কোরআন শরীফের ১৬ পারায় ২০ নম্বর সূরার নাম হচ্ছে ত্বহা। আবার হয়রত নবী করিম (স:) এর নাম হচ্ছে ত্বহা।
কারো কারো মতে, শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রি.) এই ত্রিতল অট্টলিকা শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ (র:) এর জন্য নির্মাণ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মুর্শিদ শাহ সাহেবের সাক্ষাতে আসতেন তখন তার অস্থায়ী বসবাসের জন্য অট্টালিকাটি নির্মিত হয়েছিল।
ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন, তাহখানা অট্টলিকাটি প্রকৃত পক্ষে শাহ নিয়ামত উল্লাহ (র:) সাহেবেরই। তবে কোনো কোনো সময় শাহ সুজা মুর্শিদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন, তখন কেন্দ্রীয় কক্ষটি ব্যবহার করতেন। তাহখানা ও মসজিদ একই সময় নির্মিত হয়েছিল বলে কথিত রয়েছে।
তাহখানার মূল প্রাসাদ উত্তর দক্ষিণে ১১৬ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১১৬ ফুট চওড়া ছিল। কিন্তু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চওড়া ৩৮ ফুট দেখা যায়। তাহখানার পূর্ব দিক হতে ৩১ ফুট পশ্চিমে একটি বিশাল আকৃতির কক্ষ ছিল। তাহখানার মধ্যস্থলে অবস্থিত এ কক্ষটি তিন তলা পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিল। এটির চারিদিকে দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য শোভা পেতো। কক্ষটির মধ্যাংশে পানির ফোয়ারা ছিল, আবার বৃষ্টির পানি নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে যেত।
কক্ষটির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল, এটি ছিল তাপ নিয়ন্ত্রিত। ফলে এ কক্ষের প্রভাবে প্রসাদের অন্যান্য কক্ষগুলোরও তাপও নিয়ন্ত্রিত হত। ভূমিকম্পের ফলে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে যে রুপ দেখতে পাওয়া যায় তা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংস্কারের ফল।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০০৪-০৫ সালে প্রাসাদটির সম্মুখ ভাগ অথ্যাৎ তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের পশ্চিম দিকে খনন করে ৭টি কক্ষের অস্তিত্ব পায়। এখানে পশ্চিম দিকের ভবনের উভয় পাশের বারান্দা ও ২টি সিঁড়ি ছাড়া ১৬টি কক্ষ রয়েছে।
ভবনটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি ইন্দারা রয়েছে। এটিকে ফাসিকাষ্ঠ গৃহ বলে অনেকে ধারণা করেন। এখানে শাহ সুজা অবস্থানকালে দাগি আসামি/বিপক্ষ সৈন্যদের মৃত্যুদণ্ড দিতেন। আবার অনেকের ধারণা, খাওয়ার পানি সরবরাহের জন্য এই ইন্দারা ব্যবহৃত হতো।
প্রাসাদের সর্ব উত্তরাংশে একটি কক্ষ রয়েছে যা ছিলো শাহ সাহেবের অন্ত:পুরবাসীনিদের জন্য নামাজের স্থান। পীর সাহেবের মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠিত হলে অন্দর মহলের নারীরা সমবেত হয়ে নামাজ ও ইবাদত বন্দেগি করতেন। আবার অনেক সূত্র থেকে জানা যায়, শাহ সাহেব নিজেই এখানে ইবাদতে মশগুল থাকতেন।
তাহখানার পাশেই মুঘল যুগের অনুপম স্থাপত্য তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তাহখানা জামে মসজিদ। এ মসজিদটি হয়রত সৈয়দ শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ (মৃত্যু ১৬৬৪ অথবা ১৬৬৯ খ্রি.) কোন এক সময় নির্মাণ করেন।
জামে মসজিদের সম্মুখে সুবিশাল দীঘি রয়েছে। যাকে তালাবে দাফেউল বালা বা রোগ মুক্তির পুকুর বলা হয়ে থাকে। এটিকে কেন্দ্র করে বহু উপকথা প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, শাহ নিয়ামত উল্লাহ ফিরোজপুরে অবস্থানকালে লোকমুখে শুনতে পান যে, এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি পুষ্করিণী রয়েছে। যার পানি এতো বেশি বিষাক্ত যে, পান করার সঙ্গে সঙ্গে যে কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পরে তিনি সদলবলে সেখানে আগমন করে পুকুরের এক গ্লাস পানি উঠিয়ে অর্ধেক পান করে আর অর্ধেক পুকুরে নিক্ষেপ করেন। তাতে পুকুরের পানি বিষাক্ততা দূর হয়ে যায় এবং সেই থেকে এই পুকুরের পানি পান করলে মানুষের রোগ মুক্তি হতে থাকে।
দীঘির পাড়ে উত্তর-দক্ষিণমুখি একটি মাজার রয়েছে। যেখানে শাহ নিয়ামত উল্লাহর কবর। এর সামনে অনেকগুলো সমাধি লক্ষ করা যায়। মাজারের পশ্চিম পাশে প্রাচীরের বাইরে একটি কবর স্থান রয়েছে। এই কবরস্থানে শুধু নারীদের সামাধিস্থ করা হত বলে একে মহিলা কবরস্থান বলা হয়। এখানকার অনেক কবর চাষাবাদের কারণে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধানো কবরগুলো প্রায় ধ্বংসের পথে।
এ কবরস্থানের প্রাচীন ইট নিয়ে তাহখানার আশপাশের লোকজন তাদের গরুর ঘর ও বসবাসের ঘর নির্মাণ করেছে বলে গৌড় অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দায়িত্বে থাকা এক উদ্ধর্তন কর্মকতা বাংলানিউজকে জানান। সরেজমিনে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসব স্থাপত্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মুসলিম রাজণ্যবর্গ ও ওলী আল্লাহদের ইতিহাস। এই ইতিহাস সংরক্ষণের জোর দাবি জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা।
এছাড়া তাহখানায় প্রবেশে যে রাস্তা রয়েছে তার বেহাল দশা। দীর্ঘদিন কোন সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ঐহিত্যবাহী তাহখানায় রাতে আলোরও কোন ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
জেডএম/জেডএম