ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ম্যারাডোন‍াকে ছাড়িয়ে যাবেন মেসি!

সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৪
ম্যারাডোন‍াকে ছাড়িয়ে যাবেন মেসি! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ২৮ বছর আগে যেবার ম্যারাডোনা একাই বিশ্বকাপ এনে দিলেন আর্জেন্টিনাকে। সেবার ফাইনালে ওঠার পথে তাদের পথের কাঁটা হয়ে ছিল বেলজিয়াম।



তারপর ম্যারাডোনা ইতিহাস নিজের মতো করে লিখেছেন। অমরত্ব পেয়েছেন। এরপর আর্জেন্টা‌ইন অনেকেই নতুন ম্যারাডোনা খেতাব পেয়েছেন। কিন্তু কারোরই আর সোনালি ট্রফিটা ছুড়ে দেখা হয়নি।

এবার মেসির পায়ে ভর করে সেই আক্ষেপ ঘোঁচাতে চায় ‍আলবিসেলেস্তেরা। ইতোমধ্যে ফুটবলের বাকি সব শ্রেষ্ঠত্ব পায়ে লুটালেও আগের দুই বিশ্বকাপে মেসি ঠিক মেসি হয়ে উঠতে পারেননি।

এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপের শুরু থেকে যে মেসি ম্যানিয়া শুরু হয়েছে, তার জোয়ারে মেসি ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাবেন বলেই বিশ্বাস আর্জেন্টাইনদের এবং খোদ ম্যারাডোনার।


সেই সফলতার মিশনে এবারের বিশ্বকাপে শনিবার (৫ জুলাই) দীর্ঘ ২৮ বছর পর ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় আর্জেন্টিনার সামনে আবারো বাঁধা হয়ে এসেছে বেলজিয়াম। তবে ইউরোপের এ দলটি এবার আর্জেন্টিনার সামনে দাঁড়াচ্ছে সেমিফাইনালে ওঠার পথে।

সেদিনের তরুণ তুর্কি ম্যারাডোনা ১২ মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল করে দলকে তুলে দিয়েছিলেন ফাইনালে। ২৮ বছর পর আর্জেন্টাইদের প্রাণভোমরা মেসি কি পারবেন অগ্রজের ইতিহাস নতুন করে লিখতে? কিংবা সেই ইতিহাসকেও ছাড়িয়ে যেতে।

এদিন তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ব্রাসিলিয়া শহরের এস্তাদিও ন্যাসিওলা স্টেডিয়ামে লড়বে আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম।

৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক ম্যারাডোনার মতো এবার দলকে একাই টেনে নিয়ে যাওয়া মেসি ২৮ বছর আগেকার স্মৃতি ফিরিয়ে আনবেন সেই অপেক্ষায় কোটি আকাশি-সাদা ভক্ত-সমর্থক।

সেবার ম্যারাডোনা গ্রুপ পর্বে করেছিলেন ১ গোল। পুরো টুর্নামেন্টে ৫ গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছিলেন আরো ৫টি।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে দলকে একাই টেনে নিয়ে এসেছেন মেসি। ৪ ম্যাচে ৪ গোল করে এবং ১টি গোল করিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে টানা চার ম্যাচ ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। মাঠে ছিলেন ৩৬৩ মিনিট। পেনাল্টি বক্স পর্যন্ত একক দৌড় দিয়েছেন ২২ বার। তার পা থেকে শটের ৫৩ দশমিক ৩ ভাগই ছিল লক্ষ্যমুখী।

আর্জেন্টিনা সর্বশেষ ফাইনাল খেলে ৯০ সালের বিশ্বকাপে। সেবারও দলকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন ম্যারাডোনা। তারপর আর কখনো সেমিফাইনালেই ওঠা হয়নি তাদের। বেলজিয়াম বাধা টপকে এবার সব অপয়া  দূর করতে চায় সাবেলার শিষ্যরা।

