ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ফিরে এসেছে রানি 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২২
ফিরে এসেছে রানি  রানি মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: একসময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল রানি। বৃহত্তর সিলেট অর্থাৎ মৌলভীবাজারের নানান প্রাকৃতিক জলাশয়, হাওর-বাওর, বিলগুলোতে তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এই প্রজাতিটিকে।

পরবর্তীতে এই প্রজাতিটির সংকটময় বিলুপ্তির কথা বিবেচনা করে এই সুস্বাদু মাছটিকে বিশেষ গুরুত্বের তালিকায় আনে মৎস্য বিভাগ।

বাড়ানো হয় নজরদারি, গণসচেতনতা, প্রচার এবং মৎস্যচাষিদের মাঝে প্রজননের সহজলভ্যতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। এতেই দু-চার বছরের মাঝে ইতিবাচক ফলাফল আসতে শুরু হয়।  

রানি মাছ অতি দৃষ্টিনন্দন। দেখলে শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে। মাছটির শরীরে রয়েছে কালো-হলদে ডোরাকাটা সৌন্দর্য। রানি মাছ খেতে দারুণ সুস্বাদু এবং এর স্বাদ অতুলনীয়।

স্থানীয় মৎস্যব্যবসায়ী উস্তার আলী বলেন, এবার মৌলভীবাজার জেলার হাওরগুলোতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিশেষ করে বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর ও কাউয়াদিঘীর হাওর এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় রানি মাছ ধরা পড়ছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীতে জেলেদের ভেলজালে ধরা পড়েছে এই মাছ। আমরা নানা জায়গা থেকে এই রানি মাছ সংগ্রহ করে এনে বাজারে বিক্রি করে থাকি।  

তিনি বলেন, এক সময় শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হাইল হাওরের জলাশয় ও বিলগুলো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় এগুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে এ মাছটি আসতে শুরু করেছে।  বাজারে এ রানি মাছের চাহিদা প্রচুর। বাজারে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতারা ভিড় করেন মাছ দেখার ও নেওয়ার জন্য। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রানি মাছ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। জুন-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। একটি পরিপক্ব স্ত্রী মাছে প্রতি গ্রামে ৮০০ থেকে ৯০০ ডিম পাওয়া যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক ও প্রজননক্ষম রানি মাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের হয়। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী রানি মাছ অপেক্ষাকৃত আকারে বড় হয়। এ মাছ প্রধানত প্লাংকটন ও পোকামাকড় খায়।
 
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ মাছটির ব্যাপারে প্রশ্ন রাখতেই তিনি উচ্ছ্বাসিত হয়ে নানান তথ্য বাংলানিউজকে জানান। তাতে জানা যায়, পুরোপুরি এক সংকটময় পরিস্থিতি থেকে ফিরে এসেছে রানি।  

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, রানি মাছ একসময় কিন্তু বিলুপ্তির কাতারে চলে গিয়েছিল। তবে আমাদের মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে এখানে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠাসহ প্রজনন বৃদ্ধিতে একে ঘিরে নানান  কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং সর্বপরি আমাদের মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের ফলে আমরা এই সুফল পাচ্ছি। রানি মাছসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাভূমির মাছও বাজারে ফিরে আসছে। বর্ষা মৌসুমে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে এ মাছগুলো বের হয়ে চারপাশের বিস্তৃর্ণ জলাভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Botia dario। অঞ্চল ভেদে এই মাছকে বৌ মাছ, দাড়ি মাছ, পুতুল মাছ, বেতরঙ্গি মাছ, লোহাচাটা মাছ প্রভৃতি নামে উল্লেখ করা হয়। তবে এর প্রকৃত নাম রানি। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন হাওর, নদী ও চলনবিলে এই মাছটির পাওয়া যায়।

প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় রানি মাছের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ সেন্টিমিটার। এ মাছটিকে দেখতে আকারে গুতুম মাছের মতো হলেও শারীরিক রঙের তারতম্য রয়েছে। অত্যন্ত তৈলাক্ত এবং খুবই সুস্বাদু। কাটা নরম। আঁশ নেই। একসময় এমাছগুলো নদীতে পাওয়া যেতো। বর্তমানে মাছটি প্রাকৃতিক বিল, খাল বা বড় জলাশয় থেকে ধরা পড়ছে বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশ মাঠপর্যায়ের জলাভূমিগুলোতে গবেষণা করে এই রানি মাছটিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভূক্ত করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।