ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুন্দরবনে বাঘ বাড়ার আশা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
সুন্দরবনে বাঘ বাড়ার আশা

বাগেরহাট: শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশে এবার নানা আয়োজনে বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে।

বাঘের অন্যতম আবাসস্থল সুন্দরবনের কোলঘেঁষা জেলা বাগেরহাটেও দিবসটি উপলক্ষে বন বিভাগ নানা আয়োজন রেখেছে। বন বিভাগ, সরকার, পরিবেশ ও উন্নয়ন কর্মীদের নানা উদ্যোগেও বাঘের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। তবে বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘপ্রেমীদের আশারআলো দেখাচ্ছে সুন্দরবন। পূর্ব বন বিভাগ বলছে সুন্দরবনে এবার বাঘ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ ছিল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে তা কমে মাত্র ১১৪টিতে দাঁড়ায়।  

এদিকে ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনের অন্তত ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৮টি বাঘের, বিভিন্ন সময় দুষ্কৃতিকারীদের হাতে ১৩টি, লোকালয়ে আসায় জনগণের পিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৫টি, আর ২০০৯ সালে ভয়ঙ্কর সিডরে মৃত্যু হয়েছে একটি বাঘের। এছাড়া বিভিন্ন সময় চোরাশিকারি হাতে মারা যাওয়া ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।  

তাদের হিসেব অনুযায়ী সর্বশেষ জরিপের পরে অন্তত ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কি পরিমাণ বাঘের জন্ম হয়েছে সে তথ্য নেই বন বিভাগের কাছে। সেই হিসেবে বর্তমানে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ রয়েছে। তারপরও বন বিভাগ, বাঘ সংরক্ষণ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন সেখানে বাঘ বেড়েছে। কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া ও বাঘের দেখা পাওয়াকে উল্লেখ করেছেন অনেকে।

চলতি বছরের ১২ মার্চ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে একসঙ্গে ৪টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন পর্যটকরা। তখন দর্শনার্থীদের দেখা এই বাঘের দৃশ্য ভাইরালও হয়েছিল। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বনরক্ষীরা কটকা এলাকায় একসঙ্গে ৩টি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় শরণখোলা ও মোংলার লোকালয়ে বাঘ আসার খবর রয়েছে বন বিভাগের কাছে।

শরণখোলা উপজেলার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) লিডার আলম হাওলাদার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার সুন্দরবনের বাঘ শরণখোলার লোকালয়ে এসেছে। আগে কখনো এতবার বাঘ আসার কবর পাওয়া যায়নি। সুন্দরবনে আমরাও কয়েকবার বাঘ দেখেছি। বাঘের বাচ্চাও দেখেছি কটকা এলাকায়।

একই উপজেলার বনজীবী আলমগীর হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে যাই, কিন্তু তেমন কোন সময় বাঘের দেখা পাইনি। গেল বছর শরণখোলা রেঞ্জের চাপড়াখালি, সুপতি ও আলী বান্দা এই তিন এলাকায় আমি বাঘ দেখেছি। বাচ্চাসহ বাঘও দেখেছি তখন। আগে কখনও এত অল্প সময়ে কয়েকবার বাঘের দেখা পাইনি। এছাড়া বাঘের গর্জনও শুনেছি কয়েকবার।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাঘ রক্ষায় কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সুন্দরবনে টহল জোরদার করেছি। ফলে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা কমেছে। সর্বশেষ করোনা মহামারিতে একসঙ্গে দীর্ঘদিন সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন সুন্দরবনের প্রাণ  প্রকৃতি নিজেদের মত করে বেড়েছে। ওই সময়ে বাঘেরাও তাদের ইচ্ছেমত বনের মধ্যে বিচরণ করেছেন। তখন কয়েকবার বনরক্ষীরা বাঘ দেখেছেন। আমাদের সচেতনতা মূলক কার্যক্রম, প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রবেশ বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি অনেক ভালভাবে বেড়ে ওঠে। করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকবার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ ও বাঘের বাচ্চা দেখেছেন বনরক্ষী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা। এসব কারণে আমরা মনে করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বাড়বে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ ছিল। এবছরের শেষের দিকে আবারও বাঘ গণনা করা হবে। আমরা আশা করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।