ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

৫ টাকায় শিক্ষার্থীদের পেটপুরে খাওয়ায় অন্নপূর্ণ!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
৫ টাকায় শিক্ষার্থীদের পেটপুরে খাওয়ায় অন্নপূর্ণ! পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার পাওয়ায় খুশি স্কুলশিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: সন্তানকে স্কুলে পাঠালে বিরতির সময় সে কী খাবে, তা নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানকে এক্ষেত্রে তেমন সমস্যায় পড়তে না হলেও অস্বচ্ছল ঘরের শিশুদের অনেক সময় ক্ষুধা নিয়েই ক্লাস শেষ করতে হয়। সেই শিশুরাই যদি স্কুলের ফাঁকে দুপুরে মাত্র পাঁচ টাকায় পেটপুরে খাবার খেতে পারে, এর চেয়ে দারুণ বিষয় আর কী হতে পারে?

 

স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য এমন দারুণ আয়োজন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকার ‘অন্নপূর্ণ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’র। গত তিন বছর ধরে মাত্র পাঁচ টাকার এ ‘স্টুডেন্ট প্যাকেজ’ চালিয়ে আসছে তারা।

এই প্যাকেজে সবজি ও ডাল দিয়ে এক বেলা সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে শিক্ষার্থীরা।

দেখতে চাকচিক্যময় না হলেও চমৎকার এ খাবার হোটেলের মালিক বিপ্লব সরকার। বাড়ি বাঘার আড়ানী পৌর এলাকার পূর্বপাড়া এলাকায়। আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই হোটেলে পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার খেতে পারেন। তার বাবা শ্যামল সরকারই মূলত এ হোটেলের মালিক। তার বাবা বিকেলে হোটেলে বসেন। আর তিনি আসার আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপ্লব হোটেল পরিচালনা করেন।

এক প্লেট ভাতের সঙ্গে থাকে ডাল-সবজি।  ছবি: বাংলানিউজ

আড়ানী বাজারের তালতলায় বড়াল নদের পাড়ে বিপ্লব সরকারের ‘অন্নপূর্ণ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে’ গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে টিন দিয়ে তৈরি হোটেলটি। ভেতরে জনা পঞ্চাশেক স্কুলশিক্ষার্থী খেতে বসেছে। হোটেলে সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ প্লেটে ভাত-তরকারি ঢেলে দিচ্ছেন, কেউ শিক্ষার্থীদের সামনে খাবার-পানি এগিয়ে দিচ্ছেন। অন্য কাস্টমারদের চেয়ে দুপুরের টিফিনের সময়ে শিক্ষার্থীদেরই অগ্রাধিকার থাকে।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানার পর সেখানে একদিন গিয়েছিলাম। সবকিছু দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর পুরো বিষয়টি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় ছোট্ট একটি অবস্থান থেকে বিপ্লব সরকার যেভাবে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি খুবই মহতী উদ্যোগ।

দুপুরে ব্যস্ত সময় পার করেন এ রেস্টেুরেন্টের কর্মীরা।  ছবি: বাংলানিউজ

পাঁচ টাকায় আহারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে স্কুলে পড়তে আসে। দুপুরের খাবারের জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে না। আবার অনেকের টাকা দিয়ে দুপুরের খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্যও থাকে না। এছাড়া যাদের সামর্থ্য আছে তারা অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাবার কিনে খায়। শিক্ষার্থীদের অল্প টাকায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাওয়ানোর চিন্তা থেকেই পাঁচ টাকায় আহারের ব্যবস্থা করছি।

তবে এখানে নামমাত্র মূল্যে দুপুরের খাবার খেতে রয়েছে বিপ্লব সরকারের দু’টি শর্ত।

কারণ উল্লেখ করে বিপ্লব সরকার বলেন, শর্ত দু’টি তেমন কঠিন নয়। তবে যুক্তিযুক্ত। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্কুল পোশাক পরিধান করতে হবে। আর খাবার আগে বা পরে বাইরের দোকানে অন্য কোনো অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার খাওয়া যাবে না।

দুপুরে রেস্টুরেন্টে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।  ছবি: বাংলানিউজ

তার দুই শর্তেই খুশি স্কুলশিক্ষার্থীরা।

স্কুলশিক্ষার্থীদের পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার পরিবেশনের বিষয়ে বিপ্লব সরকার বলেন, আমি দেখেছি, স্কুল শিক্ষার্থীরা সাধারণত এক প্লেটের বেশি ভাত খেতে পারে না। তাই তাদের স্বল্প মূল্যের এ প্যাকেজে এক প্লেট ভাত থাকে। সেই সঙ্গে থাকে ডাল আর সবজি। এ প্যাকেজ পাঁচ টাকায় দেওয়া হয়। খেতে বসে স্কুলশিক্ষার্থীরা যেন ভাত-সবজি নষ্ট না করে সেদিক লক্ষ্য রাখা হয়। স্বাস্থ্যরক্ষায় ভাতের সঙ্গে অবশ্যই সবজি খাওয়া নিয়ম। পুষ্টির কথা মাথায় রেখেই এ ব্যবস্থা।

কেন এমন উদ্যোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, কোমলমতি শিশুদের একবেলা খাওয়াতে পেরে মনে আনন্দ পাই। যখন তারা স্কুল থেকে হৈ-হুল্লোড় করে হোটেলে খেতে আসে এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তাদের কলরবে দুপুরে রেস্টুরেন্টে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

রেস্টেুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে চাইলে মানতে হবে দু’টি শর্ত! ছবি: বাংলানিউজ

‘খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। বাবা-মায়ের অনেক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। লেখাপড়া না করে যে ভুল করেছি, এখন বুঝতে পারছি। যে বাচ্চাগুলো পড়ালেখা করছে তারা যেন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে সেজন্য নিজের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এসএস/এইচএডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।