২৮ বছর আগের সেই স্মৃতি এবার মিলে যাচ্ছে আরো নানা কারণে। সেবার বেলজিয়ান গোলরক্ষক জাঁ-মেরি পাফ ম্যারাডোনাকে গোল করতে দেবেন না মর্মে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। দুই গোলে তা‍র জবার দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।

এবার বিশ্বকাপের আগে বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াও যেন পণ করেছেন মেসিকে জালে বল জড়াতে দেবেন না। গত মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ছয় ম্যাচের ৫টি ড্র এবং একটিতে অ্যাটলেটিকো ১-০ গোলে জিতেছে। কিন্তু কোনো ম্যাচেই অ্যাটলেটিকার বেলজিয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি মেসি। তবে কি থিবোকে বিশ্বকাপেই জবাব দেবেন মেসি?

১৯৮৬ বিশ্বকাপ ম্যারাডোন‍ার বিশ্বকাপ বলা হলেও তার আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন ভালদানো ও বুরুচাগার মতো সেনানী। রক্ষণভাগের পাহারায় ছিলেন রুগেরির মতো আর্জেন্টিনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার।

এবারো আর্জেন্টাইন শিবিরে আক্রমণে মেসির পাশে রয়েছেন হিগুয়েন, আগুয়েরো, মারিয়ার মতো বিশ্ব সেরা স্ট্রাইকার। রক্ষণে রয়েছেন মাসচেরানো ও জাবালতোর মতো বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। কিস্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না তাদের কেউ। প্রতিটি ম্যাচে শেষ পর্যন্ত মেসি ম্যাজিকই রক্ষা করছে আর্জেন্টিনাকে।

দলের আক্রমণভাগের অন্যরা নিষ্প্রভ থাকলেও একাই দলকে বয়ে বেড়ানো মেসিই ১৩ জুলাই মারাকানায় সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন।   উঁচিয়ে ধরবেন গোল্ডেন বল এমনটাই এখন স্বপ্ন আর্জেন্ট‍াইন সমর্থকদের।

পূর্বসূরী ম্যারাডোনার মতোই মেসি আজও তার জাদুর ঝাঁপি খুলে বসবেন। একে একে বের করে আনবেন অসাধারণ সব ড্রিবলিং, নিঁখুত পাস, বল নিয়ে গোলমুখী দৌড়, দুর্দান্ত কিক আরও কতকি? এসব আশা নিয়েই মেসি ম্যানিয়ার প্রহর গুণছেন ফুটবল অনুরাগীরা।

তাদের আশা মেসি ম্যানিয়ার সঙ্গে সময়মতো এসে ঠিকই জ্বলে উঠবেন নিষ্প্রভ হিগুয়েন, মাঠে ফিরবেন আগুয়েরো। সেই সঙ্গে মারিয়া লাভেজ্জি যোগ হয়ে রচনা করবেন এক মহাকাব্য, যা নতুন এক অমর ইতিহাস রচনা করবে।

সবাইকে ছাড়িয়ে উপরে উঠে আসা মেসি বিশ্বকাপ জয় করে ছাড়িয়ে যাবেন ম্যারাডোনা এবং সেইসঙ্গে সবাইকে।

বেকেনবাওয়ার, পুসকাস, ক্রইফ, ইউসেবিওরা বিশ্বকাপ না জিতলেও তারা সবাই অমরত্ব লাভ করেছেন। ব্যক্তিগত অর্জনে মেসি ইতোমধ্যে তাদের ছাড়িয়ে আসীন হয়েছেন পেলে ও ম্যারাডোনার পাশে।

রিও ডি জেনিরোর মারাকানা থেকে ১৩ জ‍ুলাই সোনালী ট্রফিকে চুমু একে তিনি ছাড়িয়ে য‍াবেন সবাইকে। ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তারও উপসংহার টেনে দেবেন চিরতরে সেই আশায় বুক বেঁধে আছেন কোটি আকাশি-সাদা অন্তপ্রাণরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।