ঢাকা: রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাকিটা পথ এখনো দীর্ঘ। তবুও এখন থেকেই আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্তদের মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, ‘প্রিয় দল আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে যেতে পারবে তো!’ তাদের হতাশ হতে না করছেন খোদ আর্জেন্টাইন দলপতি লিওনেল মেসি।
কোপা আমেরিকার দুই ফাইনাল আর ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও দেশকে শিরোপা পাইয়ে দিতে না পারার কারণে অভিমান করে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন মেসি। পরে অভিমান ভেঙে আবারো ফেরেন আর্জেন্টিনা দলে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মেসিও মনে-প্রাণে চাইছেন রাশিয়া বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার ঘরেই নিয়ে যেতে।
তবে, বাস্তবতা এখন ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়াকে যখন শঙ্কায় ফেলছেন ভক্তরা, তখন দলের পাশে, ভক্তদের পাশে আবারো দাঁড়িয়েছেন মেসি। এ নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা চার ম্যাচ জয়হীন থাকল আর্জেন্টিনা। হারতে হয়েছে পর পর দুই ম্যাচে। তবে, আর্জেন্টাইন এই দলপতি এখনও বিশ্বাস করেন, সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।
ব্রাজিলের বিপক্ষে আতিথ্য নিয়ে হেরে গেলেও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি সতীর্থদের ভেঙে না পরার জন্য অনুরোধ করেছেন। সতীর্থদের সংঘবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবলের খুদে জাদুকর। তিনি জানান, ‘সত্যি সত্যি আমরা এই ফল আশা করিনি। মাঠে আমরা সমান তালে খেলছিলাম। কিন্তু, প্রথম গোলটি আমাদের এলোমেলো করে দেয়। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। গোল হজমের পর এলোমেলো হয়ে গেলে চলবে না। এই সমস্যা থেকে বের হতে হবে। চাপের মধ্যেও আমাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে নিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আমাদের বেশি একতাবদ্ধ হতে হবে। ’
ব্রাজিলের বিপক্ষে হারের পর ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে আর্জেন্টিনা। প্রথম চারটি দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপের আসরে। পঞ্চম দলটিকে খেলতে হবে প্লে-অফে। তবে, মেসি মনে করেন এখনও চাইলে ঘুরে দাঁড়িয়ে সরাসরি রাশিয়ার টিকিট কাটা সম্ভব। আর সেক্ষেত্রে পরের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে যে করেই হোক জয় চাইছেন আর্জেন্টাইন দলপতি। মেসি সতীর্থদের হতাশ না হতে অনুরোধ করেছেন। তিনি আরও জানান, ‘আমাদের এখন সব ভুলে শুধু কলম্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচে মনযোগ দিতে হবে। ওই ম্যাচটা আমরা জিততে পারলে পরিস্থিতিটা অনেকটাই বদলে যাবে। ’
এর আগে ১৯৭০ বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম দুই বিশ্বকাপ খেলার পর পরের তিন আসরে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল দিয়েগো ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতা, ক্যানিজিয়া, হার্নান ক্রেসপো, ডি স্টিফানো, দিয়েগো সিমিওন, জানেত্তি, পাবলো আইমারদের দেশটি। পরে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ দিয়ে আবারও ফিরে আসে বিশ্বকাপের আসরে। তবে, ওই একবারই বাছাইপর্বে ছিটকে পড়েছিল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এবারে আর ছিটকে পড়তে চাইছেন না ম্যারাডোনার উত্তরসূরি মেসি। বিশ্ব ফুটবলকে তিনি জানান দিয়ে রেখেছেন, ‘আমরা সবাই এখন একটা জিনিসই চাই, সেটা হলো বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া। পরের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে পয়েন্ট হারালে চলবে না। যে ভুলগুলো আমরা করে আসছি তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, এ মুহূর্তে অন্যরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আর আমরা আমাদের উপরই নির্ভরশীল। তাই যে করেই হোক, আর পয়েন্ট নষ্ট করা যাবে না। ’
নিজেদের মাটিতে আগামী বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠেয় সেই ম্যাচটি জিতলে সেরা চারে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকছে মেসি বাহিনীর। তাতে, অবশ্য চিলি-ইকুয়েডরকে নিজ নিজ ম্যাচে পয়েন্ট হারাতে হবে অথবা ড্র করতে হবে। হিসেবের মারপ্যাঁচ আরও থাকছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে চিলি আর ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ইকুয়েডর পয়েন্ট হারালে, আর্জেন্টিনা উঠে আসবে তিন নম্বরে। তাতে জয় পেতেই হবে মেসির দলকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ১১ নভেম্বর ২০১৬
এমআরপি