মৌলভীবাজার: বর্ণিল পোশাকে সেজে উঠেছিল মঞ্চ। লাল,সাদা ও বাহারি রঙের শোভায় মুখরিত হয়ে উঠে নৃত্যশিল্পীদের দেহ অবয়ব।
সম্প্রতি বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৃহত্তর সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জির প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ আলোচনা সভা ও নানান খেলাধুলা ও খাসিয়া নৃত্যের মাধ্যমে মাগুরছড়া খেলার মাঠে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও মূলপর্ব শুরু হয় বিকেল ২টায়। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।
মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনি দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী (সমাজপ্রধান) জিডিসন প্রধান সুচিয়াংয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন।
লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্নীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, বাংলাদেশ মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিনহা প্রমুখ।
খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় তদের নিজস্ব বর্ষপুঞ্জি হিসেবে বছরের শেষ দিন ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেং কুটুস্নেম’। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটুস্নেম’। দেশব্যাপী খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটুস্নেম’ উৎসব (বর্ষ বিদায়) মাগুরছড়া পুঞ্জির মাঠে বৃহস্পতিবার উৎসবের আমেজে উৎসবে মিলিত হন তারা।
এবারও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে মাগুরছড়া পুঞ্জির ইয়োথ ক্লাবের উদ্যোগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর সিলেটে প্রায় ৮০টির মতো খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়ারা কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির ‘খাসি সেং কুটুস্নেম’ অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অংশ নেন। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১২৪তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৫তম বর্ষকে বরণ করে নেয় খাসিয়া জনগোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় খাসি সেং কুটুস্নেম’ উদযাপন করা হয়। ২৪ নভেম্বর শুরু হয় খাসি বর্ষবরণ।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান জানান, সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির সৌরভ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটুস্নেম’ উৎসব উদযাপিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২8 ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
বিবিবি/এএটি