আমি প্রায় মূর্ছিতের মতো বেশুমার চেষ্টা চালিয়ে যাই মস্তিস্কে তার ছবিটা দিব্য করে তুলতে। পারি না, দূরবর্তী বৃষ্টির ছাঁটের মতো আবছা জেগে উঠে ফের উবে যায়।
শোভাকে এর আগে কখনও দেখিনি কিংবা সে আমাকে। শোভা আমার বন্ধু সাগরের গার্লফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড বলতে ঘোরতর রোমান্টিক সম্পর্ক তাদের মাঝে, মানে প্রেমিক-প্রেমিকা; যদিও আমি সবিস্তার জানি না কিছুই। সাগরের সঙ্গে আমার পরিচয়টা এই কিছুদিন আগে যে কিনা আঁজলা ভরা দরদ নিয়ে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে থেকেও দেশে ফেলা আসা সুখ আর গ্রাম নিয়ে নিত্য কবিতা লেখে; একেকটি কবিতা যেনো তার প্রাণের স্পন্দন।
বাংলাদেশি স্টুডেন্ট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি হিসাবে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পরপরই আমরা একে-অপরকে দারুণ কাছে টেনে নেই। ফেলে আসা দেশ নিয়ে নিরন্তর দুর্ভাবনা আর জাগতিক সুখ দুঃখ ছাড়া আমাদের তেমন কথা হয়নি। আমাদের এই বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে সাগর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম সেরা ছাত্র; সবাই বলে এই আমেরিকায় নিশ্চিতভাবে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এখন তো শুধু সফটওয়্যার ডেভেলপারদের যুগ। তার উপর শুধু সে ভালো ছাত্রই না, দারুণ চটপটে, স্মার্ট, এ যুগের জন্য পুরোপুরি ফিট।
শিল্পের প্রয়োজনে আমি আর সাগর আস্তে আস্তে কাছাকাছি হই! তথাপি আমি তার কাছে আমার একান্ত কষ্ট 'সুরভি'র কথা শেয়ার করিনি ঘুনাক্ষরেও। সাগর বুদ্ধিমান, সে আমাকে ছেনে ঘেঁটে দেখে; বুঝে কোথাও কোনো বিচ্যুতি ঘটেছে আমার। সে টের পায়, নিয়ত ভেতরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছি আমি।
সুরভির সঙ্গে আমার পরিচয়টাও হয়েছিল অনেকটা নিয়তিনির্দিষ্টভাবে। “বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কার কী পরিকল্পনা আর বিজয় দিবসের দাবি” এই নিয়ে একটা স্মরণিকা বের হবে, সব বাংলাদেশি ছাত্রের কাছে লেখা চেয়ে অনুরোধ করেছি। লেখা জমা পড়েছে তবে জেন্ডার ব্যালান্স হয়নি; বাংলাদেশি ছাত্রীদের লেখা নেই বললেই চলে। অগত্যা সব ছাত্রীদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে লেখা দেওয়ার অনুরোধ করি। সুরভির প্রকাশিত লেখাটা হয়ে গেলো সবচেয়ে আবেগময়ী আর জনপ্রিয়। আমাদের স্মরণিকার ফেসবুক পেজে তার লেখায় দারুণ সাড়া মিলল, সবাই খুব প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলো তাকে। অপ্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা পেয়ে সুরভি বেশ উচ্ছ্বসিত আর অনুপ্রাণিত। সে আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরার মতো করে ধন্যবাদ জানায়।
