ছবি তোলার জন্য আলোটা মোটেই ফুটছে না। ক্যামেরা ব্যাগেই বন্দী হয়ে ছিল।
আর যায় কোথায়! ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম। ফটো আর ভিডিওতে। দেখুনই না মজাটা! আর ওই যে ব্যাঙ দেখলে দুষ্ট খোকার দলের ঢিল ছোঁড়া! এমনই ভাগ্য পেয়ে গেলাম সে দৃশ্যও।
ঘাটেরচরের ১নং ঘাটের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ এটি। ভোর রাত্রির বৃষ্টিতে মাঠে গোড়ালি সমান পানি। আর তাতেই এই ব্যাঙদলের খেলা আর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক। আর ভালো করে তাকাতেই বুঝলাম শুধু খেলা বা ডাকাডাকি না এখানে অন্য কিছু হচ্ছে!
একটু সামনে এগিয়েই দেখা মিলল কোরাস দলের। সম্ভবত ব্যাঙের দল ভালোবাসার আবেগে নিজের সংগীত প্রতিভা জাহির করছে।
পানিতে নেমে ছবি তুলছি দেখে স্থানীয় এক বয়োজ্যেষ্ঠ হাসি মুখে এসে কথা শুরু করে দেন। আব্দুল গনি উনার নাম। তার কাছেই জানতে পারলাম, স্থানীয় ভাষায় ব্যাঙগুলোকে ডাকা হয় বাউয়া ব্যাঙ বলে। আর এই মাঠে আছে আরও হরেক ব্যাঙ। বাওয়া ব্যাঙের হলুদ ব্যাঙ, কালো ব্যাঙ, কোট ব্যাঙ, ঘড় কুনি ব্যাঙ।
হাসতে হাসতে বলছিলেন, চৈত্র বৈশাখ ব্যাঙগুলান মাটির তলেই থাকে। আর জ্যৈষ্ঠ আষাঢ়ের বর্ষা শুরু হইতে উপরে আইসা পরে ডিম পারার লেইগা। দেখ না, একটা আরেকটারে ক্যামনে ভালবাসতাছে। অর্থাৎ ব্যাঙের সঙ্গমকাল এটি।
কোন ব্যাঙের কি রঙ জিজ্ঞাস করতেই বললেন, এমনিতে পুরুষগুলোর রঙ থাকে মেয়েদের মতই। কিন্তু বর্ষায় এরা সম্পূর্ণ হলদে হয়ে যায়।
তরুণ ব্যাঙগুলো যৌবন-জ্বালায় মিলন সঙ্গিনীকে ডাকছিল তারস্বরে। ডাকের সাথে নীল রঙের থলি ফুলে ফুলে উঠছিল।
পুরুষ বাউয়া ব্যাঙের মদির আহ্বানে কোন কোন তরুণী বাউয়া ব্যাঙ সাড়াও দিল। চোখের সামনে নির্লজ্জের মত চলতে থাকে কোলা ব্যাঙ দম্পতিদের রতিক্রীড়া। তাদের বিরক্ত না করে আমি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়েই ছবি তুলি।
তবে এরকম উদ্দাম প্রেমের মাঝে কখনো কখনো অসূয়াপরায়ণ অন্য তরুণেরা বাধা দেয়। হাতাহাতি-মারামারি-লাফালাফিও চলতে থাকে।
কখনো আবার দলবদ্ধভাবেই চলতে থাকে যৌনমিলন – সঙ্গীবদলও হয়।
আর অন্যদিকে শিশুরা ব্যস্ত সেই পানিতে ঢিল ছুঁড়ে ব্যাঙদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে। আব্দুল গনি কথা বলতে বলতেই উঠে গেলেন তাদের ধমকে থামতে। ফিরে এসে আক্ষেপের সুরে বলেন পুলাপাইনরা বুঝেও না, খেলার ছলেই মাইরা ফেলে ব্যাঙগুলান।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, ১৭ মে, ২০১৭
এমএমকে