সিলেট: ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে ঘুরে আসে শীতকাল। গ্রাম-বাংলায় প্রচলিত আছে ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখে শীতের জন্ম।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দুর্গার আগমন এবার গজে চড়ে। যা শাস্ত্রীয় মতে, ‘জলদি’। আর জলদি মানে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, টনের্ডো, বজ্রপাতের আশঙ্কা করা হয়।
প্রকৃতির এমন বৈরিতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসে আদ্রতা, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে নিচে নেমে গেছে। বাষ্প ব্লক (স্তব্ধ) হয়ে যাওয়াতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে প্রকৃতিতে। যে কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। এর পেছনে প্রকৃতির প্রতি মানুষের বৈরী আচরণের প্রভাব, গাছপালা নিধন করা, জলধারা নষ্ট করাসহ নানাবিদ কারণগুলো তুলে ধরছেন তারা।
গত শনিবার দিনভর ছিল রোদের প্রখরতা। আকাশ খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও প্রকৃতির বৈরিতা মানুষকে ভুগিয়েছে দিনভর। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি ছিল জনজীবনে। তীব্র গরমে হাঁপিয়ে ওঠেছেন শ্রমজীবীরা। এমনকি ঘরে ফ্যানের বাতাস দিতে পারেনি প্রশান্তি। এরপর শেষ রাতে ভয় ধরানো বজ্রবৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে। আজ সোমবার (৩ অক্টোবর) আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও রয়েছে ভ্যাপসা গরম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শনিবার সিলেটে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি। কিন্তু আগের দিনের তুলনায় শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও গরম অনুভূত হয়েছে বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। আগামী দুইদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ার পর বর্ধিত পাঁচদিনের শেষের দিকে বৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। শনিবার বাতাসের আদ্রতা তথা বাষ্পীয়র পরিমাণ ছিল ৮৫ শতাংশ। ফলে বাতাসে ক্লাউড লেভেল ও জলীয় বাষ্প নিচে নেমে আসে। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প ব্লক হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হয়ে ঝরছে না। যে কারণে আদ্রতা বেড়ে গরমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে ৩৩ শতাংশ বৃষ্টি শুধু সিলেটে হয়েছে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টি হয়নি। আর মৌসুমের সপ্তাহের দিনে আরও বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুম সিজন জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক মাত্রা ২২ শতাংশ বেশি। আর শীত মৌসুমে দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত বেশি রয়েছে। ফলে প্রকৃতিতে শীতকাল কমে আসছে বলা চলে। আর শীত মৌসুম কমে আসা এবং বৃষ্টিপাত বাড়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন। আমরা বৃক্ষ নিধন করছি। ফলে গাছ যে তাপামাত্রা, বৃষ্টি শোষণ করতো, তা এখন হচ্ছে না, ফলে উষ্ণতা বাড়ছে।
ওই আবহাওয়াবিদ বলেন, মৌসুমে যেখানে ১৬ দিন বৃষ্টি নামার কথা, সেখানে হয়েছে ২৪ দিন। মোট কথা বৃষ্টি বেড়ে গেছে, শীতকাল কমে গেছে। আর তা হয়েছে নিয়মিত গাছপালা নিধনের কারণে। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ (মেক্সিমাম) টেম্পরেচার প্রায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত চার মাসের গড়ে তাপমাত্রা প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ। মৌসুমে সর্বনিম্ন (মিনিমান) টেম্পারেচার ৫ শতাংশ প্রায় তথা গড় ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে নরমালের গড় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বছরের হিসাবে এখন ৩ মাস বাকি, এই সময়েও পুরো বছরজুড়ে ৪ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত বছরে বৃষ্টির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার। এটি বিগত ৩৩ বছরের হিসাবের চেয়েও বেশি। আগামী দুই দিনে বৃষ্টি বাড়লে কমতে পারে গরমের অনুভূতি। তবে এরপর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ফের কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রোববার ভোরে বৃষ্টি হওয়াতে আগের দিনের তুলনায় সিলেটে তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসেছে। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আদ্রতা ছিল সকাল ৯টায় ৯১ এবং সন্ধ্যায় ৮৭ শতাংশ। আর রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৬ মিলিমিটার এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৪ মিলিমিটার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
এনইউ/এএটি