ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। দেশের এই বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে ক্রিকেট, ফুটবল, গলফসহ আরো অনেক খেলাতেই।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় এবারের আসরে সেভেন-এ-সাইড ফুটসালের ইভেন্টে মুখোমুখি হয় এই দুই দল।
ম্যাচের প্রথম থেকেই আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের ধারা বজায় রেখে উপস্থিত অগনিত দর্শককে মাতিয়ে রাখেন দুই দলের ফুটবলাররা। বয়স যেন তাদের কাছে হার মানে। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। নির্ধারিত সময়ে কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। প্রথম গোলটি করে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া। তবে, অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে গোল শোধ করে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি। ফলে, টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। তাতে প্রথম ৫টি করে শটেই বল জালে জড়ায় দুই দলের ফুটবলাররা। ষষ্ঠ শটে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে, নিজেদের ষষ্ঠ শটে জালের ঠিকানা খুঁজে ৬-৫ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মাঠে খেলার প্রথমার্ধের সপ্তম মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির তারেকের দুর্দান্ত একটি শট রুখে দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার মাহবুব। ১১তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার অপু বল ফাঁকায় পেয়েও প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি। পরের মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার দলপতি মাসুদুর রহমানের দুর্দান্ত একটি শট প্রতিহত হয় ডিফেন্সের গায়ে লেগে। ১৬ ও ১৭ মিনিটের মাথায় ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির দলপতি ইমরুলের দু’দুটি জোরালো শট গোলবারের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
১৯তম মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির বিদ্যুতের জোরালো আর বাঁকানো শট জালের ঠিকানা পায়নি। ২৩ মিনিটে একই রকম শটে জালের ঠিকানা পায়নি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার হয়ে পুরো সময় দারুণ খেলা অপু। ২৪তম মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির তারেকের দুর্দান্ত গতি উপস্থিত দর্শককে মাতিয়ে তুললেও সে যাত্রাতেও কোনো গোল হয়নি।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন বাংলানিউজের আউটপুট এডিটর (ইংলিশ) এসএম সালাউদ্দিন। দ্বিতীয়ার্ধের ১১তম মিনিটে সালাউদ্দিনের ডিফেন্স চেড়া পাস কাজে লাগাতে পারেননি অপু। এ দু’জনের দারুণ বোঝাপড়ায় ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিকে চেপে ধরে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া। খেলার দ্বিতীয়ার্ধের ১৭তম মিনিটে অপুর শট প্রতিহত হয়। প্রতি অর্ধে ২৫ মিনিটের খেলার শেষ দুই মিনিট আগে আবারো সালাউদ্দিন-অপুর জুটি কাঁপিয়ে দেয় ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির রক্ষণভাগকে। তবে, কোনো দেখা না পাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
জমে ওঠার এই ফুটসালের অতিরিক্ত (১০+১০) সময়ে প্রথম গোলের দেখা পায় মিডিয়া। পঞ্চম মিনিটে সালাউদ্দিনের পাসকে কাজে লাগাতে পারেননি মাহবুবুর রহমান। সপ্তম মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির তারেক-বিদ্যুতের জুটিও ব্যর্থ হয়। তবে, নবম মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার সালাউদ্দিন। মাহবুবের থ্রু-পাসকে কাজে লাগিয়ে গোলবারের জটলা থেকে বল জালে জড়িয়ে মিডিয়াকে ১-০ গোলের লিড পাইয়ে দেন সালাউদ্দিন।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শেষ ১০ মিনিটের খেলায় মাঠে নামে মিডিয়া। অতিরিক্ত সময়ের ১১, ১৩ আর ১৫ মিনিটে আবারো সালাউদ্দিন-অপু দুর্দান্ত কিছু আক্রমণ দেখা যায়। প্রতিটি জোরালো শটই গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে গেলে লিড যা ছিল তাই থাকে। শেষ মিনিটের খেলায় ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির দলপতি ইমরুলের গোলে সমতায় ফেরে ম্যাচটি (১-১)। কামুর অ্যাসিস্ট থেকে গোলবারের জটলায় মিডিয়ার জালে বল ঠেলে দেন ইমরুল।
এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তাতে প্রথম পাঁচটি শটের প্রতিটি জালে জড়ায় দুই দলের ফুটবলাররা। ষষ্ঠ শটটি নেওয়ার জন্য ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির বিদ্যুত এগিয়ে আসেন। তার শটটি গোলবারে লেগে ফিরে আসে। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার হয়ে ষষ্ঠ শটটি নিতে আসেন শামীম হাসান। তার মাপা শটটি জালে জড়ালে ফুটসালের নিয়মে টাইব্রেকারের ইতি ঘটে (৬-৫)। দারুণ জমে ওঠা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া। ফলে, ফাইনালের টিকিটও নিশ্চিত করে দলটি।
প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয় বসুন্ধরা ক্রীড়া উৎসব। এবারের টুর্নামেন্টের মোট প্রাইজমানি ৫০ লাখ টাকা, যা কোনো প্রতিষ্ঠানের আন্তক্রীড়ায় অনন্য নজির। বসুন্ধরা গ্রুপে কর্মরত সহকর্মীরা মেতে উঠেছেন ফুটবল, ফুটসাল, দাবা, ব্যাডমিন্টন আর টেবিল টেনিসের বন্ধুত্বমূলক প্রতিযোগিতায়। ৫০ লাখ টাকা প্রাইজমানির এই ক্রীড়া উৎসবে অংশ নিয়েছেন ১০০০ জন। বসুন্ধরা গ্রুপের কয়েক হাজার দর্শক উপভোগ করছেন এই আসরটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭
এমআরপি