ময়মনসিংহ: দেশের সবচেয়ে ছোট গ্রামের সন্ধান মিলেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আট নম্বর রাজীবপুর ইউনিয়নে। এ গ্রামের নাম উমানাথপুর।
ব্যতিক্রমী এ গ্রামের অস্তিত্ব সর্ম্পকে স্থানীয় আশপাশের গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া জানেন না বেশির ভাগ এলাকার মানুষ।
সাধারণ জনবসতিপূর্ণ এলাকা বা অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। বিচিত্র এ গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে ভূমি মানচিত্রেও। উমানাথপুর নামে রয়েছে আলাদা মৌজাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামটিতে রয়েছে একটি মাত্র বাড়ি, যেখানে বসবাস করে একটিমাত্র পরিবার। বাড়িটি দলিললেখক সিরাজুল সরকারের (৭০)। মাত্র ২৫ শতক জমির ওপর নির্মিত এ বাড়িতে রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, আছে একটি পুকুর ও একটি টয়লেট। অন্যের জমির আইল দিয়ে এ বাড়িতে যেতে হয়। আর এ বাড়ি ঘিরেই গঠিত হয়েছে ‘উমানাথপুর’ গ্রাম। এ গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশে গ্রামের মধ্যে রয়েছে- উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে হরিপুর, পূর্বে উদয়রামপুর এবং পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর ও হরিপুর গ্রাম। সম্প্রতি এ গ্রামের একমাত্র বাড়ির কর্তা দলিললেখক সিরাজুল সরকারের ছেলে শরীফুল আলমের মৃত্যু হয়েছে। এরপর এ গ্রামের কথা জানাজানি হয়।
প্রতিবেশী হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া (৪০) বলেন, একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম। এটি একটি আজব ঘটনা। প্রথমে এ খবর শুনে অনেকেই বিশ্বাস করে না। কিন্তু এটিই সত্য, এ বাড়ির জনসংখ্যা মাত্র চার।
একই তথ্য নিশ্চিত করে উদয় রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন (৩৭) বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এ গ্রামটি। একই অবস্থা আমার নিজ গ্রাম উদয় রামপুরেরও। এখানেও চারটি পরিবারের বসবাস। এতে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধশত, তবে ভোটার সংখ্যা ২৩ বা ২৪টি।
স্থানীয় মেহেদী হাসান মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, যুগ যুগ আগেই এ গ্রাম গড়ে উঠেছে। বাপ-দাদাদের আমল থেকেই আমরা এ গ্রামের অস্তিত্ব দেখে আসছি। জমির কাগজপত্রে এ গ্রামের অস্তিত্ব আছে।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে উমানাথপুর গ্রামের একমাত্র বাড়ির কর্তা সিরাজ সরকার (৭০) বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও তার পূর্বপুরুষরা এ বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ গ্রামে মোট জমির পরিমাণ ছয়/সাত একর। বাবা মারা যাবার পর থেকে আমি পরিবার নিয়ে এ বাড়িতে বসবাস করি। আমাদের পরিবারের মোট সদস্য বর্তমানে চারজন। এর মধ্যে নাতি ছাড়া আমি, আমার স্ত্রী ও এক পুত্রবধূ ভোটার। এ গ্রামের জেএল নম্বর ১১৬। তবে আমার বোনেরা বসবাস করেন বাড়ির পেছনে অন্য গ্রামে।
স্থানীয় রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আলী ফকিরও (৭০) এ গ্রামের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে জানান, বহুকাল আগে থেকেই একটি বাড়ি নিয়ে এ গ্রাম গঠিত। তবে কীভাবে এ গ্রাম সৃষ্টি হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আমার ছোটবেলা থেকেই এ গ্রামটি দেখে আসছি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, এ গ্রামের অবস্থান সম্পর্কে আমি এখনই জানলাম। কোন নীতিমালায় এ গ্রাম সৃষ্টি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এসআই