ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

চিনিতে আসক্তির দশ ক্ষতি ও প্রতিকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
চিনিতে আসক্তির দশ ক্ষতি ও প্রতিকার

ঘুম হচ্ছে না!, সহজেই ভেঙ্গে পড়ছেন, মুখে বিস্বাদ, মনে বিষাদ। সব কিছুরই মূলে চিনি। ধরে নিতে হবে চিনির প্রতি আপনার আসক্তিই এর কারণ। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংবা পুষ্টিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই চিনি খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন, কারণ হিসেবে তারা বলছেন এতে ওজন বাড়ে, দাতের ক্ষয় হয়, অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।

চিনি কিন্তু সব কিছুতেই থাকে। আপাত নির্দোষ লবনাক্ত খাবার যেমন সালাদ ড্রেসিং, ব্রেড কিংবা কফি জাতীয় পানীয়তেও এর উপস্থিতি রয়েছে।


 
তবে অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারেন না, ঠিক কতটা আসক্ত হয়ে পড়েছেন চিনি জাতীয় খাবারে কিংবা চিনিতে। পুষ্টিবিদরা সেজন্য অন্তত ১০টি লক্ষণের কথা বলেছেন, যা থেকে চিনির প্রতি আসক্তি বোঝা যাবে। একইসাথে কিভাবে তা থেকে মুক্তি মিলবে সে পথও বাতলে দিয়েছেন তারা।
 
ত্বকে ফুসকুড়ি ও ব্রন দেখা দেয়। এটা চিনির প্রতি আসক্তির প্রধানতম লক্ষণ। এমনটা হলে ধরে নিতে হবে আপনার খাবারে চিনির মাত্রা খুব বেশি। মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে মেয়েদের হরমোনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয এবং তাতে চামড়া রুক্ষ হয়, আর মুখে গলায় ফুসকুড়ি ও ব্রন দেখা যায়। সর্করা জাতীয় এই খাবার ত্বকের প্রোটিন নষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়, স্থিতিস্থাপতা কমিয়ে দেয়, ফলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার ভাব প্রকট হয়ে ওঠে।
 
স্বাদের অনুভূতি কমায়। পুষ্টিবিদরা বলেছেন চিনি বেশি খেলে ধীরে ধীরে মানুষের মুখে স্বাদের অনুভূতি কমে যায়। তখন মিষ্টি জাতীয় খাবারটিই আর মিষ্টি লাগে না। সে জন্য বেশি মিষ্টি থাকতে হয়। আর এভাবেই মিষ্টির আসক্তি বাড়তে থাকে। পুষ্টিবিদরা বলেন চিনি এক ধরনের মাদকের মতো, যত বেশি খাবেন ততই বেশি এর চাহিদা বাড়বে।

আরও পড়ুন: চিকুনগুনিয়া থেকে রেহাই দেবে মশারি 

দাঁতের ক্ষয় বাড়ে। দাঁতের চিকিৎসকরা, বাবা-মায়েরা শিশুদের প্রায়শই বলেন মিষ্টিজাতীয় খাবার দাঁত ক্ষয় করে। এটাই সত্য। চিনির কারণে দাঁতের মুক্তোসাদা যে রঙটি, তা নষ্ট হয়। চিনির কারণে মুখের ভেতর যে ব্যকটেরিয়া সৃষ্টি হয় তা ক্ষতিকর অ্যাসিড তৈরি করে, এতে দাঁতের অ্যানামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর, মাড়িতে ও দাঁতে গর্ত সৃষ্টি করে। এজন্য চিনি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দ্রুত ব্রাশ করা জরুরি।
 
চিনিই বাড়ায় চিনি খাওয়া। পুষ্টিবিদরা বলছেন চিনি স্রেফ মাদকের মতো। যত খাবেন চাহিদা ততই বাড়বে। অনেকেই যা পান তাই খান, মিষ্টির কথা শুনলে তাদের হুশ থাকে না। আর কোনটাতে কতটুকু চিনি আছে কোনটাতে নেই সে নিয়েও সামান্য ভাবেন না। এমন নয় যে কেবল ক্যান্ডি আর প্যাস্ট্রিতেই চিনি রয়েছে। রুটিতেও চিনির উপাদান কম নয়। চিনিযুক্ত খাবার বার বার টানে। মাদকের প্রতি মাদকাসক্তদের মস্তিষ্ক যেভাবে কাজ করে, চিনিযুক্ত খাবারে আসক্তদের প্রতিও ঠিক তেমনভাবেই কাজ করে।
 
শক্তি কমে যায়। চিনি শরীর থেকে শক্তি টেনে নেয়, পুষ্টিবিদরা যাকে বলেন সুগার-ক্র্যাশ। শরীরে শক্তি উৎপাদনে গ্লুকোজের প্রয়োজন রয়েছে- কিন্তু তার জন্য শরীরের রক্তে চিনির পরিমান সুষম থাকা চাই। আপনি মাত্রাতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে গ্লুকোজ তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। তাতে শরীরের স্বাভাবিক সক্ষমতা কমতে থাকে।
 
শরীর ফুলে ফেঁপে যায়। চিনির মধ্যে একটা সাধারণ ধরন হচ্ছে ফ্রুকটোজ। অ্যাপেল, পিচ, আর কর্ন সিরাপের মতো মিষ্টি থেকে এই ফ্রুকটোজ মেলে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই ধরনের চিনির মাত্রা শরীরে বেশি গেলে তা শরীরকে স্ফীত করে। কারণ এ ধরনের ফ্রুকটোজ শরীরের সহজে মিশে যেতে পারে না। এছাড়া এতে সৃষ্ট অপ্রত্যাশিত ব্যাকটেরিয়া গ্যাস উৎপাদন করে এবং তা পাকস্থলীকে ফাঁপিয়ে তোলে।
 
যৌন শক্তি কমায়। বেশি চিনি খেলে যৌনশক্তি ও ইচ্ছা দুটোই কমে যায় বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। রক্তনালীতে চিনির পরিমান বেশি হলে মানব শরীরের জিনে সেক্স হরমোন তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের যৌনসক্ষমতা আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।
 
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। বেশিমাত্রায় চিনি খেলে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। এতে ক্ষতিকর জীবানুগুলো শরীরে বাসা বাঁধে। মানব শরীরের ৭০ শতাংশ প্রতিরোধক পাকযন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে তা কাজ করতে পারে না।
 
ওজন বাড়ায়। চিনির কারণে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া এক অন্যতম লক্ষণ। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, মানব দেহে চিনির মাত্রা বেশি হয়ে গেলে তখন তা শক্তি তৈরির কাজে অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এরপর নতুন করে শরীরে চিনি আসলে আগের চিনি আর শক্তিতে পরিণত না হয়ে বরং শরীরে চর্বি জমিয়ে দেয়। যা পাকস্থলির চারিদিকে জমতে থাকে। আপেলের মতো কোনও কোনও প্রাকৃতিক খাদ্যে প্রচুর মাত্রায় চিনি থাকলেও তার বিপরীতে পর্যাপ্ত আঁশ থাকে, কিন্তু তৈরিখাদ্যে আঁশের পরিমান একেবারেই থাকে না। এতে চিনি দ্রুত চর্বিতে রূপ নেয়। ফলে ওজন বাড়ে।
 
ইনসমনিয়া সৃষ্টি হয়। ঘুমের ব্যাঘাত আরেকটি সমস্যা যার পেছনে চিনি দায়ী। ঠিক ঘুমুতে যাওয়ার আগে চিনি খেলে ঘুম আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আবার ঘুম এলে মাঝ রাতে তা ভেঙ্গে যেতেও পারে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।