ঢাকা: সন্তান কি কখনও বাবা-মা’র কাছে বড় হয়? না, হয় না। বাবা-মা’র কাছে সন্তানরা সব সময় ছোটই থাকে।
কৃষ্ণা এখন এদেশের মানুষের মুখে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। প্রতিপক্ষের জালে একের পর এক বল জড়িয়ে দেশকে এনে দিচ্ছেন বিরল এক একটি জয়, লাল-সবুজের পতাকা সুউচ্চে তুলে ধরছেন ভিনদেশের মাটিতে। তারপরেও বাবা বাসুদেব সরকারের কাছে সেই ছোট্টটি রয়ে গেছেন কৃষ্ণা।
মজার ব্যাপার হলো কৃষ্ণার বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। তবে এখনই মেয়ের বিয়ের জন্য ভাবছেন না বাসুদেব। বরং ভাবছেন মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে। চাইছেন মেয়ে নুন্যতম বিএ পাস করবে, ভালো চাকুরি করবে এবং আরও ৮ থেকে ১০ বছর খেলবে, তারপরে তার বিয়ের কথা ভাবা যাবে। ‘প্রায়ই ওর বিয়ের প্রস্তাব আসে তবে আমার মত নাই। বিএ পাস করবে, চাকুরি করবে তারপর। ওর ইচ্ছেও তাই। কৃষ্ণা বলে, ভালো লেখা পড়া করবো, চাকুরি নেব তারপরে বিয়ে করবো। ’
বাসুদেবের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরে। পেশায় কৃষক। নিজ বাড়িতেই কৃষিকাজ করে কোনো রকম টেনে টুনে সংসার চালান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে, কৃষ্ণাও একই ক্লাসে। তবে কৃষ্ণার এখন পড়ার কথা দশম শ্রেনীতে। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে ফুটবলে ব্যস্ত সূচি থাকায় এক বছর পিছিয়ে গিয়েছেন এই টাইগ্রেস দলপতি।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কৃষ্ণাদের যে সংবর্ধনা ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এতে দারুণ খুশি কৃষ্ণার গরিব বাবা বাসুদেব। দেশের তিনটি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস, জেমকন গ্রুপ ও ক্যাল্ডওয়েলের কাছ থেকে যে টাকা পেয়েছে তার পুরোটাই দরিদ্র বাবার হাতে তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণা।
শুধু সংবর্ধনার টাকাই নয়, বরং ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এশিয়ার সেরা ৮ দেশের মেয়েদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বের মেয়েদের জন্য নেয়া বাফুফের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচিও তাকে বেশ উদ্বেলিত করেছে।
বাফুফে ঘোষিত আগামী এক বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্নূধ্ব-১৬ জাতীয় নারী দলের ২৩ খেলোয়াড়কে নিবিড় প্রশক্ষিণের পাশাপাশি তাদের মাসিক ভাতা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এসএস সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আগামী এক বছর প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেবে বলেও জানা গেছে।
মেয়েদের ফিটনেস বাড়াতে ও টেকনিক্যাল দক্ষতা বাড়াতে একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেবে বাফুফে, সঙ্গে পুষ্ঠিবিদরাও কাজ করবেন। দলে থাকবেন একজন ফিজিও। যা দিন শেষে সুফলই বয়ে আনবে বলে মনে করেন বাসুদেব, ‘বাফুফের কর্মসূচি জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে কারণ আমরা এতে করে লাভবান হবো। ’
শুধু তাই নয়, এই এক বছর মেয়েদের থাকা খাওয়া ও পোশাক ব্যয় বহন করবে বাফুফে। মেয়েদের মাঝে অনেকেই শিক্ষার্থী। ফলে একজন করে বাংলা, ইংরেজী, গনিত ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য মোট চারজন শিক্ষক থাকবেন।
আর মেয়েরা যাতে তাদের পিতা মাতার অভাব অনুভব না করতে পারে, সে জন্য দেড় মাস অন্তর অন্তর ‘প্যারেন্টস ডে’ আয়োজন করা হবে।
মেয়ে একবছর দূরে থাকবে খারাপ লাগবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাসুদেব জানালেন, ‘অসুবিধা নাই। আমি এখানে এসে ওর সাথে দেখা করবো। এর আগেও করেছি। ’
হ্যাঁ, একথা ঠিক যে বাসুদেব এর আগেও মেয়ের সাথে আবাসিক ক্যাম্পে এসে দেখা করেছেন। তবে সেটা এত দীর্ঘ সময়ের জন্য ছিল না। এবার এক বছরের ব্যাপার। তবে তাতে কিছু মনে করছেন না বরং মেনে নিয়েছেন এই বাস্তবতাকে। আর সেটা হলো ‘ভালো কিছু পেতে হলে ছাড়তো দিতেই হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস