আগামী রোববার (০৬ মে) এল ক্লাসিকোয় মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। মেসিদের টানা জয়রথ রিয়ালের হাতেই থামবে কি না তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ফুটবলবিশ্ব।
‘লস ব্লাংকোস’ নামে পরিচিত রিয়াল গত দশ বছরে লা লিগার শিরোপা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তবে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের সাফল্য ক্রমবর্ধমান। ১২ বারের ইউরোপ সেরারা গত চার মৌসুমে তিনবার চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে। ২৬ মে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জিতলে পাঁচে চার হবে তাদের। চারদিকে টাকার ঝনঝনানি সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখা চাট্টিখানি কথা নয়।
বিশেষ করে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় বার্সা ছাড়াও তাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী পিএসজি, ম্যানসিটি, চেলসির মতো ক্লাবগুলো, যারা ইউরোপ সেরা হতে মরিয়াভাবে টাকা ঢেলে যাচ্ছে। তথাপি ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে রিয়ালের ধারেকাছে ঘেষতে পারছে না কেউ। পিএসজির বিদায়ী কোচ উনাই এমেরি তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপাকে ‘রিয়ালের গার্লফ্রেন্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে হিসাবটা যদি লা লিগার ক্ষেত্রে হয়, সেখানে পিছিয়ে পড়েছেন রোনালদোরা। এবার নিয়ে গত দশ মৌসুমে নিজেদের সপ্তম শিরোপা জয় করেছেন মেসিরা। প্রশ্ন হচ্ছে, ইউরোপ সেরা হয়েও লা লিগায় কেন শিরোপা জিততে ব্যর্থ হচ্ছে রিয়ালের মতো ক্লাব? পেপ গার্দিওলার সর্বজয়ী দলটি আজ থেকে দশ মৌসুম আগে যখন প্রথম শিরোপা লড়াইয়ে নামে, তাদের থামানোর মতো কোনো ক্লাবই তখন ছিল না। টানা তিনবার লা লিগার শিরোপা জয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো গার্দিওলার শিষ্যরা।
তাদের জয়রথ থামাতে মঞ্চে হাজির হন হোসে মরিনহো। তার হাত ধরেই রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট অর্জন করে শিরোপা জয় করে রিয়াল। টিটো ভিলানোভার হাত ধরে পরের বার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে বার্সা। ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ছিনিয়ে নেয় লা লিগার শিরোপা। পরের দুই মৌসুমে আবার লুইস এনরিকের অধীনে টানা দুই শিরোপা ঘরে তলে বার্সা। ২০১৬-২০১৭ সালে জিদানের অধীনে শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল। চলতি মৌসুমে আবার বার্সার ঘরেই গেলো শিরোপা।
লা লিগার শিরোপা হাতছাড়া হওয়ায় বিব্রতকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রিয়াল কোচ জিদান ও ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে। ২০০৯ সাল থেকে পেরেজ কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢেলেছেন রিয়ালকে সেরা ক্লাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তার সেই অর্থ তাকে ইউরোপ সেরার মুকুট এনে দিয়েছে। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্য সহজে ধরা দিচ্ছে না।
কারণ হিসেবে বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, রিয়াল আর বার্সার খেলার ধরন। কাউন্টার অ্যাটাক হচ্ছে রিয়ালের খেলার ধরন, যা নকআউট প্রতিযোগিতায় ফল এনে দিচ্ছে। অন্যদিকে পাসিং ফুটবল খেলে ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্য পাচ্ছে বার্সা। তাছাড়া, বার্সার রয়েছে ডিভেন্স ফুঁড়ে গোলমুখ উন্মুক্ত করতে সক্ষম একজন খেলোয়াড়, যার নাম মেসি। বার্সার খেলার মূল সূত্র হচ্ছে, মেসির কাছে বল পাঠাও। কিছু একটা হবেই।
বিশ্লেষকদের মতে, রোনালদো মেসির তুলনায় ভিন্ন ফুটবলার। গোল পেতে বা গোলমুখে এগিয়ে যেতে সতীর্থদের সহযোগিতার উপর তিনি অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর মেসি শুধু গোল করতেই নয়, গোল বানিয়ে দিতেও ওস্তাদ। আরেকটা কারণ হচ্ছে, খেলার প্রতি মনোযোগ। লিগের ম্যাচগুলোতে রিয়ালের খেলোয়াড়দের গা বাঁচিয়ে খেলার অভিযোগ উঠে প্রায়ই। বিশেষ করে দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে রিয়ালের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের মাঠে কম দৌড়াতে দেখা যায় বলে অভিযোগ আছে। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার জন্য রিয়ালের প্রস্তুতি কিংবা ঘাম ঝড়ানোর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
ফুটবল বিশ্লেষকরা রিয়ালের এহেন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া লিগে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা, চ্যাম্পিয়নস লিগ তো আর প্রতিবারই হাতে ধরা দিবে না!
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৮
এমএইচএম/এমজেএফ