রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডের ফুটপাতে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে মিম (৪)। এবারের ঈদে তার উপহার একটি সস্তা নেইল পলিশ।
সোমবার (২৬ জুন) ঈদের দিন সকালে মা মনোয়ারা বেগম চার বছরের কন্যা মিমের হাতে নেইল পলিশ লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। আর মিম মহানন্দে তা উপভোগ করছিলো। অদ্ভূত আনন্দ যেনো খেলা করছিলো মিমের চোখে মুখে।
নেইল পলিশ লাগিয়ে কি করবা জিজ্ঞেস করতেই লাজুক হাসিতে মিম জানায়, ‘ক্যান ঈদ করুম’।
মিমের এমন সরল উক্তিতে মা মনোয়ারা বেগমের চোখের কোনায় জল চিক চিক করে। ধরা গলায় বলেন, মাইয়া দুইডারে কিছু কিনে দিতে পারি নাই। একটা মিন্দি (মেহেদি) চাইছিল। ৫০ টাকা দাম, তাও দিতে পারি নাই। পরে অর বাপে এইডা ( নেইল পলিশ দেখিয়ে) কিনা দিছে ১০ টেহায়।
মনোয়ারা বেগম স্বামীর সাথে দুই মেয়ে মিম (৪) আর জান্নাতিকে (৮) নিয়ে থাকেন বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডের ফুটপাতে। সেখানেই তাদের ঘর, সেখানেই সংসার। মানুষের বাসায় কাজ করেন তিনি। আর স্বামী যখন যে কাজ পায় তাই করে।
লালমনিরহাট থেকে তিন বছর আগে ঢাকা শহরে এসেছেন মাথা গোজার ঠাই খুঁজতে। শ্বশুরের ৮ ছেলে। নিজেদের কোন জমিজমা নেই। বাবার বাড়ির অবস্থাও ভালো না। এখন এখানে থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে মেয়ে দু’টোকে পড়ালেখা করাতে চান তিনি। যাতে মেয়েদের অবস্থাও তার মতো না হয়।
একটু সামনে রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন মোড়েলগঞ্চ থেকে আসা রাজু মিয়া (৫০)। ঈদে বাড়তি আনন্দের কিছু নেই তার জীবনে। প্রতিদিনের মতোই ফুটপাতে শুয়ে আছেন। কাছেই একটা কুকুরও ঘুমাচ্ছে।
ঈদের কথা বলতেই রাজু মিয়া একটু হেসে উত্তর দিলেন, ঈদ! এহন মুই কি হরমু (ঈদ! এখন আমি কি করবো)? ঈদের দিন এভাবে রাস্তায় ঘুমিয়ে আছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিনই এইহানে ঘুমাই। এ আর নতুন কি।
জীবনের এক নির্মম ঝড়ে সন্তান সংসার হারানো রাজু মিয়া এখন ঢাকা শহরে যে কাজ পান তাই করেন। আর রাত হলে এভাবে রাস্তাতেই ঘুমিয়ে থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে কোন এক ঝগড়ায় তার শিশু সন্তান মারা যায়। এরপর ক্ষোভে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হলেন না রাজু মিয়া। কেবল বলেন, আর কিছু বলতে পারবো না। শুধু শুধু কষ্ট বাড়বে।
বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডের ফুটপাতে রাজু মিয়া আর মিমের পরিবারই নয়, এভাবে ঈদ কাটছে দেড় শতাধিক পরিবারের। এরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ। কেউ এসেছেন নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে, কেউবা এলাকায় মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে।
এখানে তারা ডাল-পাতা আর পলিথিনের ঘর বেঁধে থাকেন। কারো আবার সেটাও নেই। ফাঁকা রাস্তা, ভ্যান, রিকশা যখন যা পান তাতেই ঘুমিয়ে পড়েন রাত হলে। সকাল হলেই ফের পেটের তাগিদে ছোটা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
এসআইজে/জেডএম