুরু করেছিলেন তারা আজ মোটেই সৌখিন পাখিপালক নন। রীতিমতো একেকজন পাখি ব্যবসায়ী। শখের এসব পাখির ছানা ফুটিয়ে বিক্রি করে তাদের অনেকেরই মাসিক আয় আজ ৩০-৪০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি শুক্রবার (২৫ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শেরপুরের আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে ‘সৌখিন পোষা কবুতর ও পাখি প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পিজন অ্যান্ড বার্ড লার্ভাস ক্লাব’ এর উদ্যোগে এ পাখি প্রদর্শনীতে শতাধিক প্রজাতির কবুতর ও প্রায় ৩০ প্রজাতির পোষা পাখি শোভাবর্ধন করে। প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস ছামাদ, খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী, আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কোরেশি মো. তানভির হাসান, পিজন অ্যান্ড বার্ড লার্ভাস ক্লাবের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান (মেম্বার) প্রমুখ।
প্রদর্শনীতের আসা ব্যবসায়ীরা বয়েসে বেশির ভাগই তরুণ। এ প্রদর্শনীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা দামের কবুতরও প্রদর্শনীতে আসা দর্শকদের অবাক করেছে।
জানা গেছে, কোভিডকালীন গৃহবন্দি থাকাটাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন সৌখিন পাখির একেকটি খামার। লিকোভার প্রজাতির কবুতর নিয়ে প্রদর্শনীতের এসেছিলেন সিলেটের ইভান চৌধুরী।
তিনি জানান, এ প্রজাতির এক জোড়া কবুতরের দাম প্রায় দুই লাখ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে তাদের নিবাস।
পাখি পালনকারী রাজু দেবনাথ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর ও পোষা পাখি পালন শুরু করেছিলাম ৮-৯ বছর আগে। এখন বাণিজ্যিকভাবে আরডিএস বার্ডস লাভার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এর থেকে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারছি।
লাল, হলুদ, নীল, ধূসর বর্ণের বিচিত্র সব কবুতর, কাটথ্রট ফিঞ্চ, পার্ল বাঙলি, আউল, লেইকোলরি প্রভৃতি পাখিগুলো দেখে প্রদর্শনীতে আসা শিশু-কিশোররাও ভীষণ আনন্দিত।
আজাদবখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, জানা ছিল না পৃথিবীতে এত জাতের কবুতর ও সুন্দর সুন্দর রঙের এত পাখি রয়েছে। এখানে এসে নতুন অভিজ্ঞতা হলো।
পিজন অ্যান্ড বার্ড লাভার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং পক্ষীশালার স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, প্রদর্শনীতে সৌখিন পোষা কবুতর ও পাখি নিয়ে ঢাকা, সিলেট বিভাগসহ বিভিন্ন জেলার ৩০ জন পাখিপ্রেমী তাদের সংগ্রহে থাকা পাখিগুলো নিয়ে এ প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছেন। প্রদশর্নীতে দেশি-বিদেশি প্রায় ১১০ প্রজাতির কবুতর ও ৩০ প্রজাতির পোষা পাখি স্থান পায়।
যুব সমাজকে মাদকাসক্ত না হতে এবং নিজ উদ্যোগে কবুতর পালনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব লাঘব করার জন্যই তাদের এ আয়োজন বলে জানান তিনি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমদানি করার জন্য অনুমোদন দেওয়া পাখি লালন-পালনে করে বিক্রি ও প্রদর্শনীতে কোনো প্রকার বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু আমাদের দেশি প্রজাতির পাখিদের লালন-পালনে আইনি বাধা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
বিবিবি/আরবি