নেপালের বাসিন্দা ডা. সন্তোষ মহাজনেরে এত ‘নিখুঁত' বাংলা বলা দেখে বিস্ময় জাগতে পারে যে কোন বাঙালির।
তবে সন্তোষের চোখে-মুখে অদ্ভূত নিরুত্তাপ।
সন্তোষসহ একরাশ নেপালী এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এসেছিলেন দেশীয় ফুটবল ক্লাব মানাং মারিসিয়াংদিকে সমর্থন দিতে। সংখ্যায় ওরা ৩৫ এর মতো হবে। প্রেসিডেন্ট বক্সের সামনের ভিআইপি গ্যালারিতে নিবিষ্ট চিত্রে মাঠের দিকে চোখ সবার। নেপালী দলটি আক্রমণে গেলেই প্রায় কান ফাটানো উচ্ছ্বাস, হই-হুল্লোড়। তাদের কেউ পড়েন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএসটিসি) আবার কেউবা পড়েন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বাড়ি নেপালে হলেও উচ্চতর পড়াশোনা এই বাংলাদেশেই। বছর ছাব্বিশের তরুণ সন্তোষের চট্টগ্রাম শহরেই কেটে গেছে জীবনের ছয়টি বছর। তাই কিছুটা আঁচ করা গেল-তার বাংলাপ্রীতির কথা।
তবুও বাংলা কিভাবে রপ্ত করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ইউএসটিসির এমবিবিএস’র ছাত্র সন্তোষ শোনালেন ‘আমি ছয় বছর ধরে বাংলাদেশে আছি। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ থেকে ডিনারের টেবিল-বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গেই তো থাকা হয়। তাদের মুখে শুনতে শুনতে রপ্ত করে ফেলেছি এই ভাষা। দারুণ লাগে এই ভাষায় ভাব প্রকাশ করতে। ’
‘তবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাটা শিখতে পারিনি এখনও, একটু কঠিন লাগে’-না পারার অক্ষমতায় কথা বলার সুরে যেন আক্ষেপ সন্তোষের।
সন্তোষের সঙ্গে কথা বলা শেষ হল মাত্র। একটু অদূরে বসা ডা.কবিতা পাওডেল মুখ খুললেন। এবং সরাসরি বাংলাতেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি শেষে বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত এই তরুণী বললেন, ‘আমি বাংলাদেশে আছি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল। শুনতে শুনতে বাংলা ভাষাটা আমার শেখা। ’
হারুক জিতুক-মারসিয়াংদির সঙ্গে আছেন এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘হারুক বা জিতুক আমরা আমাদের দেশীয় ক্লাবের সঙ্গে আছি। আশা করছি আমাদের ক্লাবটি ফাইনালে যেতে পারবো। ’
কবিতা বিস্তর পড়াশোনা করে এসেছেন এই টুর্নামেন্টের নামকরণ হয়েছে যার নামে সেই বঙ্গবন্ধু-পুত্র ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল সম্পর্কেও।
‘শেখ কামাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই আর এদেশের জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ’-বলে গেলেন কবিতা।
শুধু সন্তোষ কিংবা কবিতা নন, কথা হলো একই দেশের শ্রীরাম পান্তে, হিমেল পান্তি, জন শ্রেষ্ঠ, মুসলিন সহ আরও অনেকের সঙ্গেই। তারা সবাই বাংলা ভাষাতেই তাদের প্রতিক্রিয়া দিলেন। বলে গেলেন, মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের বন্ধুদের নিয়ে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার কথাও। তাদের হতাশা মাঠে দর্শক কম দেখাতে।
তবে নেপালীরা নন, নিজ দেশের ক্লাব শাহীন আসমায়ীর খেলা উপভোগ করতে মাঠে এসেছিলেন জনা ত্রিশেক আফগানও।
তাদেরই একজন, এশিয়ান ইউনির্ভাসিটির অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী হুমায়রার সঙ্গে কথা হলো। তবে তিনি বাংলা ভাল বলতে পারেন না।
ইংরেজিতে বললেন, ‘আমাদের দেশের ক্লাবকে সমর্থন দিতে মাঠে আসা। দেশের একটি ক্লাব আমার বর্তমান শহরে খেলতে এসছে-এটা আমাদের জন্য আবেগের। ’
হুমায়রাকে বিদায় দিয়ে ফিরবো-এমন সময় হেসে হেসে বলে উঠলেন ‘ধন্যবাদ’।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই মাসে-নেপাল-আফগানদের মুখে বাংলাপ্রীতি-এ যেন বাংলাদেশিদের জন্য বাড়তি পাওনা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
টিএইচ/টিসি