ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গল্প

ঘুঘু ও জামুনি | গুলজার

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
ঘুঘু ও জামুনি | গুলজার ...

ঘুঘু প্রতিদিন উঁচু এবং ঘন পাতায় ঢাকা সারু গাছের মগডালে স্থির হয়ে নিঃশব্দে বসে থাকে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন সে এক ঝলক তার প্রিয়তমাকে দেখবে। ফল বাগানের দিক থেকে রঙিন পাখায় ভর করে তার প্রিয়তমা বিশাল আকাশের বুকে অমনোযোগীর মতো অলস ভঙ্গিতে উড়ে আসে। ঘুড়ির ভালোবাসার নীল দরিয়ায় সে ডুব দিয়েছে এবং চোখ ধাঁধানো চকমকে হলুদ ও রক্তবর্ণের জন্য প্রেমে পড়েছে। খোলা আকাশের বুকে গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে। ঘুড়ি কখনো উড়ে এদিকে আসে, কখনো ওদিকে যায়। আপনমনে সে ভাবে, সত্যি ওটা একটা পাখি।

মূল : গুলজার
অনুবাদ: ফজল হাসান

ঘুঘুর অনেকবার ইচ্ছে হয়েছিল সে রঙিন পাখা ঝাপটে ঘুড়ির চারপাশে ওড়াওড়ি করবে এবং তার কানের পাশে সুমধুর কণ্ঠে গাইবে, ‘তোমার দু’পাখার রং আলাদা... একটা উজ্জ্বল হলুদ এবং অন্যটি পাকা জামুন ফলের খোসার রঙের মতো, যা আমি দারুণ ভালোবাসি। আমি কি তোমাকে জামুন সম্বোধন করতে পারি? তুমি অত্যন্ত সুন্দর।

প্রতিবার তুমি পাখা মেলে খোলা হাওয়ার ভেসে যাও একটানে। ’ সে ভাবে, হয়তো তার ভীরুতা। একবার সে জামুনকে তার নীড়ে নিমন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে তার কাছ থেকে জামুন দূরে চলে যায়, হারিয়ে যায় বিশাল খোলা আকাশের বুকে– নীরবে, গভীর নিঃশব্দে। তখন কোন কিচিরমিচির ছিল না, কোন চিঁ চিঁ আওয়াজ ছিল না। যখনই তার সামনে সে ডানা ঝাপটায়, তখনই জামুনি দূরে উড়ে যায়। সেই সময় সে দূরত্ব বজায় রাখে এবং সম্মানজনক দূরে বসে তাকে অবলোকন করে। ‘তুমি যখন আত্ম-গরিমার ভঙ্গিতে ওড়াওড়ি করো, তখন তোমাকে দারুণ লাগে!’ এমন প্রশংসার পরও জামুনি কোন শব্দ উচ্চারণ করে না। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে কখন জামুনির কণ্ঠস্বর শুনবে– কিচিরমিচির করবে, আওয়াজ করবে চিঁ চিঁ–যে কোন ধরনের শব্দ।

জামুনির ভাবনা-চিন্তা তাকে সারাদিন তাড়িয়ে বেড়ায় এবং সে ফলের বাগানের উপর ওড়াওড়ি করে। সেদিক দিয়েই প্রতিদিন জামুনি উড়ে আসে। বাড়ির ছাদ, গাছপালা, এমনকি ঘুঘুর দৃষ্টি পুরো দিগন্ত তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ায়–যদি একপলকের জন্য সে তার দেখা পায়, হয়তো কোন গাছের ফাঁকে কিংবা বাড়ির ছাদে। সে এতই বিভোর থাকে যে, খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে যায়। ঠোঁটের ফাঁকে একটি বা দু’টি খাবারের দানা নিয়ে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওড়াওড়ি করে–যখন তার দেখা পাবে, তখন তাকে সে খাইয়ে দিবে। সে সুতার মতো দীর্ঘ শুকনো ঘাস সংগ্রহ করা শুরু করেছে। তাকে নিয়ে আসার জন্য সে একটা বাসা বানানোর কথা ভেবেছে। স্বজাতি এধরনের পুরুষরাই ঘর বানানোর কাজ করে থাকে। সে নিজেকে আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন করতে চায়, সবার চেয়ে উত্তম।

