ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কাঠের খেলনা তৈরিতে আগের মতো ব্যস্ততা নেই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
কাঠের খেলনা তৈরিতে আগের মতো ব্যস্ততা নেই

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের খেলনা ঐতিহ্য হারাচ্ছে। ঈদ উৎসব, বৈশাখী মেলা ও গ্রামীণ পার্বণকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কাঠের খেলনা তৈরির কারিগরদের।

কিন্ত সেই ব্যস্ততা নেই এবার। কারণ হিসেবে জানা গেছে, আগের মতো কাঠের খেলনা চলছে না, বেশির ভাগ স্থানে জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মাটি ও অন্যান্য উপকরণে তৈরি খেলনা।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কাঠের তৈরি খেলনা। এতে যেমন ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ শিল্প, তেমনি খেলনা বানানো এ পেশা থেকে অন্য পেশায় যাচ্ছেন কারিগররা। ইতোমধ্যে অনেক কারিগর চলে গেছেন অন্য পেশায়। বিক্রি আর চাহিদা কম থাকায় কোনোমতে পেট চলে এ কারিগরদের।


যেকোনো গ্রামীণ মেলা, পহেলা বৈশাখ বা পূজা বা ঈদে কিছুটা চাহিদা বাড়ে এসব কাঠের খেলনার। এছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার ভিড়ে যেন পূর্ণতা পায় না কোনো দোকানে। এসব কাঠের খেলনা তৈরি হয় নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুরে (বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশের) দুই একটি কারখানা।  

সরেজমিনে জানা যায়, একসময় সৈয়দপুরের অর্ধশতাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন এ পেশায়।  

স্থানীয় ভাষায় ট্রাক, বাঁশের বাঁশি, কেরকেরি গাড়ি, ঢোল গাড়িসহ নানা খেলনা তৈরি হতো এখানে। পহেলা বৈশাখ বা পূজা-পার্বণে চাহিদা বাড়তো কাঠের খেলনার। এসব ছাড়া যেন পূর্ণতা পেতো না কোনো মেলাই। গ্রামবাংলার খেলাধুলার একটি ঐতিহ্য ছিল এসব কাঠের খেলনা।



খেলনা তৈরির কারিগর সেলিম উদ্দিন জানান, আমার বাপ-দাদার আমল থেকে এই পেশায় জড়িত ছিল। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমি এই পেশায় কাজ করছি। ঈদ-পূজা ছাড়া এসব খেলনা বিক্রি হয় না। এখন প্লাস্টিকের কারণে খেলনার চাহিদা খুবই কম। খেলনা তৈরি করে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে। গ্রামবাংলার এসব খেলনা কেউ নিতে চায় না। আগে দিনে কমপক্ষে এক হাজার খেলনা বিক্রি হতো। এখন পুরো বছরজুড়ে ১৫ হাজার বিক্রি হয় না। আমাদের সরকারিভাবে সহায়তা করলে আমরা এ পেশা টিকে রাখতে পারব৷ 

সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, আমি বাড়ির কাজ করার পাশাপাশি এখানে এসে কাজ করি। আমার বিয়ে হয়েছে ২০ বছর আগে তখন থেকে এসব কাজ করি। আমাদের এখানে আগে বিক্রি খুব ছিল। এখন তেমন বিক্রি হয় না, যা বিক্রি হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।  

শহরের বাঙ্গালীপুর এলাকার আবেদ আলী (৪৭) জানান, এখানে যে কয়জন কাঠের খেলনা তৈরির পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন তাদের সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া প্রয়োজন। এই খেলনাগুলোর সাথে মানুষের অতীত জড়িত রয়েছে। এছাড়া এ খেলনাগুলো শিশুদের জন্য অনেক নিরাপদ।  

বিসিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র সৈয়দপুরের শিল্পনগরী কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, একসময়ের ঐতিহ্য এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে মাত্র কয়েকটি কারখানা রয়েছে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আমাদের অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারিভাবে ভাবা হচ্ছে তাদের কথা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।