সুরভিরা নিউইয়র্কে এসেছে প্রায় সাত বছর হলো। তার বাবা বাংলাদেশের একজন বড় ব্যাংকার ছিলেন। ভদ্রলোক ডিভি ভিসায় নিউইয়র্কে এসে পেশাগতভাবে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নিউইয়র্কের লাখো বাংলাদেশিদের মতো তিনিও নেমে পড়েন সংসার নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রামে। নিউইয়র্কের বাস্তবতায় নানা রকমভাবে চেষ্টা করেও কোথাও কোন প্রোফেশনাল চাকরি পাননি, সবাই চায় আমেরিকায় পেশাদার কাজের অভিজ্ঞতা; অগত্যা ব্যাংকার হয়ে যান কোনো এক ইলেক্ট্রনিক্স স্টোরের সেলস অ্যাসোসিয়েট। সুরভি তার বাবা-মায়ের প্রতিদিনকার কাজে টিকে থাকার সংগ্রাম, বিষণ্ন মন আর অবসন্ন শরীর দেখে হাঁপিয়ে ওঠে। ব্যাংকের লোনে বাড়ি-গাড়ি হয়তো হয়েছে তবুও মানসিক তৃপ্তি নেই, কোথাও যেনো একটা হাহাকার; এক তুমুল মরীচিকার পেছনে পরিবারের সবাই বিপন্নের মতো ছুটে চলছে। একজন ব্যাংকার সারাজীবন কোনো এক স্টোরে বেচাবিক্রির কাজ করে যাবেন, তার এতোদিনকার বিদ্যা বৃথা যাবে, উচ্ছন্নে যাবে; মানসিকভাবে তিনি মেনে নিতে পারেননি! বাংলাদেশি সমাজে তিনি তার পরিচয় নিয়ে নিত্য সংকটে থাকেন। উন্নত ভবিষ্যৎ আর সামাজিক নিরাপত্তার আশায় আশায় আমেরিকায় থাকা- এটা একটা এমনই ফাঁদ, এমনই কুহক যে এর ভেতর থেকে বের হওয়ার উপায় জানা নাই কারও। উপায় একটা আছে, নতুন করে আবার ইউনিভার্সিটি যাওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতা আপগ্রেড করা, ইউনিভার্সিটি অধ্যাপকের সঙ্গে ল্যাবে ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়া। এই মাঝ বয়সে এসে তিনি আর সেই পথে পা বাড়ানোর সাহস করেননি। এক ধরনের বাজে অলসতা আর সংসারের টানাপোড়ন তাকে স্বপ্নহীন করে ফেলেছিল। আরেকটা উপায়ও তার সামনে ছিলো, পরাজিতের মতো স্বদেশে ফিরে যাওয়া। কতোবার যে আমেরিকার স্বপ্নসমুদয় ফেলে দিয়ে দেশে চলে যেতে চেয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। মেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ শঙ্কাতে সেটা আর সম্ভব হয়নি। বাবার এমন অবস্থা দেখে সুরভির আজীবন স্বপ্ন তাই একটা প্রোফেশনাল আর ব্রাইট ছেলে যে কিনা তাকে দিনশেষে প্রফুল্লচিত্তে তার সব আশা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ করে দেবে, নির্ভরতায় ভরিয়ে দেবে আর মানসিক অতৃপ্তির ছায়া পড়তে দেবে না কোথাও।
তো এই যে সুরভি মেয়েটা দারুণ চঞ্চল, দেখে মনে হবে হামিংবার্ড, সারাক্ষণ ফুর ফুর করে উড়ে বেড়াচ্ছে; তার চঞ্চলতা আর মায়াবী মুখে একটা জাদুকরী আকর্ষণ আর মোহ আছে। সেই আকর্ষণ এমনই, আমি দিনকে দিন তার জন্য অস্থির হয়ে পড়ি। সুরভিকে আমার অস্থিরতার কথা জানালে সে এমন মায়াহীনভাবে হেসে উঠেছিল তাতে আমি আরও বিভ্রান্ত হই। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আমি, আমার আর আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের জন্য পিএইচডি করতে এসেছি, কখনও ভাবিনি আমি এমনভাবে নিজেকে সমর্পণ করে দেবো কারও জন্য। আমার পিএইচডি মাথায় উঠতে থাকে। আমি সমাজবিদ্যায় একজন বিশেষজ্ঞ হতে এসে নিজের সমাজ বুঝিনি, ধীরে ধীরে নিজেই এখন দিশেহারা। সুরভির কী হয়, কোনো এক খেয়ালে আমাকে তার মনে ধরতে থাকে। আমি পুনরায় মগ্ন হই পড়াশুনায়, বেঁচে উঠি।
একদিন আমরা বসে আছি কফি শপের জনারণ্যে, জানালার পাশে। বাইরে পেজা তুলোর মতো ঝিরঝিরে তুষার পড়ছিল, মনে হচ্ছে আমাদের দেশের বরষার ছন্দময় বৃষ্টি। হঠাৎই সুরভি আমাকে হচকিয়ে দিয়ে প্রশ্নবোধক চোখে বলে, ‘তোমার কাছে কি একটা জিনিস চাইতে পারি’?
