ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চাপালিশ ফলে এখন মুখর বন্যপ্রাণীরা 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
চাপালিশ ফলে এখন মুখর বন্যপ্রাণীরা  গভীর অরণ্যকোণের উঁচুতে ঝুলছে চাপালিশ ফল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: মধুমাসেই রয়েছে প্রিয় খাবারগুলোর সহজলভ্য আয়োজন। বলা বাহুল্য – মধুমাস এখন শুধু আমাদের চারপাশেই নয়, চলছে অরণ্যপ্রকৃতিতেও।

আমাদের লোকচক্ষুর আড়ালে বনগহ্বরের সুউচ্চ শাখায় এসব ফল নানা বন্যপ্রাণীদের পুষ্টি ও খাদ্যচাহিদার অংশ হয়ে গাছে গাছে আজ তা প্রকাশিত। এর থেকে বৃক্ষনির্ভর প্রাণীরা বেঁচে থাকার এ বিশেষ উপাদান পেয়ে যায় সহজেই।

আমাদের সিলেট বিভাগের সমৃদ্ধিপূর্ণ বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনে এখন শোভা পাচ্ছে চাপালিশ ফল। পাহাড়ি এসব ফলসম্ভরে মুখর এখন স্থানীয় বন্যপ্রাণীরা। তাদের প্রতিমুহূর্তের ক্ষুধাময়দৃষ্টি, ফলগুলোকে পরখ করে দেখে যাওয়ার ইচ্ছে ওইসব ফলকে ঘিরেই।

সম্প্রতি বৃহত্তর সিলেটের একটি চিরসবুজ জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণে এসে বৃক্ষের ফলদ সৌন্দর্য ধরা পড়েছে। বনের নিচ দিয়ে মাটিঘেঁষা পথে এগোতে থাকলে সহজে তা নজরে আসে। অপরূপ সুন্দর হয়ে চাপালিশ ফলগুলোর গাছে ঝুলে থাকার দৃশ্য হৃদয় কাড়ে। পাতার ভাঁজে ভাঁজে, ডালের কোণে কোণে হঠাৎ করে দৃশ্যমান এ ফলগুলো প্রায় সমআকৃতির। একেকটি যেমন, অপরটিও তেমন। ফলগুলো পাতার রঙে, গাছের বর্ণে মিশে যেতে চায় বারবার। এ তো গেল শুধু ঝুলে থাকার কথা! তার মাঝে হঠাৎ করে যদি চোখের দৃষ্টিসীমায় ধরা পড়ে যে, একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী সুউচ্চ ডালে বসে এই ফলগুলো খাচ্ছে – তাহলে তো আর কথাই নেই। এই অরণ্যভ্রমণ যেনো সোনায় সোহাগা। সার্থকতার দারুণ প্রাপ্তি।

যতই অরণ্যপ্রকৃতির অন্তঃপুরে প্রবেশে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, একটি বিশেষ শব্দ ততটাই মাঝেমধ্যে কানে এসে প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। কখনো মৃদু, আবার কখনো বনের নির্জনাতে ভেঙে কিছুটা জোরে। সেই বিশেষ শব্দটার চরিত্রটা হলো- ওপর থেকে কিছু মাটিতে পড়ার মতো!

হ্যাঁ, তাই। সঙ্গীয় পথপ্রদর্শক হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘ওয়াও!’ শব্দটি পাশ্চাত্যঘেঁষা হলেও ইদানিং বাংলাদেশি তরুণসমাজ একে উচ্ছ্বসপ্রকাশের অন্যতম সহায়ক শব্দ হিসেবে লোকসম্মুখে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে স্বার্থক করে তুলেছেন। এই শব্দটি কানে আসা মাত্রই তার দিকে আমার দৃষ্টি! সেই দৃষ্টিটি তিনি তার ডান হাতের তর্জনি আর চোখ ইশারায় দ্রুত ফিরিয়ে দিলেন সুউচ্চ চাপালিশ ডালে। এ কী দেখছি! অসাধারণ! একটি রিসাস মাকাক (কোটা বানর) চাপালিশ রেসিপিতে লাঞ্চ সেদিনের মধ্যহ্নভোজ সম্পন্ন করছে। শুধু কী তাই? প্রাণীটির হাত থেকে অসাবধনতাবশত সেই চাপালিশ ফলের টুকরো টুকরো অংশগুলো মাঝে মাঝে পড়ছে মাটিতে। কী অপূর্ব! কী সৌন্দর্যে বাঁধা!

চাপালিশের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus chama। এই ফলটিকে স্থানীয়ভাবে চাম কাঁঠাল বলে। কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোষ এর। তবে এ ফলগুলো খেতে টক। চাপালিশ গাছগুলো সাধারণত চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি চাপালিশ বৃক্ষ দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সিলেট বনাঞ্চলের সব বন্যপ্রাণিকুলের অভিভাবক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে এ অপূর্ব বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।

তিনি বলেন, আসলেই এই দৃশ্য খুবই সুন্দর। এই চাপালিশ ফলটা নানা প্রজাতির বানর, নানা প্রজাতির হনুমান, উল্লুক, গন্ধগোকুল এ প্রজাতির প্রাণীরা এগুলো বেশি করে খায়।

বন্যপ্রাণীর বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রতি বছর আমরা চাপালিশসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের খাবারযোগ্য প্রায় ১৫/১৬ প্রজাতির ফলের চারা যেমন- ডেউয়া, ডুমুর, আমলকি, বহেরা, হরিতকি প্রভৃতি লাগিয়েছি। গত বছর লাউয়াছড়া এবং সাতছড়িতে ৭৫ হাজার ফলদ চারা লাগিয়েছিলাম। এবছর ওই দুই স্থানে প্রায় দেড় লাখ চাপালিশসহ নানা ফলদ চারা লাগাচ্ছি বলে জানান ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।