রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ৩/৪ কিলোমিটার ভেতরের এ এলাকাকে স্থানীয় মানুষ চেনেন কুমারপাড়া নামে।
এ কুমাররা শুধু নিজ গ্রামেই এ মটকি তৈরি করেন না।
পালপাড়ার রঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, গোটা গ্রামের সকলেই পাল, সকলেই কুমার, মটকি তৈরির কাজ করেন।
‘শত বছর ধরে এ কাজই করি হামরা’- বলেন তিনি।
রঞ্জন আরও বলেন, ‘আমাদের জীবন চলে বাংলা মাস ধরেই। তবে আমাদের পাল বংশের দু’জন পড়াশোনা করে কিছুদিন আগে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক হয়েছেন। তারা অবশ্য ইংরেজি মাসেই কাজকর্ম করেন’।
‘আমরা যে মটকি তৈরি করি, তাতে গুড়ই রাখা হয়। প্রতিটি মটকির দাম ১০০ টাকা। একেকটিতে ৫০ সেরের মতো গুড় ধরে। পরিশ্রম বাদে এটির জন্য মাটি ও জ্বালানি বাবদ খরচ হয় ৩৫ টাকার মতো’।
তার মতে, মূলটাই হল পরিশ্রম। মাটি সানাতে অনেক কষ্ট। একটিও আখির (কঙ্কর) থাকা যাবে না। আখির থাকলে ভাটায় দেওয়ার পর মটকি ফেটে যাবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মটকি তিন ধাপে তৈরি হয়। এটির মাথা থেকে গলা তৈরি করা হয় চাকা ঘুরিয়ে। আর গলা থেকে কোমর এবং তার নিচটা তৈরি হয় ফরমায়। তৈরির পর প্রায় ১০ দিন রোদে শুকাতে হয়, তারপর যায় ভাটায়।
সুধীর পাল জানান, মটকি তৈরির মাটি কিনতে হয় দলা হিসেবে। এক একটি দলা চার সেরের মতো, দাম আড়াই টাকা। একটি মটকি বানাতে লাগে চার দলা, দশ টাকার মাটি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের আশেপাশে কুশরের (আখ) আবাদ কম। পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার কুমাররা গিয়ে অস্থায়ী ঘর বাঁধি। খলির বিলে একটি, খালাসপীরে দু’টি, সন্ন্যাসী বাজারে একটি, রাজরামপুরে একটি এবং বামনপুরে একটি ভাটা তৈরি হয়’।
একেক মৌসুমে কয়েক হাজার মটকি তৈরি হয়। এটি পালদের প্রধান জীবিকা শত বছর ধরে। গুড় তৈরিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও মটকির চাহিদা কমেনি বলেও জানান পীরগঞ্জের পালপাড়ার কুমাররা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
কেজেড/এএসআর