একদিন মুহাম্মাদ কুলির খেয়াল হলো, তার সাম্রাজ্য তথা বর্তমান হায়দ্রাবাদের ঠিক মাঝখানে একটি মসজিদ বানাবেন। এটি হবে সবদিক দিয়ে অনন্য।
সেই ইট নিয়েও তার খ্যাপামো ছিলো! মাটি আনালেন পবিত্র মক্কা নগরী থেকে। বলাই বাহুল্য, হজরত মোহাম্মদ (স.) এর জন্ম সেখানে। মক্কা থেকে আনা মাটি দিয়ে বানানো হলো ইট, সেই ইট দিয়ে উঠলো মসজিদের ১৫টি খিলান। মূল মসজিদটি এই খিলানগুলোতে ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৪শ বছর ধরে। মক্কার মাটির তৈরি ইট দিয়ে খিলান বানানো বলে নাম, মক্কা মসজিদ।
এই পনেরটি খিলান তিন সারিতে পাঁচটি করে সাজানো। অন্যদিকের একটি মেহরাবের সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদের প্রধান স্থাপনা দুইটি বিশাল অষ্টাভূজাকৃতির কলাম দ্বারা সংগঠিত। যার প্রত্যেকটি তৈরি করা হয় একটিমাত্র গ্রানাইটের টুকরা দিয়ে। এই মসজিদটির সঙ্গে চারমিনার ও গোলকন্ডা দুর্গের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মসজিদের মূল ভবনের ছাদের চার দেয়াল গ্রানাইট ব্লক দিয়ে বহিরাবরণ দেওয়া। মূল মসজিদের বাইরে প্রশস্ত বারান্দা, উপরে টিনের ছাউনি। বারান্দার সামনে এবং মূল মসজিদের উত্তরদিকে লেকের মতো দু’টি ওজু করার স্থান। এছাড়া অবশ্য আলাদা ওজুখানা রয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, মুহাম্মাদ কুলি সবদিক থেকে অনন্য মসজিদ গড়তে চেয়েছিলেন। এজন্য তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় ২২০ দৈর্ঘ্য ও ১৮০ ফুট প্রস্থের মসজিদ বানানোর পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি। এর উচ্চতা ৭৫ ফুট। কুতুব শাহী ও আসাফ জাহী আমলের সিগনেচার স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে ওঠে মক্কা মসজিদ।
ফরাসি পরিব্রাজক জ্যাঁ ব্যাপ্টিস্ট টেভমিয়ের ট্রাভেলগ অনুযায়ী, মক্কা মসজিদের কাজ ১৬৯৪ সালে শেষ হলেও; এর কাজ, পরিকল্পনা, নকশা, মক্কা থেকে মাটি আনা প্রভৃতি কাজ শুরু হয় আরও ৫০ বছর আগে থেকে। তবে মসজিদ তৈরিতে সময় লাগে পাঁচ বছর।
এছাড়া ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে জানা যায়, মসজিদটি তৈরিতে আট হাজারেরও বেশি শ্রমিক অংশ নেন। মোহাম্মাদ কুলি নিজে এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব হায়দ্রাবাদ জয়ের পর এই মসজিদের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন।
মূল মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে নিজাম আসাফ জাহী ও তার পরিবারের সদস্যদের সমাধি। মূল প্রবেশ দরজার বামদিকের দালানে মার্বেল পাথরে মোড়া সমাধিগুলো রয়েছে। এই স্থাপনাটি তৈরি করা হয় নিজাম আসাফ জাহীর শাসনামলে।
তেলেঙ্গানা রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক এ নিদর্শনটি ভারতের সবচেয়ে বড় ও পুরনো মসজিদগুলোর একটি। পাশাপাশি মক্কার মাটি মসজিদটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এসব মিলে মক্কা মসজিদ পেয়েছে অন্যরকম আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। একইসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করা ছাড়াও রোজ মসজিদ পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন ধর্মালম্বী হাজারো মানুষ। মসজিদের স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে হাজারো কবুতরের পদচারণা ও ওড়াউড়ি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। অনেকে চাল বা গম খেতে দেন।
মুসলিম পূণ্যার্থীদের বিশ্বাস, পবিত্র মনে মক্কা মসজিদে নামাজ আদায় ও কোরান তেলাওয়াত করে প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক তা সহজে কবুল করেন। এজন্য রোজই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা মানুষ প্রার্থনা করতে ছুটে আসে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, মসজিদের একটি নির্দিষ্ট অংশে নারীরাও নামাজ আদায় এবং প্রার্থনা করতে পারেন।
মক্কা মসজিদের ভৌগলিক অবস্থান হায়দ্রাবাদ শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে। শহরের যে কোনো স্থান থেকে ক্যাব ভাড়া করে যাওয়া যাবে। সহজে যাওয়া যাবে ট্রেনে। এজন্য নামতে হবে হায়দ্রাবাদ স্টেশনে। এটি নামপল্লী স্টেশন নামেও পরিচিত। স্টেশন থেকে মসজিদ প্রায় পাঁচ কিমি। যাওয়া যাবে ক্যাব বা অটোরিকশায়।
মক্কা মসজিদ ছাড়াও ঘোরা যাবে ঐতিহাসিক আরও বেশ কয়েকটি জায়গায়। ঠিক পাশেই রয়েছে- চার মিনার, লাদ বাজার, চৌমহল্লা প্যালেস, গোলকন্ডা ফোর্ট প্রভৃতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৭
এসএনএস/জেডএম