তারপর কয়েকদিন বাদে সে বুঝতে পরে যে, জামুনি কোন স্বাধীনভাবে ওড়াওড়ি করার মতো পাখি নয়। সে কারোর হাতে বন্দি। তার পেছনে উজ্জ্বল চকচকে সুতা বাঁধা, চিকন সুতা, অত্যন্ত ধারালো। ঝাটার মতো পাখার সঙ্গে বাঁধা, শুধু একবারই সুতা বাঁধা। ঘুঘুর ডানা থেকে কয়েকটি পালক খসে পড়ে এবং নিচের দিকে পড়তে থাকে। সেই পালক জামুনির গায়ে আঘাত করে। তখন সে বুঝতে পারে জামুনি আসলে মুক্ত পাখি নয়। তার সঙ্গে সুতা বাঁধা এবং নিচে কেউ একজন সেই সুতা টানে। নিশ্চয়ই সেই জন্য তার অঙ্গভঙ্গিতে জামুনি কোন সাড়া দেয়নি, এমনি কোন কিচিরমিচির কিংবা চিঁ চিঁ আওয়াজ করেনি। জামুনি হয়তো তার মনিবের ভয়ে ভীত।

জামুনির মালিক কিছুক্ষণ তাকে খোলা হাওয়ায় ওড়ার সুযোগ দেয়, কিন্তু যখন কোন পাখি তার আশেপাশে যায়, তখন মালিক সুতা ধরে টেনে নিচে নামিয়ে আনে। তারপর একদিকে ধরে তাকে খাঁচায় পুরে রাখে। ঘুঘু দেখেছে কেমন করে তাকে ধরে বন্দি করে, কিন্তু মালিক খাঁচাটা কোথায় রেখেছে। যদি সে জানতো... যদি খুঁজে পেত... নিদেন হলেও সে খাঁচা থেকে জামুনিকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করতো।

সেদিনও ঘুঘু দীর্ঘ এবং ঘন পাতায় ঢাকা সারু গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে বসেছিল। একসময় সে আকাশের গায়ে মেঘ ঘনীভূত হতে দেখেছে। নিঃশব্দে খণ্ড খণ্ড মেঘ জড়ো হচ্ছিল। সে জানতো যে, বৃষ্টি হয়ে নেমে আসার আগে মেঘ সব সময় উদর থেকে বাতাস উদগিরণ করে। তারপর থেকে বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। তখন এমন কোন পাখি নেই যে প্রচণ্ড বাতাসে ডানা মেলে উড়তে সাহস করে–কাকের মতো শক্ত পালকের কোন পাখিও না। তার জামুনিও ঝড়ো বাতাসে নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখতে পারবে না। তার গড়ন খুবই জটিল। সে ডানা মেলে দিয়ে ছাদের দিকে নামতে থাকে এবং ঝড়ো বাতাসের মধ্যে নিজেকে সামাল দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। বাতাস ক্রমশ আরো প্রচণ্ড গতি সঞ্চয় করতে থাকে এবং বাতাসের তোড়ে দরজা-জানালার পাল্লা ধাক্কা খেতে থাকে। ঘুড়িকে সতর্ক করার জন্য ঘুঘু উড়ে যায়–সে আপন বিপদকে উপেক্ষা করে এবং নিজেকে বাতাসের কাছে সঁপে দেয়। জামুনিকে নিয়ে তার একমাত্র ভাবনা-চিন্তা। অকস্মাৎ একটা দমকা হাওয়া এসে তার ডানায় আঘাত করে এবং প্রচণ্ড জোরে ঝাকানি দেয়। সে তখনো জামুনি থেকে অনেক দূরে। তবুও সে পাখা ঝাপটিয়ে উড়তে থাকে এবং নিজেকে সামাল দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে যেতে থাকে। জামুনির উদ্দেশ্যে সে কর্কশ স্বরে বলতে থাকে, ‘ফিরে যাও জামুনি... বাড়ির দিকে যাও... জামুনি! ঝড় ধেয়ে আসছে... মেঘের গর্জন শুরু হবে... এবং তুমুল বৃষ্টি নামবে... এবং তুমি...। ’ তার কন্ঠে যেন কিছু একটা বিঁধেছে। বাতাস তাকে পেছন দিকে ঠেলতে শুরু করেছে। অন্ধকার মেঘের ভেতর সে কোনরকম দেখতে পারছে। তারপরও সে আপন কুলার দিকে উড়তে থাকে। ঘন মেঘ তার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যায়। বাতাসের দূরন্ত গতি। হঠাৎ সে নিজের ভার হারিয়ে ফেলে। তার ডানা ঝাপটানো বিফলে যায়। বাঁধাহীনভাবে সে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং উচ্চতা দ্রুত কমে আসে। একসময় বাতাস তাকে পুনরায় ঠেলে নেয় এবং বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর প্রচণ্ড জোরে নিক্ষেপ করে। তখনই সে জ্ঞান হারায়।