আমি খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠি, অবশ্যই, বল। সুরভির কণ্ঠে লজ্জা, ‘তুমি একটা কদম ফুল এনে দেবে আমাকে। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল আমাকেও কেউ একজন বরষার কদম ফুল এনে দেবে’। সে এমনভাবে মিনতি করে চাইল, আমার মনে হলো আমি এখনই পৃথিবীর সব কদম ফুল এনে দেই তাকে। পরক্ষণে আমার মন বিষণ্ন হয়ে যায়, এই তুষারপাতের মধ্যে এই শহরের কোথায় আমি কদম ফুল পাব; বড় জোর হলুদ বা সাদা লিলি ফুল পাওয়া যেতে পারে। আমি বিচলিত হয়ে বলি, ‘হলুদ লিলি ফুল বরং তোমার খোঁপায় বেশি ভালো মানাবে’। সুরভি কটমটিয়ে আমার দিকে তাকায়, আর আমার ভেতরটা হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে থাকে।
সুরভির ছোটবেলা কেটেছিল ব্রহ্মপুত্রের পাশে ময়মনসিংহে। নৈসর্গিক ব্রহ্মপুত্রের বুকে ভরা বরষায় লাল পাল তোলা নৌকায় ভ্রমণ সে আজও ভোলেনি। সেই আনন্দ নতুন করে খুঁজে পেতে আমাকে একদিন নিয়ে যায় বোস্টনের চার্লস নদীর ধারে। ছোট নৌকা যা-কিনা এখানে কায়াক নামে পরিচিত, ভাড়া করে ফেলে। আমাকে বিহ্বল করে দিয়ে তার শুভ্র তুলতুলে হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে ধরে, বলে, ‘চল, নৌকা ভ্রমণে যাই’। আমি মাফ করে দেওয়ার ভঙ্গিতে মিনমিনে গলায় বলি, ‘আমি তো ঢাকায় বড় হয়েছি, ভালো সাঁতার জানি না। তাছাড়া নৌকায় উঠলে আমার খালি ভয় হয় এই বুঝি আচমকা ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে’! আমি তাকে বিকল্প প্রস্তাব দেই, ‘নৌকায় না চড়ে, চল, আমরা বরং বড় লঞ্চ ট্যুরে যাই’। সুরভি নাছোড়বান্দা আমাকে অভয় দেয়, ‘আরে চল, কিচ্ছু হবে না; আমি তোমাকে সেভ করব’। অগত্যা বাধ্য ছেলের মতো আমরা নেমে পড়ি এই দূর দেশের নদীতে খানিকটা ব্রহ্মপুত্রের সন্ধানে। ঘরকুনো এই আমাকে এভাবেই সুরভি দিনকে দিন গল্পের ঝাঁপি দিয়ে, স্বপ্নের পসরা দিয়ে আউটগোয়িং করে তোলে।
এই আমি ইদানীং কী এক ব্যাকুলতার টানে বিষণ্নতায় তলিয়ে যেতে থাকি। এক তীব্র বিরহে বিপন্ন হয়ে ওঠে আমার চারপাশ। তারপর একদিন সাগর আমার হাত চেপে ধরে, বলে, ‘আবিদ, তোর কী হয়েছে, বলতো। সারাদিন তুই একা একা থাকিস। কোথাও যাস না, ইউনিভার্সিটিতেও কম দেখা যায়। মনে হচ্ছে তুই একাকীত্বকে উদযাপন করছিস’।
আমি ফিক করে হেসে ফেলি। হাসিটা বিভ্রান্ত করেছিল তাকে, বলি, ‘আ-রে না, আমি আসলে একাকীত্বকে উপভোগ করছি। একাকীত্ব মানুষকে ধ্যানমগ্ন করে, খাঁটি করে তুলে’।
সাগর খেঁকিয়ে উঠে, বুঝিবা আমার মিহিন কষ্ট তাকে স্পর্শ করে, ‘একাকীত্ব কি উপভোগের ব্যাপার হলো। এতো দুঃখ বিলাস কীসের জন্য। তোর পিএইচডি’র চেয়ে বেশি তো কিছু নেই এখন’।
আমি চুপ মেরে যাই। কী ঝিলমিল, কী টলমলে পদ্মের মতো আনন্দে নিনাদিত সময়গুলো ছিলো আমার আর সুরভির। আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আমাদের চাওয়া-পাওয়া ছিলো নির্মোহ। ভাইকিংদের মতো অতন্দ্র প্রহরী হয়ে তার আলতা রঙিন স্বপ্নের পাহারা দেওয়ার কথা ছিলো। আমাদের একসঙ্গে সংসারে বিলীন হওয়ার শপথ ছিলো।
সাগর বলে যেতে থাকে, ‘তুই আসলে সত্যি ভালো নেই। তোর কী হয়েছে বল; আমরা হয়তো উপকারে আসতে পারি! আর শোন একাকীত্ব মানুষকে ধীরে ধীরে হতাশাবাদী করে তোলে’।
আমি নিজেকে একটু খুলে দেই, বলি, একাকীত্ব নয় বরং ভালোবাসাহীনতা মানুষকে হতাশাবাদী করে তোলে। সুরভি আমাকে খুব শখ করে কাছে টেনেছিল তার মতো করে। আবার নিষ্ঠুরভাবে আমাকে ছুঁড়ে ফেলেছিল কোনোকিছু না বলে। আমার পৌনঃপুনিক অনুনয়-বিনয় তার কাছে কিছু মনে হয়নি। আমি আর প্রতিবাদ করিনি। আজ প্রায় দুই বছর তার কোনো খোঁজ নেই, বেমালুম হারিয়ে গেছে।
