মাত্র তিন মৌসুম সেই রিয়ালেই কোচ হিসেবে আরও এক সোনালী প্রজন্ম উপহার দিয়ে আর টানা তিন ইউরোপ সেরার মুকুট মাথায় তুলে সোনালী সাফল্যের সুবাস তাজা থাকতেই বিদায়ও বলে দিলেন এই কিংবদন্তী।
৪৫ বছর বয়সী সাবেক ফরাসি অধিনায়ক জিনেদিন জিদান নিজের সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্বে ২০১৬ সালে রাফায়েল বেনিতেজের স্থলাভিষিক্ত হন।
এইতো পাঁচদিন আগেই কিয়েভের ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে টানা তৃতীয় ইউরোপ সেরার শিরোপা এনে দিয়েছেন রিয়ালকে। কিন্তু শিরোপা জয়ের উৎসব শেষ না হতেই বিদায় বলে দিলেন। বৃহস্পতিবার (৩১ মে) হঠাৎ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে পাশে বসিয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘আমি আগামী মৌসুমে রিয়ালের কোচ থাকছি না। '
‘আমি জানি সবার জন্য এটা বেশ অদ্ভুত সময়। কিন্তু আমি মনে করি এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। '
তারপর বললেন, ‘এই দলটিকে (রিয়াল) জেতা চালিয়ে যেতে হবে এবং তাদের একটা পরিবর্তন দরকার। তিন বছর পর তাদের নতুন কন্ঠ প্রয়োজন, নতুন কিছু বলার ধরণ- সম্ভবত কাজের ভিন্ন ধরণ। এইজন্যই আমি এই (বিদায়ের) সিদ্ধান্ত নিয়েছি। '
ক্লাবের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি এই ক্লাবটিকে ভালবাসি, আমি প্রেসিডেন্টকে ভালবাসি। তিনি (পেরেজ) আমাকে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে ক্লাবে আসার সুযোগ দিয়েছেন। আমি মন থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আজকে আমার জন্য এবং সবার জন্য পরিবর্তন দরকার। '
জিদান আরও বলেন, ‘এই ক্লাব আমার হৃদয়ের কাছের। আমি খুশি যে, খেলোয়াড় এবং কোচ দুই ভূমিকাতেই ভালভাবে শেষ করতে পেরেছি। '
রিয়ালের সভাপতি পেরেজ স্বীকার করেছেন, ক্লাবের ১৩তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের পর জিদানের বিদায়ের ঘোষণা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। সংবাদ সম্মেলনে পেরেজ বলেন, ‘এটা আমার এবং ক্লাবের সকল খেলোয়াড় ও ভক্তদের জন্য দুঃখের দিন। আমি তাকে সারাজীবনের জন্য আমার পাশে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানি এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। '
অথচ, গত জানুয়ারিতে ২০২০ পর্যন্ত রিয়ালেই থাকার জন্য নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলেছিলেন জিদান নিজেই। তবে আজ বললেন, ‘এটা (চুক্তি) আর কোন মানে রাখে না। '
যদিও সেই চুক্তি স্বাক্ষরের এক মাস পরই একবার ইঙ্গিত দিয়ে জিদান বলেছিলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের কোচ হওয়া অত্যন্ত ক্লান্তিকর। যখন আমি মনে করবো যে আমার আর কিছু দেয়ার নেই, আমি চলে যাবো। '
জিদানের এই বিদায়ের পিছনে লা লিগায় টানা ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকে। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে ছিল রিয়াল। শীর্ষে থেকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বার্সার চেয়ে যা ১৭ পয়েন্ট কম। তবে জিদান দাবি করেছেন, কেউ তাকে যেতে বাধ্য করেনি। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে ফেরার রাস্তাও খোলা রেখেছেন জিদান, ‘অবশ্যই আমি ফিরতে পারি। আমি আমার হৃদয়ের কাছের ক্লাবটির কাছাকাছিই থাকবো। ‘
জিদানের বিদায়ে রিয়ালের মূল ভরসা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জোড়া গোল করে জয় নিশ্চিত করা গ্যারেথ বেলের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেলো।
খেলোয়াড়দের কারণে ক্লাব ছাড়ছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বড় খেলোয়াড়দের পরিবর্তন দরকার। ‘ রোনালদোর কারণে যাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তার সাফ জবাব ‘না।
জিদানের বিদায়ের পর তার স্থলে কে আসবেন তা নিয়েও চলছে জল্পনা। তবে চেলসি কোচ আন্তোনিও কন্তের সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৮৩৫ ঘন্টা, মে ৩১, ২০১৮
এমএইচএম