ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

ভিক্টর ওসিমেন: রাস্তার হকার থেকে নাপোলির মধ্যমণি

আনোয়ার হোসেন সোহাগ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
ভিক্টর ওসিমেন: রাস্তার হকার থেকে নাপোলির মধ্যমণি

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেও নেপলস শহরে এখনো বেঁচে আছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। যে শহরের ক্লাবটিকে তিনি দু’হাত ভরে দিয়েছেন সেখানে জীবিত থাকবেন না, তা কি করে হয়।

৩৩ বছর পর আবারও ফিরে এল ম্যারাডোনার স্মৃতি। আবারও ইতালিয়ান সিরি আ’য় চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। যেই শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর ভিক্টর ওসিমেন।

ম্যারাডোনার তুলনায় ওসিমেন হয়তো কিছুই নন। কিন্তু আজ বেঁচে থাকলে ম্যারাডোনা নিজেও তাকে এক কাতারে রাখতে দ্বিধাবোধ করবেন। ১৯৯০ সালে প্রায় একা হাতেই নাপোলিকে লিগ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কে ভেবেছিল আরেকটি লিগ জয়ের জন্য ৩৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অবশেষে ওসিমেনের হাত ধরেই অবসান ঘটলো সেই অপেক্ষার। ম্যারাডোনার পর অনেক রথীমহারথীই এসেছেন নাপোলিতে। কিন্তু কে ভেবেছিল একসময় নাইজেরিয়ার রাস্তা হকারি করা বালকটি আজ ক্লাবটির মধম্যণি হয়ে উঠবেন!

গতকাল নাপোলির জন্য সমীকরণটা এমন ছিল যে, উদিনেসের বিপক্ষে ড্র করলেই নিশ্চিত স্কুদেত্তো। শুরুতে উদিনেস এগিয়ে গেলেও ওসিমেনের গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে নাপোলি। লিগে এটি ওসিমেনের ২২ তম গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তার উপরে নেই আর কোনো ফুটবলার। এই মৌসুমের আগেও খুব একটা পরিচিত ছিলেন না তিনি। তবে এখন তার নামের পাশে অনায়াসেই জুড়ে যায় ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার’ ট্যাগটি। অন্তত নাপোলির ভক্তরা তো তাকে সেটা মানবেনই।  

অনেক বছরের স্বপ্ন পূরণ করার বেশ খুশি নাপোলি, ‘এটা অসাধারণ এক অনুভূতি। এই মুহূর্তের জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছি আমরা।  নেপোলিতানদের স্কুদেত্তো উপহার দেওয়াটা এমন কিছু যা আমরা কখনোই ভুলব না এবং তা আজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবে। সব নেপোলিতানদের  জন্য খুশি। এখন আমরা নিজেদের সমর্থকদের সামনে উদযাপন করব। ’

নাপোলির মৌসুমের শুরুটা হয়েছে টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে। কালিদু কুলিবালির মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দেওয়ায় ক্লাব মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন ভক্তরা। তবে দিনশেষে তারাই এখন সবচেয়ে সুখী মানুষ।

ওসিমেন বলেন, ‘নেপোলিতানদের চেয়ে কেউই এই স্কুদেত্তোর (লিগ শিরোপা) জন্য বেশি যোগ্য নয়। আন্ডারডগ হিসেবে মৌসুম শুরু করেছিলাম, খুব কম লোকই আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিল। এই দল একতাবদ্ধ থেকেছে... মৌসুমের শুরু থেকে আমরা বিশ্বাস করেছি যে আমাদের অসাধারণ দল রয়েছে এবং আমরা স্কুদেত্তো উপহার দিতে পারব। এখন আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত। ’

ওসিমেনের গোলের পর নাপোলি ভক্তদের উচ্ছ্বাস

এই পর্যায়ে আসার রাস্তাটা সহজ ছিল না ২৪ বছর বয়সী ওসিমেনের। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। তখন বয়স কত মনে ছিল। এর তিন মাস পরই চাকরি চলে যায় বাবার। পরিবারের এই কঠিন সময়ে ভাই বোনের সঙ্গে রাস্তায় হকারি করতেন তিনি।

‘আমার ভাই ক্রীড়া পত্রিকা বিক্রি করত, বোন কমলা ও আমি পানি বিক্রি করতাম লাগোসের রাস্তায়। জীবনের একটি সময় বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে। তবে দিনশেষে এটাই আমি। সবগুলোকে আলাদা করা কঠিন তবে প্রতিটি ঘটনাই আমার ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে। ’

২০১৫ সালে নাইজেরিয়াকে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতিয়ে আলোচনায় আসেন ওসিমেন। সেই টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচ খেলে ১০ গোল করেন তিনি। জার্মান ক্লাব ভলফসবুর্গের হয়ে শুরু করেন পেশাদার ক্যারিয়ার। এরপর চারলেরোয়-লিল ঘুরে ২০২০ সালে যোগ দেন নাপোলিতে।  

এখন হয়তো বড় বড় ক্লাবগুলো হাত বাড়াবে ওসিমেনের দিকে। তবে নাপোলি ছাড়লেও ওসিমেনকে হৃদয় থেকে কখনো মুছে ফেলতে পারবে না নেপোলিতানরা। ম্যারাডোনার মতোই হয়তো তাকে আগলে রাখবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম!

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এএইচএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।