যদি প্রশ্ন করা হয় ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ফুটবলে ছেলেদের অর্জন কী ছিল? নাক সিটকিয়ে একবাক্যে সবাই বলবেন, এদেশের ফুটবলে ছেলেদের অর্জন! সেটা আবার কি? হতাশা ছাড়া কীই বা দিতে পেরেছেন মামুনুল ইসলামরা?
বছরটিতে কিন্তু কম ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলাররা। কিন্তু হারতে হারতে মামুনুল ও তার দল বিষয়টি এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন-ছেলে রোজই স্যুটেড-বুটেট হয়ে স্কুলে যায়, কিন্তু পরীক্ষায় পাসের দেখা আর মেলে না! বছর শেষে ফলাফল; বিশ্বের ফুটবল খেলুড়ে ২০৫ দেশের মধ্যে অবস্থান ১৮৫! কী নিদারুণ লজ্জার! কী হতাশার এ ফলাফল!
পক্ষান্তরে মেয়েদের অর্জনের কথা বললে সবাই বলবেন, আরে ভাই, বাংলাদেশের ফুটবলকে তো ওরাই বাঁচিয়ে রেখেছে।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে এদেশের ফুটবলকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। আর এমন উচ্চতায় থেকেই ২০১৭ সালের মূল পর্বে ব্যাংককে ওরা খেলবে চীন, জাপানের মতো এশিয়ার সেরা দেশগুলোর সাথে। এই মুহূর্তে ওরা ছাড়া এদেশের ফুটবলে আছেই বা কী?
২০১৬ সালের সূর্য যখন গোধুলি লগ্ন পার করছে, তখন এমনই এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে এদেশের ফুটবল।
এবার আসুন দেখি ছেলেরা কীভাবে এদেশের ফুটবলকে হতাশা উপহার দিয়েছেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে ভুটানের বিপক্ষে কোনো মোকাবেলায়ই হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি লাল-সবুজের ফুটবলকে। ১১ বারের দেখায় ৮টিতেই জয় পেয়েছে। সেই ভুটান গেল সেপ্টেম্বরে এশিয়ান কাপের প্লে অফের প্রথম লেগে ঢাকার মাটিতে ড্র নিয়ে দেশে ফিরে ফিরতি লেগে অক্টোবরে দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে দিয়েছে ৩-১ এ হারের লজ্জা। আর এই হারে আগামী তিন বছর ফিফা ও এফসির আন্তর্জাতিক একটি ম্যাচও খেলতে পারবে না বাংলাদেশ!
শুধু এশিয়ান কাপের প্লে অফই কেন? বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বিশ্বকাপ বাছাই, এশিয়ান কাপের প্রাক বাছাই ও প্রীতিম্যাচসহ পুরো বছরে ১১টির মাত্র ১টিতে জয় নামক সোনার হরিণের দেখা পেয়েছে লাল-সবুজের ফুটবলাররা। মামুনুলদের একমাত্র জয়টি ছিল গেল ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-২ গোলে। বাদবাকি সবই হারের নির্মম এক একটি উপাখ্যান।
ছেলেদের হারের গল্প শুনে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে গেছেন! এবার আসুন মেয়েদের সাফল্যের গল্প শুনে ক্লান্তি দূর করি। শুরুটা হয়েছিল গেল এপ্রিলে তাজিকিস্তানে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলের আঞ্চলিক আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগের বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে লাল-সবুজের যুবতীরা। আর অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মেয়েরা ৫ ম্যাচে কোনটিতে না হেরে প্রতিপক্ষের জালে ২৬ বার বল জড়িয়ে উঠে গেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ এর মূল পর্বে।
বাংলাদেশ ফুটবলে এক বছরে চার কোচের বদল ছিল ২০১৬ সালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বছরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ চলাকালীন দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন দেশী মারুফুল হক। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন গঞ্জালো মোরেনো। মোরেনোকে বিদায় করে ফুটবলের দিন ফেরাতে আবারো দায়িত্ব নেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। ক্রুইফ এই মিশনে ব্যর্থ হলে দায়িত্ব দেয়া হয় টম সেইন্টফিটকে। তার নিয়োগ ছিল মাত্র তিন ম্যাচের জন্য। ভুটানের বিপক্ষে হেরে তিনিও ফিরেছেন নিজ দেশ বেলজিয়ামে।
এপ্রিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনও ছিল ফুটবল পাড়ায় বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। প্রতিপক্ষের নানাবিধ ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ফুটবলের সভাপতি হয়েছেন কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
ফুটবলের মাঠে দর্শক ফেরাতে ভিন্ন আঙ্গিকে ঢাকার বাইরে আয়োজিত হয়েছিল দেশের ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদার আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। পরিতাপের বিষয় হলো সেই যাত্রায়ও ব্যর্থ হয়েছে বাফুফে। উল্টো, লিগের শেষ দিকে এসে ঘটেছে ম্যাচ পাতানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যা বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ ফুটবলের কপালে এঁকে দিয়েছে কলঙ্কের কালো তিলক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি