শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকলেও মাঠে গর্জে ওঠেছিল বাংলাদেশ দল। খেলার প্রতিটি ধাপে ধাপে আক্রমণ শানিত করেও বিফল হয় তারা।
ম্যাচের শুরু থেকেই কয়েকবার প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের কাছাকাছি বল নিয়ে গেলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলবঞ্চিত হন তপুরা। এছাড়া ফিলিপাইনের গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের অনেক চেষ্টা নিষ্ফল হয়। আর এই অসাধারণ ক্রীড়া নৈপূণের জন্য খেলা শেষে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন ফিলিপ গোলরক্ষক কাসাস লুই মিচেল।
গত খেলায় দলে থাকা ৪ জন খেলোয়াড়ের পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম মামুন ইনজুরির কারণে ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব বর্তায় তপু বর্মণের ওপর। লাওসের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম একাদশে থাকা ডিফেন্ডার ওয়ালি ফয়সাল, মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়া, ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ, ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল আজ বাদ পড়েন। তাদের বদলে একাদশে ঢুকেন মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ, ফরোয়ার্ড তৌহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা ও ডিফেন্ডার রহমত মিয়া।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ শাণাতে থাকে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিং বিবেচনায় ফিলিপাইনের কাছে যেখানে হাঁসফাঁস করার কথা, সেখানে ফিলিপাইন ডিফেন্সকেই কাঁপিয়ে দেন তৌহিদুল ইসলাম সবুজ, রবিউল হাসানরা। খেলার ৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। থ্রো থেকে উড়ে আসা বলে বক্সে থাকা তপু বর্মণের হেড ফিস্ট করেন ফিলিপাইন গোলরক্ষক মাইকেল ক্যাসাস। জটলার মধ্যে এ পা-ও পা ছুঁয়ে বল শেষ পর্যন্ত ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার। মিনিট তিনেক পরে ডান প্রান্ত দিয়ে রবিউল হাসানের জোরালো শট সরাসরি যায় গোল রক্ষকের হাতে।
ম্যাচের তখন ২৪ মিনিটে বাংলাদেশের আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত ফিলিপাইন পাল্টা আক্রমণে ওঠেই আকস্মিক গোল পেয়ে যায়। ফিলিপাইন অধিনায়ক বাহাদরান মিসাগের পাস থেকে বাংলাদেশের ডিফেন্স আর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বাঁ পোস্ট ঘেষে বল জালে পাঠান মাইকেল ডেনিয়েলস।
দ্বিতীয়ার্ধে, ম্যাচের ৬৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে সবুজের দারুণ ক্রসে নাবীব নেওয়াজ জীবন মাথা ছোঁয়াতে পারলেও মারেন বাইরে। ৮০ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফের আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। বদলি হিসেবে নামা ইব্রাহিমের ক্রস ফিলিপাইনের এক ডিফেন্ডার মাথা ছুঁইয়ে বাইরে পাঠান। পরের মিনিটে ফের বাঁ প্রান্ত দিয়ে জীবনের কাছ থেকে বক্সে ক্রস পান বদলি হিসেবে নামা সিলেটের ছেলে মতিন মিয়া। দারুণ ক্রসও করেছিলেন তিনি, কিন্তু জায়গামতো বাংলাদেশের কেউ ছিল না।
ম্যাচের একেবারে শেষদিকে আক্রমণের রাতে ফিলিপাইনের ডিফেন্স নামক বাঁধকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন রবিউল হাসান, রহমতরা। কিন্তু সর্বশক্তি দিয়ে সেই বাঁধকে রক্ষা করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফিলিপাইনরা।
শুক্রবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে সিলেট জেলা স্টেডিয়াম ছিল গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। প্রথমার্ধের খেলা শেষে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। গ্যালারি ভরা দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ করবে এবং এগিয়ে যাবে। কিন্তু এর কোনোটাই হলো না। খেলা শেষে গ্যালারি ভর্তি দর্শদের নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। অবশ্য ম্যাচ শেষে দর্শকদের শর্তহীন ভালোবাসাকে পুরো মাঠ ঘুরে হাত তালি দিয়ে অভিনন্দিত করে বাংলাদেশ দল।
এই জয়ে বঙ্গবন্ধু কাপের ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে ফিলিপাইন। শনিবার ফিলিস্তিন-নেপাল ম্যাচে যারা জয়ী হবে, তাদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। শক্তির বিচারে ফিলিস্তিনেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে সেমির লড়াইয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ১০০তম স্থানে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে লড়াইটা বাংলাদেশের জন্য মোটেও সহজ হবে না।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে বলেন, আমাদের ছেলেরা ভাল খেলেছে। আক্রমন করেছিল বেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা হেরে গেছি। তাছাড়া মামুনুলের ইনজুরির কারণে তাকে খেলানো হয়নি। ফলে অধিনায়কের দায়িত্ব পড়ে তপুর ওপর। অবশ্য কোচের লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। তাই সেমিতে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও ভাল খেলার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফিলিপাইনের গোলরক্ষক কাসাস বলেন, দল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। তবে ম্যাচ জেতার জন্য আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা বিজয়ী হয়েছি। নিজের অর্জনকে বড় করে না দেখে বলেন, নি:সন্দেহে সবার ঐকান্তিক চেষ্টার কারণে আমরা বিজয়ী হতে পেরেছি।
২০১১ সালে মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপে সর্বশেষ দেখায়ও বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ফিলিপাইন। তবে সেদিন ব্যবধান ছিল বড়, ৩-০। এরও আগে, ১৯৯১ সালে অলিম্পিকের প্রাকবাছাইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল ফিলিপাইন অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। আর ১৯৮৪ সালে এশিয়ান ন্যাশনস কাপ বাছাইয়ে ফিলিপাইনকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘন্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
এনইউ/এমএইচএম