ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গল্প

রম্যগল্প

লেডিস টেইলার্স | পলাশ মাহবুব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
লেডিস টেইলার্স | পলাশ মাহবুব

মানুষ এমনিতেই বিচিত্র।
ফেসবুকের মানুষ আরও বিচিত্র।


উদ্ভট আর অদ্ভুত সব মানুষের কাছ থেকে বন্ধুত্বের আহ্বান আসে ফেসবুকে।
বিচিত্র তাদের নাম। বিচিত্র ছবি। ভাবনা-চিন্তাও বিচিত্র।
কয়েকদিন আগে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসলো।  
প্রোফাইলে নাম ‘লেডিস টেইলার্স’।  
প্রোফাইলে একটা হা করা কাঁচির ছবি।
নাম লেডিস টেইলার্স। কিন্তু কাপড়-চোপড়ের কোনো ছবি নেই।
অ্যাকসেপ্ট না করে ইনবক্সে লিখলাম- 
জামা-কাপড় কোথায়?
শো রুমে।  
জবাব দিলো লেডিস টেইলার্স।
ও আচ্ছা। তা এটা কি গোডাউন নাকি?
খিক খিক। কি যে বলেন।
প্রশ্ন শুনে হাসে লেডিস টেইলার্স।
শোনেন, ফেসবুক শো ডাউনের জায়গা। গোডাউনের না। আপনি ভুল পথে হাঁটছেন।
হুমম। বুঝছি। এইবার অ্যাড করেন।
লেডিস টেইলার্স তো আমার দরকার নেই। অ্যাড করে কী হবে? জেন্টস টেইলার্স হলে না হয় ভেবে দেখা যেতো।
আপনার না লাগুক। ভাবি আছে না?
জানতে চায় অপর প্রান্ত থেকে।
ফেসবুকে অনেক ভাবি আর আপু আছে। রিকোয়েস্ট পাঠানোর সময় ভাইদের বাদ দিয়ে দেখে-শুনে আপু-ভাবিদের পাঠান। আপনার কাজে লাগবে। আর আমাদেরও সময় বাঁচবে।
এ কথার পর টেইলর মাস্টারের আর কোনো জবাব নেই।  
খুব সম্ভবত সময় নষ্ট না করে ভাবি-আপুদের খুঁজতে লেগে গেছে।

‘প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে’ নামে একজন রিকোয়েস্ট পাঠালেন কিছুদিন আগে।
সঙ্গে ইনবক্সে দু’টো আবেগী লাইন।
গ্রামের ছেলে বলে অবহেলা করবেন না। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন।
নিজে গ্রামে বড় হতে পারিনি। তাই গ্রামের প্রতি ভালোলাগা অন্যরকম। বুকটা হু হু করে উঠলো।
গ্রামের ছেলের কাছে জানতে চাইলাম, গ্রামে কারেন্ট গেছে?
হুমম। সে তো কবেই।
টিভিতে মা-খালারা স্টার প্লাসের হিন্দি সিরিয়াল দেখে?
হুমম। শুধু মা-খালা না ইয়াং মেয়েরাও দেখে।
তাহলে তো গ্রাম আর প্রত্যন্ত নেই।
হুমম।
তাহলে নাম চেঞ্জ করেন।
কীসের? গ্রামের?
না। গ্রামের নাম রসুলপুরই থাক। আপনার প্রোফাইল নেইম চেঞ্জ করেন।
ক্যান?
কারেন্ট গেছে, ইন্টারনেট চালাচ্ছেন গ্রামে বসে। মেয়েরা হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো ড্রেস বানাচ্ছে। এমন গ্রাম প্রত্যন্ত থাকে কী করে? আপনার গ্রাম তো ডিজিটাল গ্রামের প্রতিচ্ছবি।  
অপর প্রান্ত কিছুক্ষণ চুপ।
বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবেন কিনা বলুন।
হাত তো আপনিই বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার কাজ হচ্ছে সে হাত ধরা।
তাইলে ধরেন।
ধরবো। তার আগে আপনি নাম বদলে আসল নামে আসুন। যে নামে বাবা-মা আপনাকে চেনে।
অপর প্রান্ত চুপ।
হয়তো মা-বাবার দেওয়া নামটা ভুলে গেছে।

‘জিপিএ ফাইভ বিথী’র প্রোফাইলে এক তামিল নায়িকার ছবি। সেই নায়িকা আবার বেশি ডায়েট করতে গিয়ে কয়েকদিন আগে মারা গেছেন।
উৎসাহবশত ইনবক্সে নক করলাম।
আছেন?
হুমম।
তিনি সাড়া দিলেন।
মরা মানুষের সাড়া পেয়ে মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ। আলাহর দুনিয়ায় সবই সম্ভব।  
জিপিএ পাওয়া বিথীকে লিখলাম, আপনার ছবিটা সুন্দর।
জবাব আসলো, থ্যাংকস। (বানান ভুলসহ)
আচ্ছা, তামিল ছবিতে কি ইদানিং জিপিএ সিস্টেম চালু হইছে নাকি? তা, কোন ছবির জন্য আপনি জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ম্যাডাম? গোল্ডেন নাকি নরমাল?
মানে?
মানে আপনি তামিল ছবির নায়িকা না? আপনাকে তো আমি ঠিক ঠিক চিনেছি। তবে, মারা যাওয়ার পরেও যে আপনি সাড়া দিচ্ছেন সেটা নিয়ে অবশ্য কিছুটা কনফিউজড। অবশ্য তামিল ছবির মতো তামিল ছবির নায়িকাদের পক্ষেও সবই সম্ভব।
অপর প্রান্তের জিপিএ ফাইভ পাওয়া মেয়েটা পুরো ফিউজ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বদলে গেলো তার প্রোফাইলের ছবি।  
এবার আরেক সুন্দরীর ছবি।  
বর্তমান সুন্দরী কোন ছবির নায়িকা সেটা এখনও ধরতে পারিনি।

‘আমি কলম চাষী’।
নামের মধ্যে একটা লেখক লেখক গন্ধ।  
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নক করলাম।  
কে ভাই আপনি?
আমি কলম চাষী।
বাহ। খুব ভালো। তা কয় বিঘা আছে আপনার?
জ্বি . . .?
রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ পড়েছেন?
না। আমি পড়ি না। আমি কলম চাষী।
ওও। আপনি শুধু চাষই করেন। বীজ-টিজ লাগান না।
না। হুদাই সময় নষ্ট।
হুমম। বুঝতে পেরেছি। তার মানে আপনি বর্গা চাষী।
আমি বুঝতে পারলেও ‘কলম চাষী’ খুব সম্ভবত আমার কথা ঠিক বুঝতে পারে না। সে ইনবক্সের খালি জমি অযথাই চাষ করতে থাকে, জবাবের অপেক্ষায়।
চাষাবাদে ইনবক্স ভরে যায়।  
কিন্তু কোনো ফল হয় না। কিছু চাষ শুধু আগাছাই জন্ম দেয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

গল্প এর সর্বশেষ