ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

‘বাবাকে কাঁদতে দেখে বলেছিলাম, আমি বিশ্বকাপ জিতবোই’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
‘বাবাকে কাঁদতে দেখে বলেছিলাম, আমি বিশ্বকাপ জিতবোই’ বিশ্বকাপ হাতে পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ তার দলই জিতেছিলো)

অবিশ্বাস্য সব কীর্তির জন্য ফুটবলের ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ বা ‘কালো মানিক’ বলা হয় তাকে। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনটি ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা জয় এবং হাজারেরও বেশি গোল তার কীর্তির নমুনামাত্র।

এমন নানান বিবেচনায় বিশ্ব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হয়ে ওঠা ব্রাজিলের পেলে অনুপ্রাণিত ছিলেন কার উৎসাহে? কে তার মহারথি হয়ে ওঠার ‘রসদ’? পেলে নিজেই বলেছেন সেসব গল্প। আগামী বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি’র সঙ্গে কথা হচ্ছিলো তার।

পেলে স্মরণ করেন, তার অর্জনকে ইতিহাসের সোনার ফ্রেমে বেঁধে রাখার যে সুযোগ তিনি পেয়েছেন, এর পেছনে মূল প্রেরণায় ছিলেন বাবা।  

ব্রাজিলিয়ান গ্রেট বর্ণনা করেন, ‘বাবা আমাদের শহর বাউরুর একজন পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। তখন আমি ১০ বছরের বালক। (১৯৫০) ব্রাজিলে বিশ্বকাপের আয়োজন হয়। বাবাকে তখন বললাম, দেখো, ব্রাজিলই বিশ্বকাপ জিতবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা (মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে) হেরে গেলাম’। বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলের পর পেলেকে কোলে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাসপেলের মনে আছে, ওই পরাজয়ের পর তার বাবা ভীষণ কেঁদেছিলেন, ‘জীবনে প্রথমবারের মতো দেখলাম, বাবা কাঁদছেন। এলাকার বন্ধু ও সহ-খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে বাবা রেডিওতে শুনছিলেন ফাইনালের ধারাভাষ্য, তখন আমাদের টেলিভিশন ছিলো না। আমি বুঝতে পারছিলাম না, বাবা কেন এমন কাঁদছিলেন। ’

বাবাকে অঙ্গীকার দেওয়ার কথাও মনে আছে পেলের, ‘তখন তাকে কেবলই বলছিলাম, পুরুষেরা কাঁদে না বাবা। বাবার গলা জড়িয়ে আমি বলেছিলাম, কেঁদো না, তোমার জন্যই আমি বিশ্বকাপ জিতবো, তবু কেঁদো না বাবা। ’

তারপর কেবল ইতিহাস। মাত্র আট বছরের মাথায় পেলের বাবা পুত্রের সেই অঙ্গীকারের প্রতিফলন পান। পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে সুইডেনে (১৯৫৮) অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিতে নেয় ১৮ বছর বয়সী পেলের ব্রাজিল। কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলা সেই বাবার পুত্র ফাইনালেই গড়েন হ্যাটট্রিকের কীর্তি।

স্মৃতিতে কাতর পেলে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘যখন আমরা বিশ্বকাপ জিতে গেলাম, বাইরে বেরিয়ে ছুটে গেলাম বাবার কাছে। বললাম, দেখেছো বাবা, আমরা বিশ্বকাপ জিতে গেছি। ’

কেবল সেই ১৯৫৮ নয়, পেলে এরপর তার বাবা, তার প্রিয়জন এবং তার দেশকে উপহার দেন আরও দু’টি বিশ্বকাপ। ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের আয়োজনে।

তার পায়ের জাদুতে ব্রাজিল উঠে যায় ফুটবল নান্দনিকতার শীর্ষে। পেলে নিজেই দেশের হয়ে করেন ৯২ খেলায় ৭২ গোল। সব মিলিয়ে হাজারেরও বেশি গোল। ৭৭ বছর বয়সী পেলে সেই সোনালী অতীত ঘাঁটলে কেবলই আনন্দের অশ্রু মোছেন।

ফুটবলের মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো পেলেকে আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপে তার দেশের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এই কিংবদন্তি তার উত্তরসূরী নেইমার-কুতিনহো-জেসুসদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘আমার মনে হয়, রাশিয়া বিশ্বকাপ ব্রাজিলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেন বিশ্বকাপ দেখতে পারি, সেজন্য সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আর যদি সৃষ্টিকর্তা চান, তাহলে আমার মনে হয়, ব্রাজিল অন্তত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।