লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামে রাশেদুল ও আসমা দম্পতির তৈরি বাড়িটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বাড়িটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ।
বাড়ির মালিক রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন তিনি। ওই সময় পরিচয় হয় আসমা বেগমের সঙ্গে। এরপর নিজেদের পছন্দে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। ঢাকা শহরের ইট-পাথরের বাড়িতে থেকে ওই কলেজে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে আট বছর খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন তারা।
দু'জনের স্বপ্ন ছিল পরিবেশ বান্ধব একটি বাড়ি তৈরি করার। ওই বাড়ি হবে গ্রামের সবুজ বেষ্টিত নির্মল পরিবেশে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকা শহরের ইট-পাথরের চারতলা বাড়িটি বিক্রি করে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে।
গ্রামে ফিরেই স্বপ্নের পরিবেশ বান্ধব বাড়ি তৈরি করতে গ্রামের বাজারগুলো থেকে ছোট ছোট প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করেন তারা। এছাড়া ভাঙারির দোকান থেকে বিভিন্ন কোমল পানীয়র খালি বোতল অল্প টাকায় কেনেন।
বোতল সংগ্রহ হওয়ার পর চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিন বাড়িটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তারা। ছয়টি কক্ষ বিশষ্ট বাড়িটি তৈরি এখন শেষের পথে। এরই মধ্যে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন বাড়িটি দেখতে। রাশেদুল ইসলাম জানান, বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা শুনে প্রথম দিকে সবাই তাকে পাগল আখ্যা দিলেও এখন মানুষ বাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন।
খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি মাঝারি বোতল সাধারণত ১০ ইঞ্চি হয়, যার ব্যাস হয় সাড়ে তিন ইঞ্চি। অর্থাৎ একটি ইটের সমান। একটি ইটের দাম পড়ে ১০ টাকা। আর একটি খালি বোতল কিনে বালু ভরতে তিন টাকার বেশি লাগে না। ইট আর বোতলে সিমেন্ট ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় সমান। এতে ব্যয় সাশ্রয় হয় অর্ধেকের বেশি। বোতলের বাড়ি আট মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়।
বালু ভরা বোতল গরম বা ঠাণ্ডা দ্রুত শোষণ করতে পারে। যে কারণে বালু ভরা বোতলে তৈরি ঘর গরমের সময় ঠাণ্ডা এবং ঠাণ্ডার সময় গরম থাকবে বলেও জানান তিনি।
রাশেদুল বলেন, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ কাঁচা ঘর বাড়িতে বসবাস করে। বাঁশ,কাঠ,টিনের বেড়া দিতে যে টাকার দরকার, তা দিয়ে নিজেরাই ইচ্ছা করলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পাকা দেয়াল নির্মাণ করতে পারবে।
তাকে দেখে গ্রামের মানুষ উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি।
রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী আসমা বেগম জানান, নিজেদের পরিকল্পনায় ও গ্রামীণ রাজমিস্ত্রী দিয়ে ছয় কক্ষ বিশিষ্ট এ বাড়িটি তৈরি করতে তাদের খরচ পড়েছে মাত্র চার লাখ টাকা।
শহর ছেড়ে গ্রামে বাড়ি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ পরিবেশটা চমৎকার। এছাড়া গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষদের পরিবেশ বান্ধব এমন বাড়ি তৈরিতে উৎসাহিত করাও আমাদের লক্ষ্য। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আমাদের পরিবেশ বিজ্ঞানে পড়াটা স্বার্থক হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি বাড়ি পরিবেশ বান্ধব। তবে এটি ব্যবহারের আগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
দরিদ্র মানুষের কাছে এ ধরনের বাড়ি মডেল হিসেবে কাজ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৭ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
এসআই