ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ফুলে ফু দিলে চরকি হয়ে ঘোরে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৭
ফুলে ফু দিলে চরকি হয়ে ঘোরে! ফুল চরকি হাতে উচ্ছ্বসিত হ্যাপী আক্তার। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

দুপুরের শেষ রোদটুকু তখন লুকোচুরি খেলছে রাজধানীর ধানমন্ডির ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাশে থাকা বড় আমগাছটার সবুজ হলুদ পাতার সঙ্গে। পাশেই দাঁড়ানো রাজশাহীর মধ্যবয়সী ফেরিওয়ালা ফারুক ইসলাম। হাতে তার রঙ-বেরঙের ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা সাদা, কোনোটা আবার লাল-হলুদের মিশ্রণে। তবে সব বাহারি ফুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা নজর কাড়লো, তা হলো চরকি।

লাল, সবুজ, হলুদ আর বেগুনি রঙের বড় বড় ফুলের চরকিগুলো যেন নিজগুনে টেনে নিচ্ছে দুপুরের রোদের আভাটুকু। দুষ্টু-মিষ্টি হাওয়ায় ঘুরছে নিজের সবটুকু অস্তিত্ব জানান দিয়ে।

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যেন নিজেরাই মগ্ন নিজেদের গল্পে। তাতে কতো ইতিহাস, কতো অজানা কাহিনী। এই ফুলে ফু দিলেই চরকি হয়ে ঘোরে।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরক্যাম্পাসের সামনেই রিকশা থেকে নামলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হ্যাপী আক্তার। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে ক্যাম্পাসের পথে পা বাড়াতেই তার চোখে পড়লো রঙিন চরকিগুলো। সঙ্গে থাকা বান্ধবীর হাতটা তিনি শক্ত করে চেপে ধরে মুগ্ধতায় উচ্চারণ করলেন, ‘ওয়াও, চরকি’! 

এরপর বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেলেন। হাতে তুলে নিলেন রঙিন কাগজের ফুলগুলো। এরপর তাতে ফুঁ দিয়েই দৃষ্টি আবদ্ধ করলেন তার ঘূর্ণনে। মুখে ফুটে উঠলো শৈশবের হাসি। আহা কতোদিন পর এই চরকি খেলা।

কথা হয় বাংলানিউজের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামে মেলা হলে আর কিছু কিনতাম বা না কিনতাম, একটা চরকি কেনা ছিলো অপরিহার্য। চার রঙা রঙিন কাগজ দিয়ে বড় একটি ফুল তৈরি করা। সেটা আবার লাগানো একটি লম্বা কাঠির মাথায়। কাঠির একমাথা হাতে ধরে অন্যদিকে লাগানো ফুলে একটু ফুঁ দিলেই হলো! এই যে তার  ঘোরা শুরু, এর যেন আর শেষ নেই। ’এই ফুলে ফু দিলেই চরকি হয়ে ঘোরে।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর‘মাঝে মাঝে কিছু ফেরিওয়ালাও আসতেন চরকি নিয়ে। শরতের শেষ বিকেলগুলোতে তখন চার-পাঁচ জন বন্ধু মিলে চরকি হাতে রাস্তায় দৌঁড়াতাম। প্রতিযোগিতা ছিলো কোন বন্ধুর হাতের চরকিটা বেশি দ্রুত ঘোরে। কিন্তু ঢাকায় তো এগুলোর আর দেখা পাওয়াই যায় না। শুধু পহেলা বৈশাখেই যা একটু। ’--শৈশবের স্মৃতি হাতড়ান হ্যাপী।

কথা হয় চরকির ফেরিওয়ালা ফারুক ইসলামের সঙ্গে, তবে নিজের ছবি তুলতে দিলেন না তিনি। বাংলানিউজকে বললেন, ‘গ্রামের শিশুদের শৈশবের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে এই চরকি। হ্যাপী আপুর মতো এমন হাজারো গল্প যেন গাঁথা রয়েছে। তবে শহরে তো এগুলো পাওয়াই যায় না। তাই ঘুরে ঘুরে দামি সব খেলনার ভিড়ে এটা কেউ একটু মনে করানোর চেষ্টা করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।