চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাও যদি বন্ধু হাঁরগে বাড়ি যাইও। কালাই রুটির সাথে ধইনে পাতের (ধনেপাতা) চাটনি মজা কইরা খাইও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত একটি খাবার মাসকলাইয়ের রুটি। যা এ এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষ সকালের নাস্তা হিসেবে খেয়ে থাকে। আর এই রুটি নিয়েই তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় এ গানটি।
এক সময় হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বিক্রি হতো এ রুটি। এখন এ রুটি বিক্রি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার অনেক স্থানে। সবচেয়ে বেশি দোকানের দেখা মেলে শিবগঞ্জ উপজেলা সদরে।
শিবগঞ্জ কাঁচাবাজার এলাকায় কালাই রুটির দোকানের মালিক হানিফ জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত তিনি। তেল বা ক্ষতিকর উপাদান না থাকায় এ রুটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু মাসকলাই আগের মতো উৎপাদন না হওয়ায় ও দাম বেশি হওয়ায় এ ব্যবসা হুমকির মুখে।
শীতের সময় রুটি বেশি বিক্রি হয়। এ সময় প্রতিদিন ১৫/২০ কেজি আটা লাগে। এর মধ্যে দুই কেজি মাসকলাইয়ের আটা। অন্য সময় ৮/১০ কেজি আটার রুটি বিক্রি করেন তিনি।
বাজারে একটি কালাই রুটি বিক্রি হয় ১০ টাকায়। এর সঙ্গে আলাদা মূল্য দিয়ে বেগুন ভর্তা, গরুর নেহারি, গরু বা ছাগলের ভুঁড়ি, মুরগীর মাংস পাওয়া যেতে পারে।
শীতের সময় রুটির সঙ্গে পাওয়া যায় ধনে পাতার চাটনি। ধনে পাতা বেটে এর সঙ্গে লবণ মিশ্রিত করে তৈরি করা হয় এ চাটনি। এ চাটনির সঙ্গে খেলেই কালাই রুটির আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
কালাই রুটি তৈরি করতে মাসকলাইয়ের আটা ও চালের আটার সঙ্গে মেশানো হয় পরিমাণ মতো গরম পানি। ভালোভাবে নেড়ে তৈরি করা হয় খামির। সেখান থেকে পরিমাণ মতো নিয়ে বিশেষ কায়দায় হাতেই তৈরি করা হয় কালাই রুটি। মাটির পাতিলে তেল ছাড়া ভেজে তা গরম অবস্থায় পরিবেশন করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও মাসকলাইয়ের এ রুটির প্রচলন রয়েছে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলাতেও। এসব অঞ্চলের এক সময়ের সকালের নাস্তায় ব্যবহৃত এ রুটি জায়গা করে নিয়েছে দোকানে-হোটেলে। আর এভাবেই কালাই রুটির ঐতিহ্য টিকে আছে বছরের পর বছর।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
এমজেড