ফেনী: কয়েক শতকের সাক্ষী হয়ে ফেনী শহরতলীর শুরুতেই দাঁড়িয়ে আছে কড়ই গাছটি। দু'পা এগুলেই ফারুকের লাল চায়ের দোকান।
সন্ধ্যা নামার আগে তার চা খেতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন নানা বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ। ফারুকের প্রতিকাপ চায়ের দাম ৮ টাকা। এমনও অনেকে আছেন এই ৮ টাকার রং চা খেতে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসেন শহরের অন্য প্রান্ত থেকে।
চায়ের সঙ্গে ৫ টাকার শিঙাড়া খেতে খেতে আড্ডার ঝড় তোলে উঠতি বয়সের যুবকেরা। চায়ের মতো তার এই শিঙাড়ায়ও রয়েছে ভিন্নমাত্রা। আকারে ছোট কিন্তু খেতে দুর্দান্ত। এই শিঙাড়ার সুনামও ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামের প্রান্তরে।
চায়ের এই আড্ডায় দেখা হয় ফেনী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিলা আক্তার মিমির সাথে।
তিনি জানান, চা খুব একটা খাওয়া হয় না। তবে এই চায়ের প্রতি বিশেষ মায়া আছে। সে মায়ার কারণেই শহরের অপর প্রান্ত থেকে এসে ফারুকের স্বচ্ছ কাপের এই লাল চায়ে চুমুক দিই। লেবু, আদা আর নানা রকম মসলার চা খেতে ভীষণ ভালো হয়।
কথা হয় ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের সাথে। এই ছাত্র নেতা জানান, ফারুক ভাইয়ের এই লাল চায়ে অন্যরকম আমেজ আছে। প্রায়ই আসি চা খেতে। চায়ের সাথে ৫ টাকার শিঙাড়া খেতেও দুর্দান্ত।
স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক ফেনীর প্রতিবেদক মুস্তাফিজ মুরাদ বলেন, ফারুকের লাল চা আজ প্রথম খেলাম। খেয়ে খুব আহামরি মনে না হলেও ভিন্নতা রয়েছে কিছুটা। এজন্যই হয়তো শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে চা খেতে অনেকেই ছুটে আসেন। আমার কয়েকজন বন্ধুকেও পেলাম চায়ের এই আড্ডায়।
শহরের মিজান রোডের বাসিন্দা জাবেরও এখানে নিয়মিত আসেন এই চা খেতে। জাবের জানান, শহরের অপর প্রান্ত থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসি এক কাপ চা খেতে। এই চা খেতে অনেক ভালো। সাথে শিঙাড়ার স্বাদও মুখে লেগে থাকে।
দোকানি ফরুক জানান, চায়ে খুব বেশি উপাদান দেন না তিনি। তবে একটা জিনিসি মেনে চলেন। প্রথমেই গরম পানি দিয়ে স্বচ্ছ কাচের কাপগুলো ধুয়ে নিই। ভোক্তাদের অনেকেই এই পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন।
কীভাবে এই চা তৈরি করেন প্রশ্নে ফারুক হেসে বলেন, ব্যতিক্রমী তেমন কিছু না, আর সবার মতোই। গরম পানির সাথে চায়ের হালকা লিকার মেশাই। সাথে তাজা লেবু, আদা, হালকা বিট লবন , পরিমাণমত চিনি ও বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি মসলা দিয়ে তৈরি হয় এই চা।
ফারুক বলেন, প্রতি কাপ বিক্রি হয় ৮ টাকা। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০ টা অবধি চলে বিক্রি। ১৫০ থেকে ২০০ কাপ চা বিক্রি হয় প্রতিদিন। চাইলে আরও অনেক বেশি চা বিক্রি করা যায় কিন্তু তা করি না। নির্দিষ্ট পরিমাণ কাপের বেশি বিক্রি করা হয় না। মানের ব্যাপারে খেয়াল রাখি।
শিঙাড়ার বিষয়ে ফারুক বলেন, প্রতিদিন ২০০ পিসের মতো শিঙাড়া বিক্রি করি। কম দাম হওয়ায় মানুষ পছন্দ করেন। ঘর থেকেই শিঙাড়াগুলো বানিয়ে আনি। একদম ঘরোয়াভাবে তৈরি হওয়ায় মানুষ পছন্দ করে খায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এসএইচডি/এসএএইচ