প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে আসে দেশটি। একইভাবে তাজিকিস্তানও এই টুর্নামেন্টে নতুন।
২ অক্টোবর প্রথম ম্যাচে দারুণ সূচনা ছিল তাজিকিস্তানের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে গত আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল তারা।
সেই ফেবারিট তাজিকরা নিজেদের দ্বিতীয় খেলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিনের ফুটবল শৈলীতে ধরাশায়ী হয়ে মাঠ ছাড়ে।
বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) গ্রুপ পর্বের ৪র্থ দিনের খেলায় ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হয় তাজিকিস্তান। রেফারির শেষ বাঁশি বেজেওঠার পর ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরে মাঠ ছাড়ে তাজিকিস্তান।
খেলা শুরুর মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মাথায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল হজম করে বসে তাজিকরা। সেখান থেকেই বিধ্বস্থ হওয়া শুরু।
তাছাড়া শেষ বেলায় তাজিক দল তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কলন্দরভ বখতিয়ারকে খেলার মাঠ থেকে উঠিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে । যে কারণে দলের হার এবং সতীর্থ খেলোয়াড় আহতের ঘটনায় বিধ্বস্থ তাজিক দল।
ম্যাচের তখন ৭৪ মিনিট। শাদি শাবানের কর্ণার কিক থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে তাজিকিস্তানের জাল কাঁপালেন আব্দুল লতিফ আলবাহাদারি। হাসতে হাসতে সাইড বেঞ্চে বসে থাকা কারো উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলছিলেন ফিলিস্তিনের কোচ। কী বলছিলেন, শোনা যায়নি।
তবে অনুমান করে নেয়া যায়, তার বলা কথা হয়তো এরকম কিছুই ছিল, ‘আমরা ম্যাচটা জিতে যাচ্ছি!’
ম্যাচের তখন যে অবস্থা, তাতে ফিলিস্তিন কোচ হাসতে হাসতে জয়ের কথা বলতেই পারেন। ৭৪ মিনিটে দলনায়ক আব্দুল লতিফের ওই গোলের আগে যে জোনাথন জোরিলা আরেকটি গোল করে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তাও ম্যাচ শুরুর মাত্র ৩৩ সেকেন্ডে! এই দু’জনের গোলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তাজিকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপে জয়যাত্রার সূচনা করেছে কাগজে-কলমে এবারের আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ফিলিস্তিন।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শততম অবস্থান ফিলিস্তিনের। তাদের চেয়ে ২০ ধাপ নীচে অর্থাৎ ১২০ তম অবস্থানে তাজিকিস্তান। র্যাঙ্কিংয়ে এই ব্যবধানের প্রমাণ মাঠেই দিয়ে বুঝিয়ে দিল ফিলিস্তিন এবার টুর্নামেন্টে আমরাই সেরা!
আর এই শ্রেষ্টত্বের প্রমাণ দিতে মাত্র ৩৩ সেকেন্ডই প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে তারা। শুরুতেই প্লেসিং শটে গোলকরে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে দেনন জোনাথন জোরিলা।
ডি-বক্সের প্রান্ত বাঁ দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন ফিলিস্তিনের উদয় দাবাঘ। এরপর তাজিকিস্তানের ডিফেন্স চিরে বল দেনজোনাথন জোরিলাকে। প্লেসিং শটে গোল করতে ভুল হয়নি তার।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টের এই পঞ্চম আসরে এখনো পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে দ্রুতগতির গোল এটি।
ফিলিস্তিন ও তাজিকিস্তান আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে কেঁপেছে উভয় দলের ডিফেন্স। ফিলিস্তিন যেখানে সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই গোল আদায় করে নেয়, বিপরীতে দুর্বল ফিনিশিংয়ে ধরাশায়ী হয় তাজিকিস্তান শিবির।
ম্যাচের প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে তাজিকিস্তানের জোরাবয়েভ আমিরদেক বক্সের ডান প্রান্ত থেকে শট নিয়েছিলেন। তবে লক্ষ্যেথাকেনি বল। ৪৭ মিনিটে ফিলিস্তিন গোলরক্ষকের পা আটকে দেয় তাজিকিস্তানকে। বক্সে ইরাগাশেভ জাহঙ্গীরের হেড গোলরক্ষকেরপায়ে লেগে ফিরে আসে।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোনাথন জোরিলার জোরালো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেনতাজিক গোলরক্ষক রিজোয়েভ রুস্তম। পরের মিনিটে বক্সে দৌড়ের মধ্যে বল পেয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও টোকা দিতে পারেননি তাজিকিস্তানের ইরগাশেভ জাহঙ্গীর।
পিছিয়ে পড়া তাজিকিস্তান আক্রমণের ধার বাড়াতে মিডফিল্ডার আব্দুগফফ্রভকে তুলে মাঠে নামায় ফরোয়ার্ড তুরসানভ কমরনকে। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে মোহাম্মদ রহিমভের বাড়ানো বলে পোস্টের সামনে এক সারিতে থাকা ইরগাশেভ, জোরাবয়েভ ওফাতখুল্লয়েভ ফাতখুল্ল মাথা বা পা ছোঁয়াতে পারেননি।
৭২ মিনিটে গোলরক্ষক রমি হামাদার উঁচু শটে মাথা ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন বদলি হিসেবে নামা খালেদ সালেম। বল পেয়ে বক্সে তাজিকগোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন উদয় দাবাঘ। কিন্তু পোস্টে বল রাখতে পারেননি তিনি। ৮১ মিনিটে আব্দুল্লাহের বাড়ানো শটেগোলরক্ষককে একা পেয়েও পা লাগাতে পারেননি খালেদ সালেম।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, ০৪ অক্টোবর, ২০১৮
এমএমএস