বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরের প্রবেশের পথেই দু’ধারে রয়েছে অসংখ্য গাছ। মন্দিরে প্রবেশের সময় দেখা মিলবে পূজা-অর্চনা ও প্রার্থনায়ে ব্যস্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
কথিত আছে ৪শ’ বছরের পুরনো এ মন্দিরে রয়েছে রাজা দক্ষের কন্যা ও ভোলানাথ শিবের স্ত্রী সতীর বাম পায়ের গোড়ালির অংশ। আর তাই সানতন ধর্মের মানুষের কাছে স্থানটি পূজনীয়।
মূল মন্দিরের ফটকের সামনে ঝোলানো রয়েছে বড় একটি বোর্ড। এতে ৫১টি স্থানের নাম রয়েছে। পুরাণের স্কন্দ অনুযায়ী, বিষ্ণু চক্রে খণ্ডিত সতীর শবদেহের যে ৫১টি খণ্ড উপ-মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়। তার মধ্যে সতীর পায়ের গোড়ালির একটি অংশ পঞ্চগড়ের বদেশ্বরী মন্দিরে পড়ে। সতীর গোড়ালিটি সযত্নে রাখা আছে মন্দিরটিতে।
একই স্থানে রয়েছে একটি শিব মন্দিরও। মোট ২ দশমিক ৭ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির। বর্তমানে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। ৪শ’ বছরের পুরনো মন্দিরটি আজও ধারণ করে আছে অসাধারণ সৌন্দর্যময় কারুকাজ।
মন্দির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রঞ্জিত বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির শুধুই যে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উপসানালয় তা নয়, এটি পর্যটকদের কাছেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক আসেন এই মন্দিরে। এই মন্দিরটিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে ভোলানাথ শিব ও রাজা দক্ষের কন্যার সতীর স্মৃতি। মূলত রাজা দক্ষ ভোলানাথ শিবকে পছন্দ করতেন না তার উদাসীন মনোভাবের কারণে।
তিনি জানান, একবার এক মহাযজ্ঞ আয়োজন করেন দক্ষ রাজা। সেই যজ্ঞে শিব ছাড়া ত্রিভূবনের সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। শিবের মূর্তি বানিয়ে রাখা হয় প্রাসাদ ফটকে প্রহরী হিসেবে।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন দক্ষ রাজারই কন্যা শিবপত্নী সতী। শিবের দারোয়ান মূর্তি দেখে লজ্জায় দেহত্যাগ করেন তিনি। উন্মত্ত শিব তখন সতীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে শুরু করেন প্রলয়নৃত্য। কাঁপতে থাকে পৃথিবী। নিরুপায় হয়ে বিষ্ণু তখন তার চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করতে থাকেন।
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী আরও প্রায় ১১টি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভিতরগড়, মহারাজার দিঘী, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়া মাজার, গোলকধাম মন্দির, তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো, বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর, সমতল ভূমিতে চা বাগান ও রকস্ মিউজিয়াম।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৭
ইউএম/জিপি