ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বাঙালির পহেলা বৈশাখ আজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
বাঙালির পহেলা বৈশাখ আজ মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত মুখোশ। ফাইল ছবি

ঢাকা: মানুষের মনে আনন্দের ফল্গুধারা। কয়েক দিন ধরেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছে নিজেদের শিকড়সন্ধানী উৎসবের।

জাতিসত্তার সুন্দরতম আনন্দ প্রকাশের সেই দিন এলো বাঙালির জীবনে। আজ শুক্রবার, পহেলা বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

আজ থেকে আরেকটি নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাঙালির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিতে। বাংলাভাষীর জীবনে এলো এক অমলিন আনন্দের দিন। বাঙালি আজ সকালে জেগে উঠেছে নতুন সূর্যের আলোয়; আজ সবাই দিনভর মেতে রইবে নাচে-গানে, উৎসবে-আমোদে।

পহেলা বৈশাখ জাতির এক অনুপ্রেরণার দিন। সবচেয়ে বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন উৎসবও। আজ সর্বস্তরের মানুষ হৃদয়ের টানে, বাঙালিয়ানার টানে মিলিত হবে এ উৎসবে। তাতে থাকবে না কোনো ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ, থাকবে না ধনী-গরিবের বৈষম্য। উৎসবে শামিল হয়ে বাঙালি তার আপন ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক নিজস্বতা ও গৌরবময় জাতিসত্তার পরিচয়ে আলোকিত হবে। বাঙালির এ চেতনাই গোটা জাতিকে মিলিত করেছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছিল। পহেলা  বৈশাখে তাই বাঙালি আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে আবার জেগে ওঠে, এক সুরে গেয়ে ওঠে বাঙলির জয়গান।

পহেলা বৈশাখে ঢাকাসহ সারা দেশের নানা বয়সের মানুষ উৎসবের আলোয় রঙিন হয়ে উঠবে। পোশাক-পরিচ্ছদ, খানাপিনা, গানবাদ্যসহ সবকিছুতে থাকবে বাঙালিয়ানার প্রাধান্য। দিনভর ঘোরাঘুরি, আড্ডা, আমন্ত্রণ ও তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে জাতি। যান্ত্রিক শহর ঢাকার মানুষ সাতসকালেই বের হবে ঘর থেকে। নারীরা পরবে লাল-সাদা শাড়ি, ছেলেদের পরনে থাকবে রংবেরঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ বৈশাখের সাজসজ্জা। মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পরবে শিশু-কিশোরের দল।  রাজধানীতে আজ বসবে নানা সাংস্কৃতিক উৎসব। মানুষ দল বেঁধে তাতে অংশ নেবে।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ: বাঁশিতে ভোরের রাগালাপে এবার বাংলা নববর্ষ বরণ করবে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-এর প্রথম প্রহরে সকাল সোয়া ৬টায় বাঁশিতে ভোরের রাগালাপ দিয়ে বরণ শুরু হবে বর্ষবরণের এ প্রভাতি আয়োজন। একক গান, সম্মেলক গান, আবৃত্তি এবং সব শেষে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের নতুন বছরের আবাহনী কথন দিয়ে শেষ হবে এ বছরের অনুষ্ঠান। প্রভাতি এ আয়োজনে প্রায় শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। আলোর সন্ধান পেতে হাল না ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে এবার রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উদযাপন করবে ছায়ানট।

চারুকলার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’: নববর্ষ বরণে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। সকাল সাড়ে ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্যের এই শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হবে।

শিল্পকলার আয়োজন: বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে হবে অনুষ্ঠান। জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সকাল ১০টায় নববর্ষের এবারের আয়োজনে থাকছে নতুন বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখের আলোচনা। আলোচনা পর্বের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরতেই নজরুল সংগীত পরিবেশন করবেন সুজিত মোস্তফা। রবীন্দ্রসংগীত লাইসা আহমেদ লিসা, বাউল গান পরিবেশন করবেন শরীফ সাধু ও জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী পুতুল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সঙ্গীত দলের পরিবেশনায় থাকবে সমবেত সংগীত। লোকসংগীত ভাওয়াইয়া ও বাউল গান পরিবেশিত হবে। পূজা ও পলাশ এর কন্ঠে পরিবেশিত হবে ভাওয়াইয়া এবং বিউটি ও সন্দিপন এর কন্ঠে পরিবেশিত হবে বাউল গান।

বাংলা একাডেমি: বৈশাখী মেলা, বক্তৃতানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে ১০ দিনের বইয়ের বৈশাখী মেলা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া চ্যানেল আই-সুরের ধারার আয়োজন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন আয়োজনে বরণ করা হবে বাংলা নতুন বর্ষকে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।