তার জ্ঞান যখন ফিরে আসে, তখন সে একটা কাঠের আলমারির ভেতর নরম কাপড়ের স্তূপের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে। বাইরে তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। সে অনায়াসে বাতাসের আর্দ্রতা অনুভব করে বুঝতে পারে। ঝুম বৃষ্টির শব্দ স্পষ্ট। তার শরীর থেকে একটা অদ্ভূত গন্ধ বের হচ্ছে–যে ধরনের গন্ধ সে রাস্তার উল্টোদিকের হাসপাতালের রোদ-জানালায় বসার সময় পেয়েছিল। সে বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লির শব্দও শুনতে পাচ্ছিল। তারপর সবকিছু তার সামনে ভেসে উঠে। মনে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সে ধাক্কা খেয়েছিল। কোন বাচ্চা ছেলে তাকে খুঁজে পেয়েছে। নিশ্চয়ই সেই ছেলেটা হবে যে তাকে দেখভাল করছে। ব্যথায় সে চোখ বন্ধ করে। এ ব্যথা সে সহ্য করতে পারবে, কিন্তু অন্য ব্যথা, যা তাকে ভুলে থাকতে দিচ্ছে না? যেই মাত্র সে চোখের পাতা বন্ধ করে, জামুনরি মুখ তার সামনে ভেসে উঠে। সে কি বেঁচে আছে? ঈশ্বর না করুক, সে হয়তো ঝড়ের কবলে পড়েছে। জামুনি কি নির্বিঘ্নে তার ঘরে ফিরতে পেরেছে? সে চোখ বন্ধ করে থাকে এবং ব্যথা জিইয়ে রাখে–আসলে ব্যথাটাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

আলমারিতে কয়েকদিন রাখার পরে বারান্দায় ঝুলানো একটা তারের খাঁচার মধ্যে তাকে স্থানান্তরিত করে। সে শরীরের পালকে সূর্যের তাপ উপভোগ করে। সে অনায়াসে বুঝতে পারে এখনো বেঁচে আছে এবং তার প্রাণ যেন পালকে ফিরে এসেছে। আগে যেমন ডানা ঝাপটাতে পারতো, এখন সে তা পারে না। তবে সে ডানা মেলতে পারে। সারা শরীরের ব্যথা প্রশমিত হয়নি। সামান্য ব্যথা এখনো তার কাঁধে আছে।

কয়েকদিনের মধ্যে সে অন্য পাখিদের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করতে পারে এবং নিজের ভেতর একধরনের আনন্দ অনুভব করে। সে আগের পুরনো এলাকায় আছে, এমনকি ফলের বাগানের যেদিক থেকে জামুনি উড়ে আসতো, সেই একই দিকে আছে। তার ধমনীতে নতুন করে আশার সঞ্চার হয় এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা প্রবল হয়।

অপেক্ষায় তার দিন গড়িয়ে যেতে থাকে। পুনরায় সে নিজের জন্য কিচিরমিচির করা শুরু করে। তবে মাঝে মাঝে জামুনিকে ডাকে: ‘কয়েক দিনের জন্য এখানে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আছি... এই যে এই দালানে, মন্টুর বাড়িতে... আকাশের বুকে আমাকে খোঁজো না!’
‘কেমন আছো, জামুনি?’
‘তুমি কোথায়, জামুনি? জামুনি!’

তারপর অবশেষে একদিন সে খোলা আকাশের গায়ে অর্ধেক হলুদ এবং অর্ধেক রক্তবর্ণের অবয়বের দেখা পায়। কি জড়তায় সে নিজেকে এমন করে ক্ষত-বিক্ষত করেছে! উত্তেজিত হয়ে সে খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাতে উদ্যত হয়। বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য সে অনুনয়-বিনয়ের সুরে কাঁদতে থাকে। কিন্তু বাড়িতে কেউ নেই যে তার অনুরোধ শুনবে। সে খাঁচার তারের বেড়ার অনবরত মাথা ঠুকতে থাকে। শূন্যে খাঁচা দুলতে থাকে। শুধু তাই, আর কিছু না। সে কিচিরমিচির করে, চিঁ চিঁ শব্দ করে, শিষ দেয়, অধৈর্য হয়ে চিৎকার করে–কিন্তু জামুনি একবারও নিচের দিকে তার বরাবর তাকায়নি।

