পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামে ফিরেছে তারা। দল পরিচালনার মতোই মারিয়ার নেতৃত্বে বাড়ি ফিরেছে শিউলি আর সাজেদাও।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রাইভেটকারে করে উৎসব আনন্দের বার্তা নিয়েই মায়ের কোলে ফিরে এসেছে এই ৩ ফুটবল কন্যা।
এতো বড় একটি আসরে ব্যস্ততায় দম ফেলতে না পারা এবং দীর্ঘ পথ ভ্রমণের ক্লান্তি কিছুই যেন পেরে উঠছে না মারিয়ার সঙ্গে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথার সময়ও বড়দিনের উৎসবে মেতে থেকে পুরো রাত ঘুমহীন কাটানো এ পরিণত ফুটবলারকে বেশ ফুরফুরাই মনে হয়েছে।
আনন্দের আতিশয্যে মারিয়া বলছিলেন, ‘প্রাইভেটকার চেপে রওনা হবার পর কয়েক দফা মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাতে যখন গাড়ি থেকে নামলাম তখন মায়ের কী যে আনন্দ! আমাকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়েছে মা। ’
শৈশবে বাবা ধীরেন্দ্র মারাকের আদর জুটেনি মারিয়ার। জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন সেই শিশু বয়স থেকেই। দারিদ্র্যের শেকলবন্দি পরিবারের উপার্জনক্ষম বলতে কেবল মা এনাতো মান্দা। সংসারের হাল চালাতে অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেন তিনি।
২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে খুলে যায় মারিয়ার ভাগ্য। এরপর দাপটের সঙ্গেই খেলেছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ ও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মূল পর্বে। ওই সময় দলের ডেপুটি কাপ্তান ছিলেন এ খুদে ফুটবলার।
ক’দিন আগেই দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপেও অধিনায়কত্বের ঝাণ্ডা উড়ানো এ কৃতি মিডফিল্ডার।
নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে চান মারিয়া মান্দা। সেই কথাই যেন বলছিলেন বাংলানিউজকে।
‘আমি বড় ফুটবলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি। আমাকে নিয়ে আমার মা থেকে শুরু করে এলাকার মানুষ এবং দেশবাসীও অনেক আশাবাদী। দেশের জন্য এমন গৌরব ভবিষ্যতেও বয়ে আনার পাশাপাশি নারী ফুটবলেও নিজের অবস্থান পোক্ত করতে চাই,’ বলছিলেন মারিয়া।
সাফল্যই যেন মারিয়ার কাছে শেষ কথা। নিজেই উচ্চারণ করেন, ‘টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকে শেষ ম্যাচ অবধি জয়ের টার্গেট নিয়েই খেলেছি। আমরা অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ’
‘আমরা প্রতিপক্ষের জালে ১৩ বার বল জড়িয়েছি। কিন্তু আমরা কোনো গোল হজম করিনি। এমন সাফল্য সব সময়ই ধরে রাখতে চাই,’ বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন তিনি।
মারিয়ার ভাষ্য, দেশের নারী ফুটবলারদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত কলসিন্দুর এলাকার ১১ জন ফুটবলার খেলছেন কিশোরী দলে। এর মধ্যে শিউলি ও সানজিদা বয়সভিত্তিক কারণে বাদ পড়েছেন। বাছাই পর্বে রূপা বাদ পড়েছেন।
বাদ বাকি ফুটবলাররা হলেন- মাহমুদা, মার্জিয়া, শামসুন্নাহার, মারিয়া মান্দা, সাজেদা, শামসুন্নাহার (২), নাজমা ও ছোট মেসি খ্যাত তহুরা।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) তাদের ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নিজ গ্রামে ফেরার কথা রয়েছে।
১০ দিনের ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন মারিয়া-সাজেদারা। এ সময়টুকু বাবা-মার সান্নিধ্যে থেকে আর গ্রামের মানুষের আবেগ-ভালাবাসায় সিক্ত হয়ে আবারও তারা ছুটবেন নতুন মিশনে। দেশের জন্য তারাই রচনা করবে অনন্য গৌরবগাঁথার।
বাংলাদেশ সময় ০৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমএএএম/এমএ