সন্ধ্যার মৃদু আলোতে দেখা গেল মাটিতে বসে থাকা এক ব্যক্তির চারপাশে জড়ো হয়েছে ক্ষুধার্ত পাঁচটি হায়না। হায়নাগুলো আনন্দে তাদের বাদুড় সদৃশ কান ঝাড়া দিচ্ছে, দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে তাদের চোয়ালের ধারালো দাঁত।
ক্ষুধার্ত হায়নাগুলো যে ব্যক্তিটির চারপাশে জড়ো হয়েছে তার নাম আব্বাস ইউসুফ। অন্যতম হিংস্র প্রাণী হিসেবে পরিচিত এই হায়নাগুলোকে দেখে মোটেই ঘাবড়াচ্ছেন না তিনি। বরং মৃদু স্বরে হায়নাকে কাছে আসার জন্য ডাকছেন। একটু পর ঝুড়ি থেকে কিছু খাবার এগিয়ে দেন হায়নার উদ্দেশে। আজব হায়নাগুলো আব্বাসকে আক্রমণ করার বদলে তার হাত থেকেই খেয়ে নিতে থাকে খাবারগুলো।
ছোট্ট শহর হারারের বাসিন্দাদের কাছে আব্বাস হায়নামানব হিসেবে পরিচিত। আব্বাসের বাবা ইউসুফ সালেহ হায়নার আক্রমণের হাত থেকে গৃহপালিত পশুগুলোকে বাঁচাতে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার হায়নাদের দিতে শুরু করেন। পদ্ধতিটি বেশ কাজে লাগে। আর তা গত ৫০ বছর ধরে আব্বাসদের পারিবারিক প্রথা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শুধু আব্বাস নয়, পুরো শহরের চিত্রই এরকম। শহরের কেউ এই হায়নাদের ভয় পায় না। হায়নারাও আক্রমণ করে না শহরের বাসিন্দাদের। মানুষ এবং হায়নার এরকম অসাধারণ সহাবস্থান শহরটিকে পর্যটকদের কাছে করে তুলেছে জনপ্রিয়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ফটোগ্রাফার ও প্রতিবেদক ব্রায়ান লেহম্যান জানান, ছোট্ট এই শহরের বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে হায়নাদের সাথে একসাথে বসবাস করে আসছে। আগে প্রায়ই শহরের মানুষ বিশেষ করে শিশুরা হায়নাদের আক্রমণের শিকার হতো। এর থেকে সমাধান পেতে শহরের দেয়াল ফুটো করে হায়নাদের উদ্দেশে উচ্ছিষ্ট খাবার রেখে আসতে শুরু করে বাসিন্দারা। ফলস্বরূপ গত ২০০ বছরে একবারও কেউ আক্রমণের শিকার হয়নি। এমনকি শহরের শিশুরাও হায়না দেখে আর ভয় পায় না।
ব্রায়ান লেহম্যান এক রাতে আব্বাসের সাথে ঘুরে আসেন হায়নার গুহা থেকে। তিনি জানান, হায়নার গুহায় যাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে অনেক দ্বিধায় ছিলেন তিনি। কিন্তু হায়নাদের সাথে আব্বাসের বোঝাপড়া অবাক করার মতো। আব্বাসকে মেরে ফেলতে এদের দুই মিনিটও সময় লাগবে না। কিন্তু এর বদলে হায়নার গুহায় ঢুকে নিজের মতো ঘুরে বেড়ায় আব্বাস।
লেহম্যান যোগ করেন, হায়নারা কুৎসিত প্রাণী এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর ভেতরেও একটা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যা এই শহরে না এলে বোঝা সম্ভব না।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এনএইচটি/এমজেএফ