কয়েক মুহূর্ত পরে জামুনি তার দৃষ্টির সীমানার বাইরে চলে যায়। পুনরায় সে যখন তাকে দেখতে পায়, তখন জামুনি উন্মাদের মতো বাজারের দিকে নিচে নামতে থাকে। তার পেছনে ছেঁড়া সুতা ঝুলে আছে। নিশ্চয়ই সে বন্দি জীবন থেকে মুক্তি লাভ করেছে। তার কাছে–তার সঙ্গে থাকার জন্য! আস্তে আস্তে, কিন্তু নিশ্চিত যে, সে নিচে নামতে শুরু করেছে। নিচে মাঠের মধ্যে কয়েকটি ছেলে দৌঁড়ুতে থাকে এবং লাফিয়ে উঁচুতে উঠে তার ছেঁড়া সুতা ধরতে চেষ্টা করে। ঘুঘু কণ্ঠস্বর সপ্তমে তুলে তাকে ডাকে, কিন্তু সেই আওয়াজ তার কাছে পৌঁছায়নি। বাজারের চিৎকার-চেঁচামেচি এবং ছেলেমেয়েদের হট্টগোল সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তারপর একসময় বড় একটা ছেলে তার সুতায় ধরে সরু রাস্তার দিকে দৌঁড়ে যায়। সে দেখেছে জামুনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এবং উড়ে দূরে চলে যেতে চেয়েছে। কিন্তু ছেলেটি শক্ত হাতে সুতা ধরে রেখেছে। জামুনি নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি, অন্ততঃ এবারের জন্য।

এবং তারপর... 
পরবর্তী ঘটনা নিয়ে ঘুঘু কিছুই ভাবতে পারে না। হয়তো সে কখনই পারবে না। তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। মন্টু দৌঁড়ে ঘরে ঢোকে এবং জামুনিকে, তার জামুনিকে, উপরে তোলে।
‘মা... মা... দেখ... দেখ! একটা ঘুড়ি... আমি একটা ঘুড়ি পেয়েছি!’

তখনই ঘুঘু জানতে পারে তার জামুনির একটা নাম আছে: পাটাং [ঘুড়ি]। সবাই স্নেহপরায়ণ দৃষ্টিতে ঘুড়ির দিকে তাকায়। জামুনিকে মন্টু বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখে। সেই একই বারান্দা, যেখানে ঘুঘুর খাঁচা ঝুলে আছে। সারারাত সে জামুনিকে ডেকেছে: ‘জামুনি... পাটাং... জামুনি!’ কিন্তু জামুনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। বাতাসে সে কয়েকবার দুলেছিল। শুধু তাই।

ঘুঘু বুঝতে পেরেছে। জামুনি হয়তো বোবা হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। তাই সে কখনোই কিচিরমিচির করেনি, কখনো চিঁহি শব্দ করেনি, কখনো কোলাহল করেনি, কখনোই তাকে কিছু বলেনি।

লেখক পরিচিতি: ভারতের প্রথিতযশা গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, ছোটগল্প লেখক এবং ঔপন্যাসিক গুলজার। তার পুরো নাম সাম্পুরাণ সিং কালরা। তৎকালীন অখণ্ড ভারতের পাঞ্জাব (বর্তমানে পাকিস্তানে) প্রদেশের ঝিলাম জেলার দিনা শহরে তিনি ১৯৩৪ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মূলত: হিন্দি, উর্দু এবং পাঞ্জাবি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি করেন। ‘টু’ তার একমাত্র উপন্যাস, যা ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরে শরণার্থীদের করুণ কাহিনী নিয়ে রচিত। তিনি তিনটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ‘রাভি পার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ (১৯৯৭) এবং ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ (২০১৩) ইংরেজিতে প্রকাশিত তার ছোটগল্প সংকলন। তবে ‘রাভি পার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ থেকে চারটি গল্প নিয়ে ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘সীমা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’। কাব্যিক ভাষায় চরিত্র চিত্রণের, বিশেষ করে শব্দ প্রয়োগের, জন্য তাকে ‘মাস্টার ওয়ার্ডস্মিথ’ বা ‘শব্দ কারিগর’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

গুলজারের কর্মজীবন শুরু হয়েছে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে। পরবর্তীতে তিনি গীতিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে সুপরিচিতি লাভ করেন। গীতিকার হিসাবে তিনি ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ২০০২ সালে ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারসহ একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন । ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’ চলচ্চিত্রের গান ‘জয় হো’ সঙ্গীত রচনার জন্য তিনি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালের এপ্রিলে আসাম ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলার হিসাবে নিযুক্ত হন। গুলজার ১৯৭৩ সালে বলিউডের বিখ্যাত নায়িকা রাখীর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন।

গল্পসূত্র: ‘ঘুঘু ও জামুনি’ গল্পটি গুলজারের ইংরেজিতে অনূদিত ‘ঘুঘু অ্যান্ড জামুনি’ গল্পের অনুবাদ। হিন্দি থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় শেখর। গল্পটি লেখকের ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ ছোটগল্প সংকলন থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

গল্প এর সর্বশেষ