টাইগ্রেসদের এই কোচ জানান, ‘যেহেতু আমরা ফাইনাল খেলতে পেরেছি সেহেতু আমি মনে করি এটা আমাদের নারী ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ফুটবল ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তারই একটি প্রতিফলন।
দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালে শুরু হয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সদ্য সমাপ্ত এই আসর সহ এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টটির মোট চারটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার প্রতিটিতেই বাংলাদেশ অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে ২০১০ সালে সাফের প্রথম আসরেই চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের খেলায় শ্রীলঙ্কা ও ভুটানকে হারিয়ে উঠে যায় সেমিফাইনালে। তবে সেমিফাইনাল থেকে ফাইনাল উঠা হয়নি। শেষ চারের ম্যাচে নেপালের কাছে ৩-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়।
পরের আসরে অবশ্য প্রত্যাশিতভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি লাল-সবুজের প্রমীলা ফুটবলাররা। গ্রুপ পর্বে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে সেমিতে উঠা হয়নি।
তৃতীয় আসর অর্থাৎ ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। কিন্তু এবারও সেই নেপাল বাধা। শেষ চারের ম্যাচে দলটির কাছে ১-০ গোলে হেরে ছিটকে যায় শেষ চার থেকেই। তবে গেল তিন আসরে ফাইনালের বন্ধ্যাত্ব বাংলাদেশ ঘোচায় এবারের আসর দিয়ে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬-০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালের ম্যাচে মালদ্বীপের মেয়েদের ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো সাফ ফাইনালে উঠে রচনা করে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের নতুন ইতিহাস।
কিন্তু এই ইতহাস তৈরির কাজটি মোটেও মসৃণ ছিল না বলে জানালেন কোচ, ‘২০১০ সাল থেকেই আমরা সাফ খেলছি। প্রথম সাফে সেমিতে গেলেও দ্বিতীয়টিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাই। তৃতীয়টিতে সেমিতে খেলি। সেখান থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল যে ফাইনালে খেলবো। কিন্তু কাজটি কঠিন ছিল। কেননা, আমাদের দলের বেশিরভাগ প্লেয়ারই অল্প বয়সী এবং এই সাফে আমাদের গ্রুপটিও কঠিন ছিল। সেমিফাইনালে যাওয়াটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেই কাজটি আমরা খুব ভালভাবেই করতে পেরেছি। ’
ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হলো না কেন? উত্তরে ছোটন জানান, ‘আপনি যদি বিচার বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন ভারত আমাদের চেয়ে সব দিকেই এগিয়ে ছিল। প্রথমত ওদের মাটিতে খেলা, দ্বিতীয়ত ম্যান টু ম্যান দেখলে দেখবেন তারাই এগিয়ে আর তৃতীয় কারণটি হলো ভারত আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। অন্য যে বিষয়টি আমাদের হারের পেছনে কাজ করেছে সেটি হলো, মাঠে স্বাগতিক দর্শকদের মাত্রাতিরিক্ত উল্লাসে মানসিক ভাবে চাপে থাকায় শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের জাল আমাদের মেয়েরা অক্ষত রাখতে পারেনি। সব কিছু মিলিয়ে তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ’
ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হেরে গেলেও গ্রুপ পর্বে কিন্তু ঠিকই দু’দলের খেলা গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। ফলে অনেকেই আশা করছিলেন নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে সাফ। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। এর কারণ হিসেবে ছোটন জানান, ‘গ্রপ পর্ব ও ফাইনাল ম্যাচে আমার কৌশল এক রকম ছিল না। গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হতে আমি ছাত্রীদের রক্ষণাত্মক খেলতে বলেছি। এখানে আমার কৌশল ছিল জোনাল ও ম্যান মার্কিং। তাতে আমরা সফলও হয়েছি। ওদিন আমার ডিফেন্সও দারুণ ছিল। কিন্তু স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে পরেরটি যেহেতু ফাইনাল ম্যাচ, সেহেতু মাঠে দর্শকদের একটি চাপও ছিল। ছোট ছোট ভুল-ত্রুটি থাকায় আমরা গোল খেয়েছি। ’
তবে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও রানার আপ হয়ে অসন্তুষ্ট নন সাবিনা-কৃষ্ণাদের এই কোচ। কেননা এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখছেন, ‘সাফে অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েরা খেলেছে সিনিয়র দলের সাথে। এতে করে তারা আগের চেয়ে সাহসী হয়েছে। ম্যাচ বাই ম্যাচ মানে ফাইনাল পর্যন্ত দলটির সবাই উন্নতি করেছে, যা অনূর্ধ্ব-১৬ চূড়ান্ত পর্বে আরও সাফল্য এনে দেবে বলে আমি মনে করি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ৭ জানুয়ারি ২০১৭
এইচএল/এমআরপি