সাগর ঝিম মেরে থাকে কিছুক্ষণ, ফের বলে, ‘সম্পর্কের ভাঙা-গড়া হয়ই। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েরা কেন ও কীভাবে সম্পর্ক ভেঙে চলে যায়- এই বিষয়ে তোর ধারণা আসলে নেগেটিভ। ওটা বদলাতে হবে। এই সামারে চল, দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসি। মনটা হালকা হবে’।
আমি এই গতানুগতিক প্রস্তাবের মধ্যে কোনো মেরিট দেখি না, আমি প্রস্তাবটা খুব কৌতুক করে উড়িয়ে দেই। সাগর এক প্রকার নাছোড়বান্দা, আমাকে নানাভাবে পটাতে থাকে, বলে, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে, চল নিউইয়র্কে যাই! তোর সঙ্গে আমার হবু শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালিকা, আর বউকে পরিচয় করি দেই, সবাই একসঙ্গে মিলে নিউইয়র্ক বেড়াব; তারপর দেখা যাবে’।
আমি অতঃপর নির্বিকারভাবে রাজি হই কেননা আমার মনে হতে থাকে ‘মেয়েরা কেন ও কীভাবে সম্পর্ক ভেঙে চলে যায়’- এই বিষয়ে একজন নারী হিসেবে শোভার বিশ্লেষণটা হয়তো তীব্র আর কার্যকরী হবে, আর মেয়েদের সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টাতে দারুণ হেল্পফুল হতে পারে। সাগরের গার্লফ্রেন্ড শোভা নিউইয়র্কের বাসিন্দা, বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকে। ভালো স্কলারশিপ নিয়ে সে অন্য কোনো এক ইউনিভার্সিটি থেকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ক্রেডিট স্থানান্তর করেছে।
আজ আমার সেই ট্যুর, স্মৃতি বিতাড়িত করে মনের ক্ষত সারাতে সামান্য যুক্তিযুক্ত মলমের সন্ধান অথবা নতুন কোনো বন্ধু নির্মাণের। ট্যাক্সি চলছে বাতাস কাটিয়ে। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হই কিছুটা, চোখের পাতা ভারী যেনো স্বপ্নভারে ক্লান্ত। সারারাত কেন জানি অজানা উত্তেজনায় এক পলকও ঘুমাতে পারিনি। ট্যাক্সি বাস স্টেশনে পৌঁছালে আমরা কোনোরকম টিকিট কেটে উঠে পড়ি বাসে। নিউইয়র্কে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে যায়। শোভাদের বাসায় আমাদের এক সঙ্গে লাঞ্চ করার কথা, আমরা সময়মতো পৌঁছে কলিং বেল চাপি। শোভা দরজা খুলে দেয়। আমার চোখ আটকে যায়। যাকে দেখি সে আর কেউ নয়, সুরভি। মুহূর্তে চারপাশের কাকলি থেমে যায়, আমার অবাক চোখে অস্ফুট আর্তনাদ জমা হয়, আমি বিশ্বাস করতে চাই না এই দূর আমেরিকায়ও এই অভাবনীয় ঘটনা ঘটবে।
এই প্রথম আমার মনে হয়, আমার সম্মুখে যে সুরভি, সে সুরভি নয়; সে সত্যি সত্যি সাগরের শোভা। আমি আমার চেনা সুরভিকে হারাতে চাই না। নিঃশ্বাসে বিষাদ টানতে টানতে খাবার টেবিলে বসি। আমার খাওয়া এগোয় না। সুরভির মধ্যে কোনো বিকার নেই, যেনো সে আমাকে এই প্রথম দেখেছে। সাগরকেও জিজ্ঞাসা করি না সে কেন আমার কাছে শোভার একাডেমিক নাম বলেনি।
আরও পরে বিদায় বেলায় সুরভি আমাকে কোনো এক ফাঁকে ফিসফিস করে তার ভ্রু নাচিয়ে নির্দয়ভাবে বলেছিল, ‘ভালোবাসা হলে না-কি ভালবাসার নামে ডাকতে হয়। আমার ভেতরটা ছিঁড়ে যেতে চাইলো, আমি সাগরের কথা ভেবে কিছু বলি না। সুরভি কণ্ঠে বিষ ঢেলে তার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমাকে আরও বলেছিল, ‘সমাজবিদ্যা দিয়ে এই আমেরিকায় কী হয়’!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এসএনএস