সাউথ ইন্ডিয়ান ভাষায় বলে ‘গোপুরা’ মানে স্মারক মিনার। শব্দটি এসেছে গোপুরাম থেকে।
দ্বিতীয় ঘেরাওয়ের কেন্দ্রে মূল মন্দির। এটিও উত্তরমুখী। এর দু’টি মূল অংশের একটি ‘গর্ভগৃহ’ এবং অন্যটি ‘অন্তরাল’। এদেরকে ঘিরে রয়েছে ‘প্রদক্ষিণ’, ‘মুখ মণ্ডপ’ ও ‘পিলার করিডোর’।
করিডোরের পিলারগুলোর জন্যই মূলত মন্দিরটি বেশি রহস্যময়, আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, মন্দিরের অধিকাংশ পিলারগুলো ঝুলন্ত। সাধারণত বাড়ি বানানোর সময় আমরা যেটি দেখি, পিলারগুলো উপর ও নিচে মজবুত করে যুক্ত করা হয়। বাড়ি বা ভবন দাঁড়িয়ে থাকে মূলত পিলারের জোরেই।
এখানে ঠিক তার উল্টো। দেখে মনে হবে, পিলারগুলো কোনোরকমে ঝুলছে। নিচে বেশ খানিকটা ফাঁকা। কোনো কোনো পূণ্যার্থীকে এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে শাড়ি, কাপড় বা ধূপকাঠি আনা-নেওয়া করতে দেখা গেলো।
মন্দিরের পুরোহিত বললেন, এভাবে শাড়ি, কাপড় বা ধূপকাঠি আনা-নেওয়ার মাধ্যমে তারা মানত করেন। কোনোরকম বাধা ছাড়া আনা-নেওয়া করা গেলে মানত পূরণ হয়।
মুখমণ্ডপের ডানদিকে পূর্বমুখো বিষ্ণু, এর দক্ষিণে মুখ করে শিব এবং পশ্চিমমুখী করে পার্বতী অর্থাৎ দূর্গামন্দির। প্রদক্ষিণের পশ্চিম দিকে গর্ভগৃহ ও অন্তরাল ঘেরা বীরভদ্র মন্দির। এর মধ্যেও রয়েছি তিনটি মন্দির- রামলিঙ্গ, ভদ্রকালী ও হনুমানলিঙ্গ।
মন্দিরগুলোতে থালা হাতে ভক্তদের ভিড়। থালায় নারকেল, ধূপকাঠি, কাপড়, ফলমূল, সিঁদুর প্রভৃতি পূজার অর্ঘ্য। পুরোহিতরা মন্ত্র পড়ে দেবতার পায়ে থালা ছুঁইয়ে হাতে দিয়ে দিচ্ছেন প্রসাদ।
ফিরে আসি ঝুলন্ত পিলারে। দ্রাবিড়িয়ান স্থাপত্যে বানানো মন্দিরের বেশিরভাগ পিলারগুলো মহামণ্ডপের করিডোরজুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলা ভালো, ঝুলে রয়েছে। পিলারগুলোতে হাজারো দেব-দেবীর খোদাই করা প্রতিকৃতি। এর মধ্যে টুম্বুরা, ব্রহ্মা, নারদ, রম্ভা, পদ্মিনী, নটরাজ, গণেশ, নান্দী, লক্ষ্মী, নরসিংহ উল্লেখযোগ্য। মুখমণ্ডপ ও মহামণ্ডপের সিলিংগুলো বিজয়নগর আমলের চিত্রকর্মে অলঙ্কৃত।
আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, মন্দিরের প্রায় পুরোটা অংশ ‘কুর্মাসাইলাম’ নামে একটি পাথুরে পাহাড় কেটে করা। তেলেগু কুর্মাসাইলাম শব্দের অর্থ কচ্ছপ পাহাড়।
১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন অচ্যুতারায়ার সাব-অর্ডিনেট অফিসার বীরুপান্নার তত্ত্বাবধানে মন্দিরটির কাজ শুরু হয়। তার ভাই বীরান্নারও অবদান রয়েছে মন্দির নির্মাণে। তারা দু’জনই সেসময় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধীনে কাজ করতেন।
তবে পুরাণ মতে, এ মন্দিরের গোড়াপত্তন নাকি আরও আগে। মহর্ষি অগস্ত্য এটি নির্মাণ করেছিলেন।
আবার স্কন্ধপুরাণ মতে, মন্দিরটি শিবের অন্যতম একটি দিব্যক্ষেত্র। দিব্যক্ষেত্র হচ্ছে শিবের আরাধনার তীর্থস্থান।
লেপাকশি অর্থাৎ যেখানে বীরভদ্র মন্দিরের ভৌগলিক অবস্থান, সেটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অনন্তুপুর জেলার একটি গ্রাম। এ রাজ্যের দু’টো রাজধানী- হায়দ্রাবাদ ও অমরাবতী। হায়দ্রাবাদ যদিও তেলেঙ্গানা রাজ্যেরও রাজধানী। বলে রাখা ভালো, তেলেঙ্গানা ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যেই ছিলো।
কাজেই লেপাকশি যাওয়া যাবে অমরাবতী ও হায়দ্রাবাদ দুই রাজধানী শহর থেকেই। হায়দ্রাবাদ থেকে ৪৮৫ কিমি এবং অমরাবতী থেকে লেপাকশির দূরত্ব ৫৭৩ কিমি। যাওয়া যাবে ট্রেন, বাস বা কার ভাড়া করে।
তবে অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রাম হলেও লেপাকশি যাওয়া সবচেয়ে সহজ ব্যাঙ্গালোর শহর থেকে। এখান থেকে দূরত্ব মাত্র ১২০ কিমি। ব্যাঙ্গালোর যদিও কর্ণাটকা রাজ্যের রাজধানী।
তবে ব্যাঙ্গালোর থেকে লেপাকশি ট্রেন-বাসে যাওয়াটা বেশ হ্যাপাই হবে। সহজ হবে কার ভাড়া করে গেলে। শহর থেকে বিভিন্ন রেন্টাল কার বা ওলা-উবারে যাওয়া-আসা যাবে। সময় লাগবে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টা। গাড়ি হিসেবে প্রতি কিমি নয় থেকে সর্বোচ্চ বারো রুপি পড়বে। ওলা-উবার ক্যাবে কোনো ওয়েটিং চার্জ নেই। সেই হিসেবে সর্বনিম্ন ২৩শ রুপিতে ঘুরে আসা যাবে লেপাকশি গ্রাম।
** সীতাকে বাঁচাতে মৃত জটায়ুর শরীর যেখানে পড়েছিল
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এসএনএস