ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মহাবিপন্ন ‘বাঘাইড় মাছ’ কেনাবেচা বন্যপ্রাণী আইনে নিষিদ্ধ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
মহাবিপন্ন ‘বাঘাইড় মাছ’ কেনাবেচা বন্যপ্রাণী আইনে নিষিদ্ধ সম্প্রতি সিলেটে বিক্রি হওয়া ১৫০কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন না বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন কী? এই আইনের আওতায় কোনো কোনো বন্যপ্রাণীকে নিরাপত্তা দিয়ে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

যেখানে যে অবস্থাতেই সেই প্রাণীটি থাকুক না কেন তাকে তার ওই পরিবেশ থেকে ধরা, বিক্রি করা, পালন করা কিংবা হত্যা করে এর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিক্রি করা দেশের প্রচলিত আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ ব্যাপকভাবে প্রচারিত না হওয়ায় সর্বসাধারণেরা এই আইনে অন্তর্ভুক্ত বিশেষ বিশেষ প্রজাতিগুলোকে তাদের আবাসস্থল থেকে ধরে এবং কেনাবেচার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন।  

সম্প্রতি সিলেটের লালবাজারে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ১৫০ কেজি ওজনের একটি বিশালাকৃতির বাঘাইড় মাছ বিক্রি করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে মাছটি ধরা পড়ে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মাছটি বিক্রি না করে বুধবার মাছটির পুরো শরীর কেটে কেটে কেজি প্রতি ২ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যা দেশের প্রচলিত আইনের পুরোপুরি অপরাধ।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু এবারই নয়, এর আগে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল কুশিয়ারা নদী থেকে শিকার করা ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড়, ২৭ মার্চ সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১০০ কেজি ওজনের বাঘাইড় ও ১২ জানুয়ারি সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১২০ কেজি ওজনের বাঘাইড় এই বাজারে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া এ বাজারে নিয়মিত বিভিন্ন ছোট-মাঝারি আকারের বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয়।

বাঘাইড় বা বাঘাইর (Gangetic Goonch) এর বৈজ্ঞানিক নাম Bagarius yarrelli। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) রেড লিস্ট (লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী) অনুযায়ী মিঠা পানির এ মাছটি ‘মহাবিপন্ন’।

এছাড়াও বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২ নম্বর তফসিলের ‘মৎস্য’ পর্বের ৭ ক্রমিক নম্বর ভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী।

এই আইন অনুযায়ী বাঘাইড় মাছ শিকার, কেনাবেচা, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।  

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বৃহত্তর সিলেটের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাঘাইড় মাছ বন্ধে কিছুদিন আগে মৌলভীবাজারে একটি অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা বুঝেছি যে অভিযান পরিচালনার আগে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাছ শিকারি ও বিক্রেতারা আইনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এ কারণে আমরা শিগগিরই সচেতনামূলক লিফলেট ও পোস্টার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে হাতে পৌঁছে দেবো। যাতে তারা এই মহাবিপন্ন বাঘাইড় সম্পর্কে সচেতন হয়ে মাছটিকে প্রকৃতিতে সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বাঘাইড় মাছ সংরক্ষণের বিষয়ে পোস্টার ও লিফলেট প্রস্তুত করেছি। আমরা দ্রুতই সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন বাজারগুলোকে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাব। পরে বাঘাইড় বা বিক্রি নিষিদ্ধ অন্য কোনো মাছ বিক্রির জন্য রাখলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। তখন আর কোনো ধরনের ছাড় দেবো না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।