সাফ অনুর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে এখনও ট্রফি জেতা হয়নি বাংলাদেশের। আগের চার আসরের তিনটিতেই রানার্স আপে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
তবে এবার আর খালি হাতে নয়। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মঈনুল ইসলাম মঈন। সাফের এই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে এখন ঘরের মাঠ কমলাপুর স্টেডিয়ামে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন মঈনরা। কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পুর তত্ত্বাবধানে চলছে মঈনদের কঠোর অনুশীলন।
২০১৫ সালে শুরু হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ ২০১৭ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠে। সেবার নেপালের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে বঞ্চিত হয়। এরপর ২০১৯ এবং ২০২২ সালে আরো দু’বার ফাইনালের মঞ্চে উঠলেও দু’বারই ভারতের কাছে হেরে কপাল পুড়ে। আসন্ন ২০২৩ সাফ টুর্নামেন্ট সামনে রেখে তাই সতর্ক মঈন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগের ৩ আসরে রানার্স আপ হয়েছি। তবে এবার আমাদের লক্ষ্য ট্রফি জয়। সেভাবেই আমরা নিজেদের প্রস্তুত করছি। পাপ্পু স্যারের অধীনে আমাদের অনুশীলন ভালো হচ্ছে। আমাদের দলটাও ভালো। আশাকরি নেপালে আমরা ভালো কিছুই দেশকে উপহার দিতে পারব। ’
বয়সভিত্তিক সাফে খেলার দীর্ঘ এক অভিজ্ঞতা রয়েছে বরিশাল মুলাদী এলাকার ছেলে মঈনের। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন মঈনরা। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ ট্রফি জয়ে রেখেছেন ভূমিকা। এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৪ জাতি উয়েফা ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে; সেখানে মঈন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭ গোল) ছিলেন তিনি। সাফের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক এএফসি কাপেও খেলেছেন বরিশালের ছেলে মঈন।
স্কুল ফুটবল দিয়েই মূলত ফুটবলার হিসেবে যাত্রা শুরু মঈনের। খেলেছেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক স্কুল গোল্ডকাপ ফুটবল আসরে। এরপর মুলাদী ফুটবল একাডেমিতে গিয়ে কোচ জিয়াউল আহসান খানের কাছেই মূলত ফুটবলের অ আ ক খ শেখা। তবে মঈনকে ফুটবলের বড় মঞ্চে আসতে খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। খেলতে হয়নি ঢাকা মহানগরী লিগের আওতাধীন পাইওনিয়ার লিগ, তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিভাগ ফুটবলে। ২০১৫ সালে ঢাকায় এসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের জন্য ট্রায়াল দিয়েছেন। ট্রায়ালে টিকে টুর্নামেন্টে খেলেছেন। সেখান থেকে আজো খেলে যাচ্ছেন। তবে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলগুলোতে ধারাবাহিক ভালো খেলার ফল হিসেবে ২০২১-২২ মৌসুমে জায়গা করে নেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব উত্তরা ফুটবল টিমে।
চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে উত্তরা ফুটবল ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও নজর কাড়া পারফরম্যান্সে লাইমলাইটে চলে আসেন মঈন। টুর্নামেন্টে সেরা স্কোরার হওয়ার কীর্তি গড়েন। গুণে গুণে ১৮টি গোল পুরেন প্রতিপক্ষের জালে। মঈনের এমন পারফরম্যান্স দেখে ২০২২-২৩ মৌসুমে তাকে দলে ভেড়ান বাংলাদেশের পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড। সাদা-কালোদের হয়ে প্রথমবারের মতো মর্যাদার আসর পেশাদার লিগে খেলার সুযোগ হয়। তবে মোহামেডানে না লেখালেও গত বছর খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে আগামী মৌসুমে আবারো নিজের ঝলক দেখাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কারণ ২০২৩-২৪ মৌসুমে অন্য কোনো ক্লাবে নয়; পুরনো ক্লাব মোহামেডানেই থেকে গেছেন মঈন।
ব্যবসায়ী বাবা আর গৃহিনী মায়ের তিন সন্তানের সবার বড় ছেলে মঈন। এছাড়া মঈনের ছোট এক ভাই এবং ছোট এক বোন রয়েছে। পরিবারের বাইরে ফুটবলই ধ্যানজ্ঞান তার। ফুটবল নিয়ে অনেক স্বপ্ন। বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইনা আর বাংলাদেশের তারকা ফরোয়ার্ড রাকিবের ভক্ত মঈনও একদিন নিজেকে দেশসেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তার আগে মোহামেডানের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করতে চান বরিশালের এ ফুটবলার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
এআর/আরইউ