ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

প্রযুক্তির যুগে প্রচলন কমে গেছে নববর্ষের কার্ডের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
প্রযুক্তির যুগে প্রচলন কমে গেছে নববর্ষের কার্ডের

ঢাকা: নববর্ষসহ উৎসবের দিনগুলোতে কার্ড বিতরণের রীতি বহু পুরনো। তবে এখন নানান দিবসে ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মানুষ।

নববর্ষকে কেন্দ্র করে নেই সেই ‘ঈদ কার্ড’ বিতরণের চিরায়িত রীতি। ফলে প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে যাচ্ছে ছাপা কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রচলন।

খ্রিস্টীয় নববর্ষের মতো আগে বৈশাখের শুভেচ্ছার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল বৈশাখী কার্ড। বাজারে পাওয়া যেত বিভিন্ন ডিজাইনের সব বাহারি কার্ড। অনেকে আবার নিজ হাতেও বানাতো বৈশাখ বা নববর্ষের কার্ড। এখন সেই কার্ডের প্রচলন কমে গেছে অনেকটাই। এর মূল কারণ ডিজিটাইজেশন। অর্থাৎ প্রযুক্তির কল্যাণে সেই দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

কার্ড ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের দিকেও ছাপা কার্ড বিতরণের হিরিক থাকলেও এখন প্রযুক্তির যুগে এসে ছাপা কার্ড বিতরণে আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে কার্ড বানিয়ে ই-মেইল কিংবা ফেসবুকে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন অনেকে। ফলে কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানোর যে সংস্কৃতি সেটি হারিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম হিসেবে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম। এছাড়া মোবাইলে ফোনকল, এসএমএস, ই-মেইলের ব্যবহার তো আগে থেকেই প্রচলিত। টুকটাক প্রযুক্তিতে এখন আমরা অনেকেই দক্ষ হয়ে যাচ্ছি। আর তাই সহজে, নামমাত্র খরচে শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি সামাজিক মাধ্যম দিয়ে।

পুরানা পল্টনে বহু পুরনো কার্ডের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নেই কোনো বাড়ছি ব্যস্ততা। উল্টো অন্য সময়ের তুলনায় ফাঁকা দোকানগুলো। কয়েকজন কার্ডের কাজ করলেও তা বিয়ের কার্ড আর ক্যালেন্ডারের। তাই কার্ড কেন্দ্রিক ব্যবসা এখন আর নেই স্বনামধন্য কার্ডের দোকানগুলোতে।

আজাদ প্রোডাক্টস কর্তৃপক্ষ জানান, এখন তো কার্ড বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কম। আগে নববর্ষ বা রমজানের আগেই প্রস্তুতি নিতাম কার্ড ছাপানো জন্য। শত শত ডিজাইন থাকতো আমাদের কার্ডের জন্য। এগুলো এখন জিরোতে নেমে আসছে। এবছর তো কোনো কার্ডই চলছে না। খুচরা বিক্রি তো একেবারেই নেই। মোবাইল আসার পর থেকে ধীরে ধীরে কার্ড বিক্রি কমেছে। এখন তো একেবারে তলানিতে এসে পড়েছে। ২০১৫-১৬ সালেও লোকজন লাইন দাঁড়িয়ে কার্ড কিনেছে। এখন তো নববর্ষের কার্ডও চলে না।

আনন্দ প্রোডাক্টসের সত্ত্বাধিকারী মো. আব্দুল হাকিম বলেন, মোবাইলের কারণে কার্ড ব্যবসা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে নববর্ষকে কেন্দ্র করে ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কার্ড করতো। এখন সেই কার্ড বিতরণটা সেভাবে করছে না। এক সময় এলাকায় এলাকায় ছেলেরা কার্ড বিক্রি করতো, তারা আমাদের এখানে এসে লাইন দিয়ে কার্ড নিতো। ২০১৫-১৬ সালের দিকেও ছিল। তখন এমন হতো আমরা টিকিট দিতাম, সিরিয়াল অনুযায়ী তারা এসে যার যেটা পছন্দ সেই কার্ডগুলো নিতো। দীর্ঘ লাইন লেগে যেতো। সেই সময়টা এখন আর নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এসে আমাদের অনেক কিছুই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একজন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। তাই আমরা এখন ৫ হাজার কার্ড ছাপালে দেখা যায় একশো কার্ডও বিক্রি হয় না। আগে আমরা বাসায় কার্ড দিয়ে আসতাম, স্কুল-কলেজে কার্ড দিতো। কিন্তু এখন বাসায় বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে কার্ড পাঠাচ্ছে। অনেকেই একটা কার্ড বানিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দেয়। আগে রাত ১টা অবধি দোকান খোলা রাখার পড়েছে। এখন রাত ৮টার মধ্যেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। সেই কার্ডের দিন আর ফিরে আসবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৩
এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।