তারই প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসেবে ফুটবল উন্নয়নে মেয়েদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এনেছে বাফুফে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যাবে নারী ফুটবলাররা।
একইসঙ্গে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার বাতিল করে ‘ইংলিশ’ খাবারে অভ্যস্থ করা হচ্ছে কৃষ্ণাদের। ভাত খাওয়া অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে কৃষ্ণা-সানজিদা-আনুচিংরা।
মেয়েদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের এই চিন্তাটা আসে প্রথমত পল স্মলির কাছ থেকে। বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টরের দায়িত্বে আছেন তিনি। ফুটবলের উন্নয়নের জন্যই এই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের চিন্তা এসেছে বলে জানান তিনি।
পল স্মলি বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলার নিয়ে বিশেষ ডেভলপমেন্ট চিন্তা রয়েছে। মেয়েরা যখন অনুশীলন করে, ম্যাচ খেলে তারা দমে যায়। তাদের রিকোভারি হচ্ছে কিনা এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হয় তাদের খেলার যোগ্যতা বাড়ছে কিনা, অনুশীলনে বেশি সময় দিচ্ছে কিনা সেগুলোও নিশ্চিত করতে হবে। ’
‘অনুশীলন বা খেলায় ইনজুরিতে পড়লে তাদের পুনর্বাসন সঠিকভাবে করা হচ্ছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে হয়। প্রতিদিন পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হয়। অনুশীলনে যে চাপের মধ্যে থাকে এবং শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম বের হয় সেটার রিকোভারি করার চিন্তা করতে হয়। নিউট্রিশন নিশ্চিত করতে হয়। ’ তিনি যোগ করেন।
দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো কী সেই প্রোটিন বা নিউট্রিশন দিতে পারছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্মলি জানান,‘ফুটবলাররা কি খাবার খেলে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও নিউট্রিশন শরীরে যোগ হবে সেটাও চিন্তা করতে হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো খেলোয়াড়দের ঐ প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন ও প্রোটিন দিতে পারছে না। ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের পেশি ইনজুরির রিকোভারিও এই দেশি খাবার দিয়ে হচ্ছে না। তাই এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছি। ’
সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ভাতের বদলে বেশি করে শাকসবজি, ফলমুল, আঁশ জাতীয় খাবার, সবজি ও ভিটামিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ম্যালনিস, আপেল, কলা সরবরাহ করা হচ্ছে উচ্চ নিউট্রিশন নিশ্চিত করতে। আলু দেয়া হচ্ছে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যোগান দিতে। তাতে শরীরের পেশিগুলো মজবুত হয় বলে জানান স্মলি।
স্মলি আরও বলেন, ‘কোনো দেশই শুধু তাদের দেশীয় খাবার দিয়ে খেলোয়াড়দের নিউট্রিশন ও প্রোটিন নিশ্চিত করতে পারে না। নারী ফুটবলাররা দিনের তিনটি সেশনে অনুশীলন করে। তাই তাদের শরীরের উপর দিয়ে অনেক ঝক্কি যায়। সবকিছুর রিকোভারি দিতে এই উন্নত খাবার দিতে হয় তাদের। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হয়। ইউরোপেও লিজেন্ড খেলোয়াড়রা তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সফল হয়েছে। ’
শুধু খাদ্যাভ্যাসই নয়, নারী ফুটবলারদের ঘুমের অভ্যাসেও পরিবর্তন এনেছেন পল স্মলি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ফুটবলারকে দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাবে, খুব সকালে উঠবে। কারণ ফুটবলাররা একইসঙ্গে খেলোয়াড় ও অ্যাথলেট। তাই তাদের ঘুমের অভ্যাসটাও নির্দিষ্ট হতে হবে। মেয়েরা রাত দশটায় ঘুমায়, ভোর ৬টায় অনুশীলনে ফেরে। ’
শুধু অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল নয়, পুরুষ ও নারী জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়েও একই পরিকল্পনা নিতে চান স্মলি। এতে বাফুফেকে আরও সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ১১ এপ্রিল ২০১৭
জেএইচ/এমআরপি